এনামুল হক বিজয় দিন শুরু করেছেন দুঃসংবাদ দিয়ে। সকালেই দেশের গণমাধ্যমে খবর বের হয়— বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিজয়ের দেশ ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের একজন কর্মকর্তা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন। গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্ট্যাটাসটি দৃশ্যমান ছিল। একজন পরিচালক জানান, বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের চাপে এসিইউ কর্মকর্তা স্ট্যাটাসটি মুছে ফেলেছেন। যদিও সাংবাদিকদের অনেকে স্ক্রিনশট রেখে দিয়েছেন।
বিসিবির ওই কর্মকর্তা লিখেছেন, 'আমি অনুরোধ করব, সন্দেহভাজন তালিকায় যাদের নাম এসেছে, তদন্তের মুখোমুখি না হয়ে তারা যেন দেশ ছাড়তে না পারে।'
বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মিডিয়াকে সন্দেহভাজন ক্রিকেটারদের নামের তালিকা সরবরাহ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সন্দেহভাজনের নামের তালিকা ধরে নিউজ করা স্ট্যাটাসে ধন্যবাদও দিয়েছেন তিনি।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার খবর দেখার পর বিস্ময় প্রকাশ করেন বিজয়। বিসিবির একাধিক পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। ফারুক আহমেদ জরুরি সভা করে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
বিসিবি সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছে, 'এনামুল হক বিজয়ের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে কিছু মিডিয়া রিপোর্ট আমাদের নজরে এসেছে। বিসিবি এ রকম কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি এবং কোনো দায়িত্বশীল জায়গা বা সংস্থা থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে নোটিশও পাইনি।'
বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে চলমান বিপিএলের বেশ কয়েকটি ম্যাচ ও ক্রিকেটারদের বোলিং-ব্যাটিং সন্দেহজনক মনে হয়েছে। বিশেষ করে লাগামহীন নো ও ওয়াইড বল করা বোলাররা সন্দেহের তালিকায়। দুর্বার রাজশাহী ছাড়াও আরও কয়েকটি দলের ক্রিকেটাররা সন্দেহের তালিকায়।
দুর্নীতি দমন বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘আমরা সন্দেহ থেকে বোর্ডের কাছে কিছু নাম জমা দিয়েছি। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কাছে একজনের ব্যাপারে তথ্য- প্রমাণও দেওয়া হয়েছে। এই ক্রিকেটারদের তদন্তের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে জড়িত অন্তত তিনজন দোষী প্রমাণ হতে পারেন।
বিসিবি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দুর্নীতি দমন বিভাগ যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তাদের কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সাধারণত কোনো ক্রিকেটারের কার্যক্রম সন্দেহজনক মনে হলে গোপনে তদন্ত করার কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) দুর্নীতি দমন বিভাগের ধারা অনুযায়ী কেউ সন্দেহের জালে থাকলে গোপনে তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর ক্রিকেটারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। বিসিবির অনভিজ্ঞ দুর্নীতি দমন বিভাগ সে প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে মিডিয়ায় প্রকাশ করার কৌশল বেছে নেয়। এই কৌশলও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিসিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, “অনেক কিছুই ঘটছে, যেগুলো প্রমাণ করা যাবে না। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে এই ক্রিকেটারদের শাস্তি হওয়াও উচিত। সামাজিকভাবে হেয় করা গেলেও অনৈতিক কর্মকাণ্ড করা থেকে অনেকে বিরত হবেন।'
বিসিবি থেকে জানা গেছে, সিলেট পর্বের খেলা চলাকালে দুর্বার রাজশাহীর অধিনায়ক এনামুল হক বিজয় ও ম্যানেজার মেহরাব হোসেন অপির সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছেন। তবে তা ফিক্সিং ইস্যুতে কিনা, জানা যায়নি।
বিসিবির এসিইউ এক কর্মকর্তা বলেন, 'বিপিএলের শুরুতে যে তথ্য-প্রমাণ আমরা দিয়েছি, সেগুলো আমলে নিলে বিজয় চট্টগ্রাম পর্বে ম্যাচ খেলতে পারবে না।'
এসিইউ কর্মকর্তাদের সন্দেহ করার ধরন এবং রিপোর্ট দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে ক্রিকেটারদের। এ ব্যাপারে ক্রিকেটারদের সংস্থা কোয়াবের কাছে সাহায্য চেয়েছেন দুই ক্রিকেটার।
জাতীয় দলের এক সাবেক ক্রিকেটার বলেন, ‘এসিইউতে যাদের নেওয়া হয়েছে, তারা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ নন। ওয়াইড বা নো মানেই ফিক্সিং না। বিসিবির উচিত ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট কাউকে ট্রেনিং দিয়ে দুর্নীতি দমন বিভাগে নিয়োগ দেওয়া। সেটা করা গেলে সঠিক চিত্র উঠে আসতে পারে।'
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব প এল দমন ব ভ গ র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
গত জুনে সংঘাতের সময় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে উপর্যুপরি আঘাত হানছিল। তা প্রতিরোধ করতে গিয়ে দেশটির ভান্ডারে থাকা টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্সে (থাড) টান পড়েছিল। সংঘর্ষ চলাকালে সৌদি আরবের হাতে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অন্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তাদের ছিল। তাই সংকটকালে ইসরায়েলকে কিছু আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রিয়াদ তাতে রাজি হয়নি।
অনুরোধের বিষয়টি জানেন, এমন দুজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুজনের একজন বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালে আমরা সবাইকে (মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে মার্কিন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল) তাদের সবাইকে (ইসরায়েলকে কিছু ধার দেওয়া) অনুরোধ করেছিলাম। যখন কাজ হলো না, তখন আমরা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। শুধু কোনো একটি দেশকে অনুরোধ করা হয়েছিল, তা কিন্তু নয়।’
কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলে আসছিলেন, ইরান শুধু ইসরায়েল নয়, সৌদি আরবের জন্যও হুমকি।
তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় এই দেশের হাতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আগেই নিজেদের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছিল। কিছুদিন আগেও এসব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছিল ইয়েমেনের হুতিরা।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যখন সংঘর্ষ চলছিল, ঠিক তখনই নিজেদের কেনা থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রথম ব্যাটারিটি গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সৌদি আরব। ব্যাটারিটি নিজেদের সার্বভৌম তহবিল দিয়েই কিনেছিল রিয়াদ। ঘটনা হলো, ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধবিরতির মাত্র ৯ দিন পর ৩ জুলাই সৌদি সেনাবাহিনী এই ব্যাটারি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে।
ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের একপর্যায়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ ছিল। কারণ, তখন ইসরায়েলের বিভিন্ন নিশানায় ব্যাপক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছিল ইরান।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় মিডল ইস্ট আই-ই প্রথম জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ইসরায়েলের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অ্যারো দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। পরে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও দ্য গার্ডিয়ান নিজেদের প্রতিবেদনে মিডল ইস্ট আইয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছিল।
চলতি মাসে এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে মাত্র ২৫ শতাংশ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অবশিষ্ট ছিল, যা পেন্টাগনের পরিকল্পনামাফিক বিশ্বব্যাপী দেশটির সামরিক অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় মজুতের তুলনায় অনেক কম।
এক মার্কিন কর্মকর্তা ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে কী পরিমাণ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল, সেই গোপন সংখ্যা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন।
ইরানের হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৩ (এসএম-৩) ছুড়েছিল। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল দেশটির রণতরি আরলি বার্ক ক্লাসের গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার থেকে।
ইসরায়েলের তিন স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তো ছিলই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শক্তি। তা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আগপর্যন্ত ইসরায়েলি শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিল ইরান।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যেভাবে বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, সেটার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে। তবে সংঘাত দীর্ঘ সময় ধরে চলায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দুর্বল দিকটি বুঝে গিয়েছিল ইরান। তাই তারা ইসরায়েলে বেশি পরিমাণে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পেরেছিল।
মিচেল ইনস্টিটিউট ফর অ্যারোস্পেস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ডগলাস বারকি বলেন, দুর্বলতাটা হলো, যুদ্ধের একটা পর্যায়ে আপনার প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। আমাদের হাতে যে পরিমাণ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে, সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে তৈরি করার সক্ষমতা সীমিত।
গত শুক্রবার দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ঘাটতির এই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা সৌদি আরবের কেনা থাড প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইসরায়েলে পাঠানোর বিষয়েও রিয়াদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সৌজন্য অনুরোধ ও চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরই সৌদি আরবের সঙ্গে এ বিষয়ে গভীর আলোচনা শুরু হয়েছিল।
উভয় মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে আরও বলেছেন, ইসরায়েলকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও অনুরোধ করেছিল। তবে দেশটির কাছ থেকে ইসরায়েল আদৌ কোনো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পেয়েছিল কি না, এই দুই কর্মকর্তার কেউ তা নিশ্চিত করতে রাজি হননি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আমিরাতই প্রথম দেশ, যারা প্রথম থাড কিনেছিল এবং ব্যবহার করেছিল। দেশটি থাড কিনেছিল ২০১৬ সালে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান যেভাবে ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে হামলা চালাতে পেরেছে, তা উপসাগরীয় অঞ্চলের তুলনামূলক কম সুরক্ষিত দেশগুলোকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।