দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে কুয়াশায় সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে নৌ কর্তৃপক্ষের। অথচ এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার করছে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারগুলো।

শীত মৌসুম শুরুর পর থেকেই প্রায় প্রতিদিনই দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকছে। গত শনিবার টানা প্রায় ১১ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। 

জানা যায়, কোনো প্রকার অনুমতি না থাকলেও অবৈধভাবে স্থানীয় ইঞ্জিনচালিত ট্রলারচালকরা সারাদিনই যাত্রীদের পদ্মা নদী পারাপার করে থাকে। দিনের অন্যান্য সময় যাত্রী কম থাকলেও ঘন কুয়াশা তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। এ সময় ফেরি ও লঞ্চ বন্ধ থাকায় তাদের যাত্রী বেড়ে যায়। তারা যাত্রীদের সঙ্গে মোটরসাইকেলও পারাপার করে থাকে। জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীরাও অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারেই নদী পাড়ি দেয়।

গত শুক্রবার দৌলতদিয়া ঘাটে আটকে থাকা বাসযাত্রী নাজিবুর রহমান বলেন, এই ঘন কুয়াশায় অবৈধভাবে অনেককেই দেখছেন ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে নদী পারাপার হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এভাবে পারাপার হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

একই দিন রাজবাড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়া কামরুল ইসলাম ও রাশেদুল ইসলাম নামের দুই মোটরসাইকেল আরোহীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, জরুরি কাজে নবীনগর যেতে হবে তাদের। সকাল ৭টায় দৌলতদিয়া ঘাটে এসে দেখতে পান ফেরি বন্ধ। কখন ফেরি ছাড়বে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে তারা ঝুঁকি নিয়েই ট্রলারে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ ক্ষেত্রে তাদের মোটরসাইকেল ভাড়া ৫০০ ও দুজনের ভাড়া ২০০ টাকা দিতে হয়েছে। 

একই দিন সকালে নদী পাড়ি দিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে অপেক্ষায় ছিলেন সবুজ শেখ। তিনি জানান, ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করেন। ফেরি বন্ধ থাকায় চাকরি বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে নদী পাড়ি দিচ্ছেন। ভাড়া নিচ্ছে ১৫০ টাকা। 

দৌলতদিয়া ঘাট সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘন কুয়াশায় ফেরি ও লঞ্চ বন্ধ রাখার সুযোগে ঘাটের সুবিধাভোগী একটি চক্র বাড়তি টাকা নিয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপার করছে। চার কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিতে যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০০-২০০ টাকা এবং মোটরসাইকেল পারাপারে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো প্রকার পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নৌ পুলিশ সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ঘন কুয়াশার মধ্যে যাত্রী পারাপার করায় গত ১ ফেব্রুয়ারি দুটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার জব্দ ও তিন মাঝিকে আটক করেছে দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রত্যেককে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, কুয়াশায় ফেরি বন্ধ থাকলেও মাঝেমধ্যে ট্রলার ভিড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা যায়। বিষয়টি স্থানীয় নৌ পুলিশকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।

দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক এনামুল হক বলেন, কুয়াশায় ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে যাত্রী পারাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। এর পরও যাত্রী পারাপারের কথা শুনে গত সপ্তাহে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তারা সটকে পড়ে। জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প র প র কর বন ধ থ ক দ লতদ য়

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ