সাবেক এমপি সাদেক খান ও স্ত্রী-ছেলের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
Published: 3rd, February 2025 GMT
ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, তার স্ত্রী ফেরদৌসী খান ও ছেলে ফাহিম সাদেক খানের ৫০টি অ্যাকাউন্টের ১৯ কোটি ৪১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে সাদেক খানের ১৮টি, তার স্ত্রীর ৮টি ও ছেলের ২৪টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
সোমবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাদেক খান ক্ষমতার অপব্যবহার, ভূমি দস্যুতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে ৭ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার ৬৬৪ টাকার অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া সংসদ সদস্য থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক অসদাচরণের মাধ্যমে তার নিজ ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ২৯টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ৪৬৬ কোটি ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ১৯০ দশমিক ৫০ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। মামলাটি তদন্তের স্বার্থে আসামি মো.
আবেদনে আরো বলা হয়েছে, অবৈধ উপায়ে ৬ কোটি ১২ লাখ ৮১ হাজার ১৫২ টাকা মূল্যের সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন। নিজ নামে ৭০টি ব্যাংক হিসাবে ২০ কোটি ৫২ লাখ ৩৫ হাজার ৪০৯ টাকা জমা ও ১৫ কোটি ৬২ লাখ ২ হাজার ৭২৮ টাকা টাকা উত্তোলনের অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, আসামি ফাহিম সাদেক খান ও আসামি মো. সাদেক খানের নামে অর্জিত অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর বা অন্য কোনো পন্থায় মালিকানা পরিবর্তন করে আত্মগোপনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মামলাটি তদন্তের স্বার্থে আসামি ফাহিম সাদেক খান ও আসামি মো. সাদেক খানের নামে অর্জিত অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।
সাদেক খানের স্ত্রীর সম্পদের অবরুদ্ধ আবেদনে বলা হয়েছে, ফেরদৌসী খান অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ স্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তার স্বামীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে ৫ কোটি ৯৮ লাখ ৩২ হাজার ৫২১ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করে নিজ দখলে রেখেছেন। নিজ নামে ১৫১টি ব্যাংক হিসাবে ৩৯ কোটি ৭৭ লাখ ৭০ হাজার ৩২৬ টাকা জমা ও ৩২ কোটি ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার ৭৮০ টাকা উত্তোলনসহ মোট ৭২ কোটি ৩২ লাখ ২৯ হাজার ১০৬ টাকা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে হস্তান্তর, স্থানান্তর করায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
তদন্তকালে আসামি ফেরদৌসী খানের নামে অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। মামলাটি তদন্তের স্বার্থে তদন্তকালে আসামি ফেরদৌসী খানের নামে অর্জিত অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আসাদুজ্জামান নূরের চারটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দের আদেশ
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর নামে থাকা ১৬টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, আসাদুজ্জামান নূরের অর্জিত সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তদন্তকালে তাঁর নামে পাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ যেন তিনি হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন, সে জন্য তা জব্দ ও অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুলাই মামলা করেছে দুদক। তাঁর নামে ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি রয়েছে। আরও রয়েছে তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া তাঁর নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকায়। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।
২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুনআট মাসে ১৯২ একর জমি, ২৮ ভবন ও ৩৮ ফ্ল্যাট জব্দ ১৭ মে ২০২৫