ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের শেষ সময়ে অর্থনীতির সব কটি সূচকই ছিল নড়বড়ে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে, পণ্য রপ্তানি সাময়িকভাবে হোঁচট খেলেও পরে ঘুরে দাঁড়ায়। অন্যদিকে আমদানিতে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। সেগুলো হচ্ছে চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাব।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই-নভেম্বরে চলতি হিসাবে যেখানে ঘাটতি ছিল ১৯ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে ডিসেম্বরের শেষে উদ্বৃত্ত হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ছিল ৫৬ কোটি ডলার। ডিসেম্বরের শেষে সেটি ১৩৮ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাব ইতিবাচক ধারায় ফেরার পাশাপাশি বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি কমে ৯৭৬ কোটি ডলারে নামে। এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, চলতি হিসাবের পাশাপাশি আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্ত হয়েছে। মূল্যস্ফীতিও কমে এসেছে। ফলে অর্থনীতির শুভযাত্রা শুরু হয়েছে। সামনে আরও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৬৬১ কোটি ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল আরও বেশি, যা পরিমাণে ১ হাজার ১৬৩ কোটি ডলার। তবে বর্তমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই-ডিসেম্বরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর এক মাস আগেও হিসাবটিতে ঘাটতি ছিল।

সাধারণভাবে চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪৫৪ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছর উদ্বৃত্ত ছিল ৬৮৯ কোটি ডলার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর আর্থিক হিসাব ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়। তবে অর্থবছরের প্রথমার্ধ শেষে আর্থিক হিসাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে উদ্বৃত্ত হয়েছে ১৩৮ কোটি ডলার।

দেশে আন্তর্জাতিক সম্পদের মালিকানা হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি পরিমাপ করা হয় আর্থিক হিসাবের মাধ্যমে। সাধারণত এই হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুত ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ডলার-সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় দেড় দশকের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো এ হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতিও কিছুটা কমেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এই সূচকে ঘাটতি ছিল ৩৮ কোটি ডলার, যা তার আগের মাসে ছিল ২৪৭ কোটি ডলার। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি ছিল ৩৪৫ কোটি ডলার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর থ ক হ স ব

এছাড়াও পড়ুন:

ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, বাজেট গতানুগতিক। দেশের ইন্টারনেট খাতের জন্য বিশেষ কিছু নেই। মাঝারি ও ছোট আইএসপিদের জন্য বাজেটে তেমন কোনো সুখবর নেই। আগে যা ছিল, এখনও তা-ই আছে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী যারা আছেন, তারা শতভাগ দেশি উদ্যোক্তা। তবে করপোরেট গ্রাহকের জন্য ইন্টারনেট সেবা দেয়, তারা 
কিছুটা সুবিচার পেতে পারেন।
কারণ, সব ধরনের করপোরেট প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) কেটে রেখে বিল পরিশোধ করে। এআইটি ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করায় স্বল্প সংখ্যক আইএসপি কিছুটা সুবিচার পেতে পারে। সরকার ইন্টারনেটের দাম কমাতে চায়। কিন্তু ভ্যাট, ট্যাক্সে হাত দেবে না; ইকুইপমেন্টের মধ্যেও হাত দেবে না। ফলে কোনো লাভ হবে না। ভ্যাট, ট্যাক্সে হাত না দিলে ইন্টারনেটের দাম কমবে না।
শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, আমি মনে করি, ভোক্তা পর্যায়ে স্মার্টফোন খাতে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। উৎপাদন পর্যায়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট নির্মাতার লাভের পরিমাণ কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে সেটিও খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক প্রায় ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে এবং ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে এত বেশি ব্যয় হয় না। ধারণা করছি, ব্যবসায়িক পর্যায়েও এর কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফর্ম (ওটিটি) পরিষেবায় আরোপ করা হয়েছে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক। এতে চরকি, নেটফ্লিক, বঙ্গ ছাড়াও কয়েকটি ওটিটিতে সিনেমা ও সিরিজ ছাড়াও ভালো মানের কনটেন্ট দেখতে দর্শকের ব্যয় বাড়বে। বর্তমানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়।
সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন, ওটিটি পরিষেবার ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দূরদৃষ্টিহীন সিদ্ধান্ত। দেশের উদীয়মান ডিজিটাল অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী শিল্পের বিকাশ ব্যাহত করবে। সিদ্ধান্তটি একদিকে যেমন দর্শকের ব্যয় বাড়াবে, অন্যদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বড় ধরনের বাধা হবে। সরকারের উচিত, দ্রুত সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা এবং ডিজিটাল অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন
  • খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • সংশোধিত সাইবার অধ্যাদেশও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • কমপ্লায়েন্সের অভাবে ধুঁকছে চামড়া খাতের রপ্তানি
  • কয়েক দশকের ছায়াযুদ্ধ থেকে এবার প্রকাশ্য সংঘাতে ইরান-ইসরায়েল
  • চুইঝাল চাষে সাফল্য পেয়ে প্রবাসফেরত শাহ আলম বললেন, ‘আর বিদেশে যাব না’
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ