দুই দিন ধরে বিদেশ থেকে ফল আমদানি বন্ধ রয়েছে। আমদানিকারকেরা খালাস না নেওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে ফলবোঝাই দুই শতাধিক কনটেইনার ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন স্থলবন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ৭৫ ট্রাক ফল আটকে রয়েছে। এর মধ্যে যশোরের বেনাপোলের বিপরীতে ভারতে পেট্রাপোল সীমান্তে আটকে আছে ফলবোঝাই ২৫টি ট্রাক।

ফল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন দুই দিন ধরে ফল আমদানি বন্ধ ঘোষণা করায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফল আমদানিতে বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এ কারণে গত মঙ্গলবার ও আজ বুধবার দেশে সব স্থল ও নৌবন্দরে দিয়ে ফল আমদানি বন্ধ ছিল।

গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। তাতে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে আমদানিকারকদের। তাই বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ফল আমদানিকারকেরা।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নূরউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক কনটেইনার ফল আমদানি হয়। শুল্কায়নসহ যার আমদানি মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮০ ট্রাক ফল আমদানি করা হয়। শুল্কায়নসহ যার মূল্য প্রায় শতকোটি টাকা। সেই হিসাবে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে দিনে গড়ে ১৮০ কোটি টাকার ফল আমদানি হয়। আমদানি বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকার ফল আমদানি ব্যাহত হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৬৫০ মেট্রিক টন আপেল, কমলা, আঙুর, মাল্টা ও আনার আমদানি হয়েছে। এই ফল আমদানি থেকে সরকার রাজস্ব আদায় করেছে সাত কোটি টাকা। গত দুই দিন ফল আমদানি বন্ধ থাকায় সরকারেরও রাজস্ব আদায় ব্যাহত হয়েছে।

বেনাপোল বন্দর ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে যেসব খাদ্য আমদানি হয়, তার বড় অংশ রয়েছে আপেল, আঙুর, কমলা, মাল্টা ও আনার। সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর আগে এসব ফল আমদানির ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আদায় করত কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতি কেজি ফলে সরকারকে রাজস্ব দিতে হতো ১০১ থেকে ১১৫ টাকা। গত ৯ জানুয়ারি সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়। তাতে প্রতি কেজি ফল আমদানিতে শুল্ককর ১৫ থেকে ১৮ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৬ থেকে ১৩৮ টাকা।

এদিকে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমদানি করা সব ধরনের ফলের দামও বেড়েছে খুচরা বাজারে। মানভেদে বিভিন্ন ধরনের ফলের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যশোর শহরের সোনাপট্টি এলাকার খুচরা ফল ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, আপেল, আঙুর, কমলা, আনারসহ আমদানি করা সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে। আর দাম বাড়ায় ফলের ক্রেতাও কমে গেছে। এতে বেচাবিক্রি একদমই কম।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নূরউদ্দীন আহমেদ বলেন, বিলাসী পণ্য হিসেবে আমদানি করা ফলের ওপর গত এক বছরে তিন দফায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে এনবিআর। আপেল-আঙুর-কমলা হচ্ছে শিশুখাদ্য ও রোগীর পথ্য। এটা কীভাবে বিলাসী পণ্য হয়, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।

বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো.

কামরুজ্জামান বলেন, বিলাসী পণ্যের কোনো তালিকা নেই। তবে যেসব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়, সাধারণত সেসব পণ্যকে বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনাপোল স্থলবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০ ট্রাক ফল আমদানি হয়।

পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল বন্দরে বিভিন্ন ধরনের ফলবোঝাই অন্তত ২৫টি ট্রাক আটকে আছে বলে নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান। তিনি জানান, বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার না হলে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফল আমদানি বন্ধ থাকবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট র ক ফল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ