সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন দুই শতাধিক সুপারিশ–সংবলিত একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে, যেখানে বাংলাদেশে চারটি প্রদেশ গঠনের পাশাপাশি একটি ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রস্তাবের পেছনে অন্যতম প্রধান যুক্তি হলো, ঢাকাকেন্দ্রিক ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ ও কেন্দ্রীয় সরকারের সম্প্রসারিত কার্যপরিধির কারণে বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোর কার্যকর সেবা প্রদানে অপ্রতুল হয়ে পড়া।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা অত্যন্ত কেন্দ্রনির্ভর। অধিকাংশ সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কেন্দ্রীভূত, যার ফলে স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যা সমাধানে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। কমিশন মনে করছে, বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে এই পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দেশে জনসংখ্যার চাপ ও সেবার পরিধি বিবেচনায় নিয়ে পুরোনো চারটি বিভাগকে ভিত্তি করে চারটি প্রদেশ গঠন করা হলে প্রশাসনিক কার্যক্রমের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে কমিশন।

বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর ওপর জনসংখ্যার ভারসাম্যহীন চাপ বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে শহরকেন্দ্রিক করে তুলেছে। জনসংখ্যার অতিরিক্ত ঘনত্বের ফলে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে এবং বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় রাজধানীকে একটি ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’–এর আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে শুধু ঢাকাই নয়, এর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী এলাকা ও অন্যান্য মেট্রোপলিটন অঞ্চলের উন্নয়ন সুনিশ্চিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠার বাস্তবতা

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব উঠে এসেছে, যা অনেকের কাছে প্রশংসিত হলেও এটি বাস্তবায়নের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। শুধু উন্নয়ন বা জনসংখ্যা বিকেন্দ্রীকরণের যুক্তিতে বিশ্বে কোনো দেশ প্রাদেশিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি; বরং দুটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য থাকার পরেই সাধারণত এ ব্যবস্থা গৃহীত হয়।

প্রথমত, প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থার প্রয়োজন হয় তখন, যখন কোনো দেশের ভৌগোলিক পরিসর এতটাই বিশাল হয় যে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে প্রতিটি অঞ্চলে কার্যকরভাবে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা সম্ভব হয় না। বৃহৎ ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে অঞ্চলভেদে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভিন্নতা প্রয়োজন হয়, যা এককেন্দ্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্জন করা কঠিন। উদাহরণ হিসেবে রাশিয়ার কথা বলা যেতে পারে, যেখানে আয়তনের বিশালত্বের কারণে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি প্রতিটি অঞ্চলের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। 

দ্বিতীয়ত, প্রাদেশিক সরকার সাধারণত প্রয়োজন হয় তখন, যখন কোনো দেশে ভাষাগত ও জাতিগত বৈচিত্র্য এতটাই প্রকট যে কেন্দ্রীয়ভাবে একক নীতির আওতায় দেশ পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে। ভারতে, রাজ্যসমূহ সাধারণত ভাষা এবং জাতিসত্তার ভিত্তিতে গঠিত, যেমন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য, পাঞ্জাব পাঞ্জাবিদের জন্য। একইভাবে, কানাডা, স্পেন বা বেলজিয়ামের মতো দেশগুলোতে ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগত বৈচিত্র্যের কারণে প্রাদেশিক বা ফেডারেল ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য দুটি অনুপস্থিত। প্রথমত, বাংলাদেশের আয়তন তুলনামূলকভাবে ছোট, যেখানে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের জন্য প্রাদেশিক সরকার গঠনের উদ্যোগ বাস্তবসম্মত বা প্রয়োজন কি না, তা নিয়ে যাচাই-বাছাই করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, ভাষা ও জাতিগত দিক থেকে বাংলাদেশ অত্যন্ত সমজাতীয়, ৯৯% মানুষ একই ভাষায় কথা বলে এবং একই জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এখানে ভাষাভিত্তিক বা জাতিগত বিভাজন নেই, যা পৃথক প্রাদেশিক শাসন কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করে। 

■ প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের মূল দায়িত্ব ছিল প্রশাসনকে রাজনৈতিকীকরণের হাত থেকে উদ্ধার করা ও সিভিল সার্ভিসের ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ ঠিক করা।  ■ বাংলাদেশের আয়তন তুলনামূলকভাবে ছোট, যেখানে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের জন্য প্রাদেশিক সরকার গঠনের উদ্যোগ বাস্তবসম্মত বা প্রয়োজন কি না, তা নিয়ে যাচাই-বাছাই করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ■ প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করতে হলে বিদ্যমান সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশ পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, যা প্রশাসনিক সংস্কার প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করবে।

এমন বাস্তবতায়, শুধু প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের যুক্তিতে প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা চালুর বিষয়টি আরও গভীর পর্যালোচনার দাবি রাখে।

একটি প্রশ্ন থেকে যায়, প্রদেশভিত্তিক দেশ বিভাজনের প্রস্তাব জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কার্যপরিধির অন্তর্ভুক্ত কি না এবং এটি কমিশনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের মূল দায়িত্ব ছিল প্রশাসনকে রাজনৈতিকীকরণের হাত থেকে উদ্ধার করা ও সিভিল সার্ভিসের ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ ঠিক করা, যাতে করে প্রশাসনকে দক্ষ, কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক করা যায়। সে ক্ষেত্রে প্রদেশভিত্তিক প্রশাসন বাস্তবায়িত হলে তা প্রশাসনিক দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কীভাবে অবদান রাখবে, তা নিয়ে কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ থেকে যায়।

সংস্কার স্থগিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা 

বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিলে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনসহ অন্য সব সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। দেশের বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং এখন পর্যন্ত গঠিত সব সংস্কার কমিশন এই কাঠামোর জন্য উপযুক্ত সুপারিশ প্রদান করেছে। ফলে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করতে হলে বিদ্যমান সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশ পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, যা প্রশাসনিক সংস্কার প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করবে।

জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করতে পারে

প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রথমত, নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্গঠন প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে। প্রশ্ন উঠবে, কেন্দ্রীয় নির্বাচন আগে হবে, নাকি প্রাদেশিক নির্বাচন? এই অনিশ্চয়তা নির্বাচনী ব্যবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তৃতীয়ত, প্রদেশগুলোর নামকরণ ও সীমানা নির্ধারণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। 

দক্ষিণ এশিয়ায় নিকট অতীতে প্রাদেশিক ব্যবস্থায় রূপান্তরের অভিজ্ঞতা রয়েছে নেপালের, সেখানে প্রদেশসমূহের সীমানা নির্ধারণ, প্রদেশের নামকরণ ও প্রাদেশিক ব্যবস্থার বাস্তবায়ন শুরু করতে তিন বছরেরও অধিক সময় ব্যয় হয়েছে। বাংলাদেশেও এ নিয়ে যে দীর্ঘ বিতর্ক তৈরি হবে না, তা নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যায় না। এতে করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, যা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মুখোমুখি করে দিতে পারে।

জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে

বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা চালুর প্রস্তাবের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো জাতীয় নিরাপত্তা। দেশের ছোট আকার ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে, প্রাদেশিক কাঠামো দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। বর্তমানে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কিছু জটিলতা রয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে প্রদেশভিত্তিক বিভাজন দেশের নিরাপত্তা ও সংহতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

বাংলাদেশের জনগণ ইতিমধ্যে জেলা, উপজেলা ও এলাকাভিত্তিক বিভাজনে বিভক্ত এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, এমনি বিশ্ববিদ্যালের হলগুলোতেও এই বিভাজনের ভিত্তিতে অধিকাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রদেশভিত্তিক বিভাজন এই জটিলতাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে এবং একে কেন্দ্র করে অন্য দেশের পক্ষ থেকে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, যেমনটা নেপালের ক্ষেত্রে ঘটেছে। এতে করে দেশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভাজন আরও তীব্র হতে পারে এবং দেশের সংহতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অতিরিক্ত খরচের বোঝা

বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর আর্থিক খরচ। নতুন চারটি প্রদেশ প্রতিষ্ঠার ফলে প্রতিটি প্রদেশের জন্য আলাদা পার্লামেন্ট, মন্ত্রী, এমপি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। বর্তমান একক সরকারি কাঠামোতে যদি আরও চারটি নতুন প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে প্রতিটি প্রদেশে আলাদা জনবল এবং প্রশাসনিক অবকাঠামো প্রয়োজন হবে। এই খরচ সরকারের জন্য বিপুল আর্থিক বোঝা সৃষ্টি করতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশের বাজেটের একটি বড় অংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে করতে খরচ হয়। ফলে নতুন প্রদেশের জন্য সরকারের খরচ দ্বিগুণ হতে পারে। কারণ, চারটি প্রদেশে আলাদা সরকার এবং তাদের বিশাল পরিমাণ জনবল ও অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য সরকারকে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে, যা দেশের সীমিত আর্থিক সম্পদে একটি বড় চাপ সৃষ্টি করবে।

সংবিধান পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ

প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা চালু করার আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাংলাদেশের সংবিধানকে নতুন করে সংশোধন বা প্রণয়ন করা। বর্তমান সংবিধান এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি এবং এটি নতুন প্রাদেশিক কাঠামো গ্রহণের জন্য পূর্ণভাবে উপযোগী নয়। ফলে প্রদেশের সীমানা, একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক এবং প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতার বণ্টন (পাওয়ার শেয়ারিং) ও ভারসাম্য ঠিক করতে হলে সংবিধানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে হবে বা নতুন সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। 

যদি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হয় সেখানে প্রশ্ন উঠতে পারে—কে এই সংবিধান প্রণয়ন করবে? কোথায় কার মাধ্যমে পাস হবে? প্রদেশগুলোর ক্ষমতা এবং একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে নির্ধারিত হবে এবং তাদের মধ্যে ভারসাম্য কীভাবে বজায় থাকবে? এই বিষয়গুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা এবং আইনগতভাবে পরিষ্কার করে তুলে ধরা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

যা করা যেতে পারে

বাংলাদেশে ক্ষমতার ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে দেশে একটি স্থানীয় সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান, যা বিকেন্দ্রীকরণের জন্য একটি সম্ভাব্য কাঠামো হিসেবে স্বাধীনতার আগে থেকেই বিবেচিত হয়ে আসছে। তাই উন্নয়নকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হলে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। যদি স্থানীয় সরকারকে একটি শক্তিশালী কাঠামোতে দাঁড় করানো যায়, তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তাহলে বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হবে।

এ ছাড়া আমাদের বিবেচনা করা উচিত যে স্থানীয় সরকারের মতো একটি দীর্ঘদিন ধরে চলমান পদ্ধতি যদি এই দেশে সফল না হয়, তাহলে বৃহত্তর প্রাদেশিক ব্যবস্থা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা এত দিনে কেন সফল হয়নি, সে বিষয়ও খতিয়ে দেখা উচিত।

তবে ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ ব্যবস্থা একটি সফল সংস্কার উদ্যোগ হতে পারে। কেননা মেট্রোপলিটন সিটিতে বিভিন্ন সংস্থা যেমন ঢাকা সিটি করপোরেশন, ওয়াসা এবং অন্যান্য সংস্থা কাজ করে। দেখা যায়, এক সংস্থা একটি রাস্তা কাটার পর আরেকটি সংস্থাও একই কাজ আবার করে। সমন্বয় না থাকার কারণে একই কাজ বারবার করা হয়। ফলে একদিকে খরচ বেড়ে যায়, অন্যদিকে জনগণকে অনেক দুর্ভোগ সহ্য করতে হয় এবং এ ক্ষেত্রে মেয়র চাইলেও কিছু করতে পারেন না। ফলে এ ধরনের শহরকেন্দ্রিক ভিন্ন সরকার পদ্ধতি সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

 সর্বোপরি প্রাদেশিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে; বিশেষ করে যেখানে অধিকাংশ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটপূর্ণ এবং অতিরিক্ত সরকারি ব্যয়ভারও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও এই ব্যবস্থার প্রস্তাব নতুন কিছু নয়, তবু এ ক্ষেত্রে সংস্কৃতি, ভৌগোলিক অবস্থান, পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক, রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করা জরুরি।

প্রাদেশিক ব্যবস্থার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার আগে আমাদের ভেবে দেখতে হবে যে আমরা এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য হুমকি তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছি কি না? প্রশাসনিক ক্ষমতা ও বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এ বিষয়ে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি সংস্কার প্রস্তাব কোনগুলো। তা না করে প্রাদেশিক ব্যবস্থা চালু করার মতো একটি বিতর্কিত বিষয় নিয়ে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন সময়ক্ষেপণ করলে অন্যান্য জরুরি সংস্কার কার্যক্রম বাধার সম্মুখীন হতে পারে, যা এই মুহূর্তে কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

সৈয়দা লাসনা কবীর অধ্যাপক লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এস কে তৌফিক হক প্রফেসর ও ডিরেক্টর, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

মোহাম্মাদ ঈসা ইবন বেলাল গবেষণা সহযোগী, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র দ শ ক ব যবস থ ব ক ন দ র করণ র প র দ শ ক সরক র বড় চ য ল ঞ জ জনস খ য র ব যবস থ র দ শ র জন র জন ত ক য় সরক র সরক র র প রণয়ন ব ভ জন র জন য গভর ন একক ন ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকার চলে গেলেও যেন মানুষ বলে বাজেট ভালো হয়েছিল: অর্থ উপদেষ্টা

এবারের বাজেট বাস্তবসম্মত হবে মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সরকার বাজেট নিয়ে এখন যা বলছে সেভাবেই করা হবে। যাতে এই সরকার চলে গেলেও মানুষ বলে বাজেট ভালো হয়েছিল।’

বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির ৪৫ তম সভায় তিনি এ কথা বলেন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ বিন হারুন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআই প্রশাসক হাফিজুর রহমান।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এবারের বাজেট বাস্তবসম্মত করা হবে। চিরাচরিত বাজেটের মতো হবে না। বাজেট নিয়ে এখন যা বলছে সরকার, সেভাবেই করার চেষ্টা থাকবে। যেন এই সরকার চলেও গেলেও যাতে মানুষ বলে বাজেট ভালো হয়েছিল। বিগত সময়ে বড় বাজেট দেওয়া হতো, কিন্তু পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতো না। কিন্তু এই সরকার যে বাজেট দিবে তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা থাকবে।’

কর অব্যাহতির দিন চলে গেছে বলে মন্তব্য করেন ড. সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বাড়বে। ব্যবসায়ীদেরও প্রতিযোগী হতে হবে। ব্যবসায়ীরা কর দিলে সুবিধা পাবেন। কিন্তু অনেকেই কর অব্যাহতি বা কর রেয়াতি সুবিধা চায়। ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে অব্যাহতির দিন চলে গেছে। রাজস্ব আয় বাড়ানো নিয়ে এ সরকারের ওপর অনেক চাপ আছে। ব্যবসায়ীরা যে কর দেন তার সুবিধাও তারা ভোগ করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে যেসব ব্যবসায়ী আছেন বা যে চেম্বারগুলো রয়েছে অনেক সময় তাদের কথা শোনা হয় না। তবে সরকার তাদের জন্যে কাজ করছে।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারে দায়িত্বে থাকায় এখন অনেক গালমন্দ খেতে হচ্ছে। সরকারের ভুলত্রুটি থাকতে পারে। তবু সরকার চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষকে স্বস্তিতে রাখতে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার শুধু আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেনি। অন্যান্য সব পক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছে। আইএমএফের সঙ্গে এখনও শর্ত মেলেনি। কঠোর দর কষাকষি হচ্ছে। চেষ্টা চলছে।’

এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমনান বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আগামী বাজেটের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে অংশীজনদেন প্রত্যাশা অনেক।’

তিনি বলেন, ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ, এলডিসি গ্রাজুয়েশন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষগুলো বিবেচনা নিয়ে আগামী অর্থ বছরের জন্য বিনিয়োগ ও ব্যবসা বান্ধব বাজেট প্রণীত হবে বলে এফবিসিসিআই বিশ্বাস করে। এছাড়া নীতি সহায়তার মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার বিষয় থাকবে বলে এফবিসিসিআই প্রত্যাশা করে।

সভায় ব্যবসায়ীরাদের পক্ষে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ'র সভাপতি শওকত আজীজ রাসেল, রিহ্যাবের পরিচালক আইয়ুব আলী প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এই সরকার চলে গেলেও যেন মানুষ বলে বাজেট ভালো হয়েছিল: অর্থ উপদেষ্টা