হজরত কাব ইবনে ওজারার (রা.) বরাতে একটি হাদিস পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার ওপর আমরা কীভাবে দরুদ পড়ব?’ তিনি বললেন, বলো, ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ; আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ (সা.
নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরুদ শরিফ পড়তে হয়। শেষ বৈঠকে দরুদ শরিফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়া সুন্নত। কেউ যদি কোনো কারণে সুন্নত ছেড়ে দেয়—তাহলেও তার নামাজ হয়ে যাবে। সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় না। তবে সওয়াব কিছুটা কমে যায়।
তবে কেউ যদি ইচ্ছাকৃত জেনে-বুঝে সুন্নত ছেড়ে দেয় বা সুন্নত দেওয়াকে নিজের অভ্যাস বানিয়ে ফেলে, তাহলে সে গুনাহগার হবে। (রাদ্দুল মুহতার, খণ্ড ১, পৃ ৪৮৩)
আরও পড়ুনজামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব০৫ জানুয়ারি ২০২৫দরুদে ইবরাহিমের উচ্চারণ ও অর্থ
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ১,২৯১)
অর্থ: হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারের ওপর শান্তি বর্ষণ করো, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারের ওপর শান্তি বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দান করো, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দান করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত।
আরও পড়ুনসিজদার যত উপকারিতা১৩ জানুয়ারি ২০২৫দরুদ শরিফ না পড়ার পরিণতি
একবার জুমার দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বারের (ইমামের খুতবা দেওয়ার উঁচু স্থান ) প্রথম ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! তারপর তৃতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! এরপর খুতবা দিলেন ও নামাজ আদায় করলেন।
নামাজ শেষে সাহাবায়ে কিরাম প্রশ্ন করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আজ যা দেখলাম, তা ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি (আপনি একেক ধাপে পা রেখে আমিন, আমিন, আমিন বললেন); এটা কি কোনো নতুন নিয়ম?’ নবী করিম (সা.) বললেন, ‘না, এটা নতুন কোনো নিয়ম নয়; বরং আমি মিম্বারে ওঠার সময় হজরত জিবরাইল (আ.) এলেন। আমি যখন মিম্বারের প্রথম ধাপে পা রাখি, তখন হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আল্লাহ-তাআলা বলেছেন, যারা পিতামাতা উভয়কে বা একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও তাদের খেদমতের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম, আমিন! (তা-ই হোক)। আমি যখন মিম্বারের দ্বিতীয় ধাপে পা রাখি, তখন হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আল্লাহ-তাআলা বলেছেন, যারা রমজান পেল কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে তাদের গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম, আমিন! আমি যখন মিম্বারের তৃতীয় ধাপে পা রাখি, তখন হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আল্লাহ-তাআলা বলেছেন, যারা আপনার পবিত্র নাম মোবারক শুনল কিন্তু দরুদ শরিফ পাঠ করল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম, আমিন!’ (মুসলিম শরিফ)।
আরও পড়ুনতাহাজ্জুদ নামাজের উপকার০১ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ব র আল ল হ কর ছ ল বল ছ ন বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।