অস্ট্রেলিয়ার উচ্চশিক্ষা নিয়ে ৫ ভুল ধারণা
Published: 9th, February 2025 GMT
ভুল ধারণা ১: অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে পড়তেই অনেক টাকা আয় করা যায়
অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং তাঁদের পরিবার মনে করে, শিক্ষার্থী ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছাতে পারলেই টাকা আয় করা যাবে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলালেই বোঝা যাবে এটি একটি ভুল ধারণা। বাস্তবে অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থী ভিসাধারীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা কাজ করার বৈধতা পান। আর ঘণ্টাপ্রতি আয় অন্তত ২৪ অস্ট্রেলীয় ডলার। অর্থাৎ বৈধভাবে একজন শিক্ষার্থী মাসে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। কিন্তু সরকারি হিসাব অনুযায়ী টিউশন ফি ছাড়াই একজন শিক্ষার্থীর মাসিক খরচ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার বেশি। এ প্রসঙ্গে মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি অভিজ্ঞতা ও হাতখরচ চালানোর জন্য খণ্ডকালীন কাজ করি। আসলে অস্ট্রেলিয়া সরকার ভিনদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রক্রিয়াটা এমনভাবে সাজিয়েছে, যেন আমরা নিজের দেশের টাকা অস্ট্রেলিয়ায় এনে খরচ করি। তাই কেউ যদি মনে করেন, এখানে পড়তে এসে অনেক টাকা রোজগার করে আবার দেশেও পাঠাবেন, তাহলে ভুল করবেন। বরং টিউশন ফির জন্য ভালো অঙ্কের টাকা বাংলাদেশ থেকে আনতে হবে।’
ভুল ধারণা ২: ভিসা পাওয়া সহজ, খরচ কম
মনে হতে পারে, অস্ট্রেলিয়ার ‘সাবক্লাস ৫০০ স্টুডেন্ট ভিসা’ পাওয়া অনেক সহজ আর খরচও কম। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দেশটিতে দীর্ঘদিন অভিবাসন আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘একটা সময় অনেক সাধারণ কলেজের ডিপ্লোমা কোর্সেও স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া যেত। এখন বাছাইকৃত ভালো বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া শিক্ষার্থী ভিসা মঞ্জুর হওয়ার হার অনেকটাই কম। গেল বছর আবেদনকারীর প্রায় ৩০ শতাংশ বাংলাদেশি ভিসা পাননি। আর অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থী ভিসার খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। প্রাথমিকভাবে ভিসা নিয়ে একজন শিক্ষার্থীর অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছাতেই প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। তবু আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ায় আসছে এবং আরও আসবে।’
আরও পড়ুনবিদেশে পড়তে চাই, কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রোগ্রাম আমার জন্য৩ ঘণ্টা আগেভুল ধারণা ৩: পড়াশোনা শেষ করলেই স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া যাবে
অস্ট্রেলিয়ায় দক্ষ পেশাজীবীর চাহিদার তালিকা আছে। অনেকের ধারণা, এই তালিকায় থাকা পেশা–সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে পড়াশোনা শেষ করলেই অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া যাবে। আর তা না হলেও অন্তত স্থায়ী বাসিন্দার ভিসায় আবেদন করা যাবে। কিন্তু শিক্ষার্থী ভিসার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী বাসিন্দার ভিসার প্রায় তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজের ভিসা হলো ‘সাবক্লাস ৪৮২ স্কিল ইন ডিমান্ড ভিসা’। এই ভিসা থেকে ‘সাবক্লাস ১৮৬’ ভিসার মাধ্যমে কেউ অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারেন। সদ্য পড়াশোনা শেষ করে কাজের ভিসায় আবেদন করেছেন ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। তাঁর বক্তব্য, ‘বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী ভিসা করার সময় এজেন্সি থেকে বলেছিল ফুড টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করলেই চাকরির মাধ্যমে স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারব। কিন্তু বাস্তবতা এত সহজ নয়।’
ভুল ধারণা ৪: নিশ্চিন্ত জীবনযাত্রা
উন্নত দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার জীবনযাপনে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে ঠিক। কিন্তু জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়, সাংস্কৃতিক পার্থক্য এবং কাজ ও পড়াশোনার চাপ অনেককেই হতাশায় ফেলে দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বলেন, ‘গরমের দিনে ৪০ ডিগ্রির ওপর তাপমাত্রা, আবার শীতে ১০ ডিগ্রির নিচের ঠান্ডায় অভ্যস্ত হতে সময় লেগেছে। জিনিসপত্রের দাম শুনে বাংলা টাকায় হিসাব করতে করতেও মানসিক চাপে পড়তে হয়।’
ভুল ধারণা ৫: ভিসার নীতিমালা সামনে সহজ হবে
অভিবাসন আইনজীবী নিজাম উদ্দিনের মতে, ‘ভিসা দিন দিন সহজ হচ্ছে, এমন প্রলোভন দেখিয়ে অনেকে শিক্ষার্থীকে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন এজেন্সি ভিসা করিয়ে দেয়। সম্প্রতিই ভিসার মধ্যে ইংরেজির স্কোর বাড়ানোসহ আরও অনেক আবশ্যিক শর্তে কঠোরতা আনা হয়েছে। আবার শিক্ষার্থী ভিসায় মোট মঞ্জুর হওয়া ভিসার সংখ্যাও কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে এরপরও নিয়ম মেনে যাঁরা আবেদন করছেন, তাঁদের ভিসা হওয়ার হারই বেশি।’
বিপদ এড়াতে ৩ পরামর্শ১.
২. বাস্তবসম্মত বাজেট তৈরি করুন: শুধু টিউশন ফি নয়, থাকা-খাওয়া ও জরুরি তহবিলের পরিকল্পনা করুন।
৩. মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন: নতুন সংস্কৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মানসিকতা রাখুন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’
এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স