বাড়তি শুল্ক, বেনাপোল দিয়ে দুদিন ধরে ফল আমদানি বন্ধ
Published: 5th, February 2025 GMT
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার থেকে ফল আমদানি বন্ধ আছে। ‘বিলাসী পণ্য’ বিবেচনায় আমদানি করা ফলের ওপর সম্পূরক শুল্ক অতিরিক্ত ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অতিরিক্ত এই শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত ফল আমদানি বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নূরউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুদিন ফল আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি করা হবে। এ সময়ের মধ্যে বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার না হলে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফল আমদানি বন্ধ থাকবে।’
বেনাপোল বন্দর ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে যেসব খাদ্য আমদানি হয়, তার মধ্যে বড় অংশ রয়েছে আপেল, আঙুর, কমলা ও মালটা। বর্ধিত শুল্ক–কর আরোপের আগে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আদায় করত কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতি কেজি ফলে সরকারকে রাজস্ব দিতে হতো ১০১ থেকে ১১৫ টাকা। হঠাৎ করেই গত ৯ জানুয়ারি এনবিআরের নতুন এক নির্দেশনায় ফল আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক আরও ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে কেজিতে শুল্ক–কর ১৫ থেকে ১৮ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৬ থেকে ১৩৮ টাকা। আমদানি খরচ বাড়ায় সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে খুচরা বাজারে।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নূরউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘বিলাসী পণ্য হিসেবে আমদানিকৃত ফলের ওপর এক বছরে তিন দফায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা সম্পূরক শুল্ক–কর বাড়িয়েছে এনবিআর। আপেল, আঙুর, কমলা হচ্ছে শিশুখাদ্য ও রোগীর পথ্য। এটা কীভাবে বিলাসী পণ্য হয়, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।’
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো.
বর্ধিক শুল্কের কারণে খুচরা বাজারে আপেল, কমলা ও আঙুর ফলের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে গেছে। এসব ফল আমদানি বন্ধ থাকলে আগামী রমজান মাসে বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
ফল কীভাবে বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচিত হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘এটা এনবিআরের পলিসিগত বিষয়। আমরা বাস্তবায়ন করি। এ বিষয়ে এনবিআর কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।’
বেনাপোল বন্দরের একজন কর্মকর্তা জানান, ফল ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ফল আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আয় কমেছে। ধর্মঘটে দুই দিন ফল আমদানি বন্ধে বেনাপোল বন্দর থেকে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।