বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে মা-ছেলেসহ নিহত ৩
Published: 8th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাস ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে মা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বাসচাপায় দুই বন্ধু নিহত হয়েছেন। রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন এক তরুণ। এ ছাড়া সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।
সোনারগাঁয়ে নিহতরা হলেন– গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার আশরাফুল আলমের স্ত্রী কাকলী (৩৫), তাঁর পাঁচ বছরের ছেলে আরিয়ান আহম্মেদ রাফি এবং রংপুরের পীরগাছা উপজেলার আব্দুল ওহাবের ছেলে অটোরিকশাচালক আনিসুর রহমান (২৩)।
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি কাজী ওয়াহিদ মোরশেদ জানান, বিকেলে মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকায় ঢাকাগামী লেনে একটি দ্রুতগতির বাসের সঙ্গে উল্টো পথে আসা অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশায় থাকা মা-ছেলে ও চালক মারা যান। বাস জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তাঁর সহযোগী পালিয়ে গেছেন।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় বাসচাপায় দুই বন্ধু নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের উপজেলার ৫ নম্বর ব্রিজের ধলাটেংগুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রাকিব (২৬) ও রিজভী (২৮)। তাদের বাড়ি টাঙ্গাইল সদরের নগর জৈলফ এলাকায়। মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।
রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকায় বাসের ধাক্কায় সাকিব আল হাসান (১৮) নামে মোটরসাইকেল আরোহী এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলের এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ওই তরুণের সঙ্গে মোটরসাইকেলে থাকা দু’জন।
নিহত তরুণের আত্মীয় শরিফ মিয়া জানান, জর্দা তৈরির একটি কারখানায় কাজ করতেন সাকিব। তিনি মাতুয়াইলের দক্ষিণপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। গতকাল বিকেলে দু’জনকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হন। এক পর্যায়ে মাতুয়াইলের হাসেম রোডে বেপরোয়া গতির বাস মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনজনই রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সাকিকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নিহত ব্যক্তির নাম হযরত আলী (৫৫)। তাঁর বাড়ি নকিপুর গ্রামে। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুস সাত্তার জানান, সকালে বাজার নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন হযরত আলী। এ সময় দ্রুতগামী একটি ট্রাক বিপরীত দিক থেকে নকিপুর বাজারের দিকে যাচ্ছিল। পৌর সদরের মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার নজরুল ইসলামের বাড়ির সামনে সড়কের বাঁকানো অংশে পৌঁছালে দুটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সড়কে ছিটকে পড়েন হযরত আলী। দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর মোল্যা জানান, ট্রাক জব্দ ও চালককে আটক করা হয়েছে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকাল প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি)
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এল ক য় স ঘর ষ উপজ ল সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের
আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।
দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।
মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।
হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’
সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।
হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।
বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।
এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে
তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।
দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।
এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’