আগামী সাত দিনের মধ্যে চাকরি স্থায়ী করা না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ। চাকরি স্থায়ী করেত পাঁচ দফা দাবিও জানান তারা।

শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে গ্রামীণ ব্যাংক চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গ্রামীণ ব্যাংক চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী পরিষদের সভাপতি আলাউদ্দিন আল মামুন। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে দৈনিক ভিত্তিক মজুরিতে কাজ করে আসছি। আমাদের ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মতো কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না।  কারণ আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়নি। আমরা দেশের নাগরিক হিসেবে অধিকার পেতে চাই।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী ড.

মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক। এ ব্যাংকে আমরা দৈনিক ভিত্তিক কাজের লোক হিসাবে নিয়োজিত। ১৯৯২ সাল থেকে গ্রামীণ ব্যাংকে নির্যাতিত ও বৈষম্যের শিকার। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে আমাদেরকে অস্থায়ীভাবে কাজ করানো হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতো নেই কোনো সুযোগ সুবিধা। সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি, চাকরি স্থায়ী করে মানবেতর জীবনযাপন থেকে আমাদেরকে বাঁচান। 

সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে দৈনিক ভিত্তিক মজুরিতে কাজ করা কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী করতে পাঁচটি দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে, অবিলম্বে দৈনিক ভিত্তিতে পিয়ন কাম গার্ড হিসাবে কর্মরত কর্মচারীদের নিয়োগের ৯ মাস পর থেকে সার্কুলার অনুযায়ী স্থায়ীকরণ এবং আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যাদেরকে নিয়োগ করা হয়েছে তাদেরও চাকরি স্থায়ীকরণ করতে হবে; নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র, সবেতনে সকল প্রাপ্ত বোনাসসহ দেশের শ্রম আইন ও আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী প্রাপ্ত অধিকার দিতে হবে; গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরিবিধি অনুযায়ী মাসিক বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, প্রভিডেন্ট ফান্ড,  পেনশন, গ্রাচুইটি, ঋণ সুবিধাসহ সামাজিক নিরাপত্তার যাবতীয় সুবিধা দিতে হবে; আন্দোলন ও সংগঠন দমনে শাস্তিমূলক ছাঁটাই, বদলী বন্ধ করতে হবে; আন্দোলনের কারণে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল করতে হবে; আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং চাকরি স্থায়ীকরণ করে নিয়োগের শুরু থেকে অদ্যাবধি সকল প্রাপ্য পরিশোধ করতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আলট ম ট ম স থ য় করণ স থ য় কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ