৬৬ শতাংশ নাগরিকের মতে সরকারি কর্মচারীরা শাসকের মতো আচরণ করেন: জরিপ
Published: 9th, February 2025 GMT
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পরিচালিত এক জরিপের তথ্য বলছে, ৬৬ শতাংশের বেশি নাগরিক মনে করেন, সরকারি কর্মচারীরা (আইন অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই কর্মচারী) নাগরিকদের সঙ্গে শাসকের মতো আচরণ করেন। এর মধ্যে ৩১ শতাংশের মতে, কর্মচারীরা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। আর ৫২ শতাংশের মতে, ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া যায় না এবং ৪৬ শতাংশের মতে, তাঁরা সেবা চাইতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে জরিপের এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে জনপ্রশাসন সংস্কারসহ ছয়টি সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন জনপ্রশাসন ও শাসনকাঠামোয় বড় রকমের পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার–সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে নাগরিকদের মতামত নিতে অনলাইনে এক জরিপ পরিচালনা করেন তাঁরা। ১ লাখ ৫ হাজার নাগরিক বিভিন্ন প্রশ্ন সম্পর্কে তাঁদের মতামত দেন। নির্ধারিত প্রশ্নের বাইরে উন্মুক্তভাবে মতামত দেওয়ারও সুযোগ রাখা হয়।
জরিপের তথ্য বলছে, ৮৪ শতাংশের বেশি নাগরিক মনে করেন দেশের জনপ্রশাসনে সংস্কার প্রয়োজন। ৮০ শতাংশের মত, দেশের জনপ্রশাসনব্যবস্থা জনবান্ধব নয়। প্রায় ৬৯ শতাংশ নাগরিকের ধারণা, বিগত ১৫ বছরে জনপ্রশাসনে নিরপেক্ষতার অভাব ছিল। ৫৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন জনপ্রশাসনকে জনবান্ধব করার পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হচ্ছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। ৪২ শতাংশের মতে, দুর্নীতিই হচ্ছে প্রধান বাধা।
আরও পড়ুনমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ৩৫, সচিবের সংখ্যা ৬০ করার সুপারিশ ৩ ঘণ্টা আগেজরিপে অংশ নেওয়া ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করে, জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রধান কাজ জবাবদিহি নিশ্চিত করা। আর ৩৬ শতাংশের মতে, দুর্নীতি দূর করতে পারা হচ্ছে আসল কাজ। আর ৯৬ শতাংশ নাগরিকের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে।
আরও পড়ুনকলেজশিক্ষকদের পদোন্নতি পেতে লাগবে গবেষণা০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’