ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদে ট্রাম্পের উস্কানি
Published: 9th, February 2025 GMT
গত কয়েক দিন ধরে আমেরিকানরা দেখেছে, প্রযুক্তি খাতের একজন অনির্বাচিত বিলিয়নেয়ার ফেডারেল সরকারের বড় অংশ ধ্বংস করছে। ইলন মাস্ক বড়াই করে বলেছেন, তিনি জীবন রক্ষাকারী ইউএসএআইডি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার ব্যাপারে ‘খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছেন।
স্থায়ী মার্কিন মালিকানার অধীনে গাজার বসতি উচ্ছেদ করা, বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ হিসেবে পুনর্নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে এই সম্মান ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং গাজা ‘শুধু পরিষ্কার’ করার জন্য তার প্রস্তাবের পক্ষে গিয়েছিল। এটি এতটাই বিস্ময়কর ছিল, বেশ কয়েক দিনের মধ্যে দেশ-বিদেশে তা মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে পড়েছিল। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর তিন সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে কিছু নতুন ধাক্কা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে এটি আচার হয়ে উঠেছে।
তাই ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার অভ্যন্তরীণ সমালোচনা মূলত মার্কিন মালিকানা কার্যকর করতে গাজায় মার্কিন সেনা মোতায়েন করার পরামর্শের ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ করে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, এটি ধারণা হিসেবে মন্দ এবং তা মার্কিনদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এ সময় তিনি শুধু ১৯৮৩ সালে হিজবুল্লাহ বোমায় নিহত ২৪১ মার্কিন মেরিনের কথা মনে করিয়ে দেন। বারাক ওবামার হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের প্রধান রহম ইমানুয়েল এই সপ্তাহে আমাকে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গাজা দখলের মধ্য দিয়ে বৈরুত বিপর্যয় এবং ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণের ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ উভয়েরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এটি ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টান্ত’। প্রকৃতপক্ষে, এটি ‘ইরাক ও লেবানন’-এর চেয়ে কঠিন কিছু হবে। অথচ ট্রাম্পের কাছে প্রত্যাশা ছিল, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ থেকে মার্কিনিদের বের করে আনা, তাদের পুরোনো ও তিক্ত যুদ্ধে নিমজ্জিত করা নয়।
অন্যরা সময়ের বিবেচনায় ট্রাম্পকে দোষ দিয়েছেন। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রক্রিয়াটিকে স্থগিত করেছিলেন বটে, তবে এতটা অস্থিতিশীল করেননি। প্রায় ৫০০ দিন ধরে গাজায় বন্দি থাকা ইসরায়েলি পরিবারগুলো এখন আশঙ্কা করছে, হামাস জিম্মিদের মুক্তি বা যুদ্ধবিরতি পালন চালিয়ে যাওয়ার সব উৎসাহ হারিয়েছে। যেখানে চূড়ান্ত পরিকল্পনা গাজাবাসীকে নির্মূল করা এবং গাজাকে মার্কিন মালিকানাধীন সৈকত রিসোর্টে পরিণত করা, সেখানে কেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তির সঙ্গে লেগে থাকবে?
ট্রাম্প গাজাকে পাইকারিভাবে মার্কিনিদের দখল নেওয়ার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে সৌদি আরবকে ইসরায়েলের সঙ্গে এমন শর্তে একটি চুক্তি করতেও চাপ দেন, যা দেশটি সেই দুঃস্বপ্নের সম্ভাবনা এড়াতে আগেই প্রত্যাখ্যান করত। শর্তটি হলো, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ছিনিয়ে নেওয়া। এটিকে ট্রাম্পের কূটনৈতিক অগ্রগতির পুরস্কার হিসেবে দেখেছিলেন। এই অঞ্চল নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ছিল। মনে করুন, কীভাবে তিনি ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।
অন্যথায়, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলের জন্য মার্কিন প্রশাসন অনুমোদন দেবে। এটি ছিল একটি হুমকি, যা ঘটনাক্রমে ট্রাম্পের হাতে পুনরুজ্জীবিত হতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে। এই সপ্তাহে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি আগামী মাসে পশ্চিম তীরের ভবিষ্যতের বিষয়ে তার চিন্তাভাবনা জানাবেন। এসব বিশ্লেষণ ও সমালোচনা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এখানে তাৎপর্যবহ ও বড় একটি বিষয় উঠে আসেনি। তাড়াহুড়া করে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে বড় ভুলটি এড়িয়ে যায়। এটি শুধু আরেকটি পররাষ্ট্রনীতির প্রস্তাব নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশকে জাতি নির্মূলের মাধ্যমে ৬ হাজার মাইল দূরে অন্য মানুষের জমি চুরি করা এবং একটি লাভজনক রিয়েল এস্টেট সুযোগের জন্য কাজটি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনিরা অন্য দেশে ‘স্থানান্তরিত’ হওয়ার সম্ভাবনা দেখে আনন্দিত হবেন এবং সম্ভবত কিছু লোক ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং হামাসের নিপীড়নের কারণে হতাশ হয়ে বেরিয়ে আসার সুযোগটি লুফে নেবেন। কিন্তু অনেকেই তাতে সাড়া দেবে না। এ জমির সঙ্গে তাদের যুক্ততা রয়েছে, যা দূরের একজনের প্রতিশ্রুতি বদৌলতে বিক্রি হতে পারে না।
ইহুদিদের উগান্ডা থেকে মাদাগাস্কার, আলাস্কা থেকে রাশিয়ার এক কোণ দেওয়ার জন্য তাদেরও বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব করা হয়েছিল। কোনোটি কখনও বিশেষ আকর্ষণ করতে পারেনি। কারণ, তারা শুধু একটি জায়গা নিজেদের পূর্বপুরুষের জন্মভূমি হিসেবে বিবেচনা করেছিল। ঠিক ফিলিস্তিনিরাও এসব ছোট ছোট ভূমিকে একইভাবে দেখে। এটাই উভয় জাতির জন্য ট্র্যাজেডি।
দু’পক্ষই যে কোনো উপায়ে সেই জমি ভাগ করে নেওয়াটা কল্যাণকর হবে। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিও তাদের উচ্ছেদ করতে পারেন না।
জোনাথন ফ্রিডল্যান্ড
গার্ডিয়ানের কলাম লেখক;
দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বল ছ ন র জন য ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’
এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স