হাত-পা বাঁধা অভিবাসী ফেরত আসায় চাপে মোদি সরকার
Published: 9th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী স্বামীকে বারবার ফোনকল দিচ্ছিলেন ভারতের কুলবিন্দর কর। দুই সপ্তাহ ধরে তিনি যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এতে অনেকটাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
পাঞ্জাব রাজ্যের হোশিয়ারপুর থেকে তিনি জানান, তাঁর স্বামী বেঁচে আছেন না মারা গেছেন, তা নিয়ে তারা চিন্তায় পড়ে যান। পরে তিনি জানতে পারেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নথিপত্রহীন অভিবাসীদের স্বদেশে ফেরত পাঠাচ্ছেন। গত বুধবার যাদের ফেরত পাঠানো হয়, সেই ১০৪ ভারতীয়ের মধ্যে কুলবিন্দরের স্বামী হারবিন্দর সিংও ছিলেন।
আলজাজিরা জানায়, পাহাড়-পর্বত, জঙ্গল, নদী, সাগর-মরুর কঠিন পথ পার হয়ে পাঞ্জাব থেকে হারবিন্দর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছিলেন। নারী-শিশুদের সঙ্গে তাঁকেও যখন ফেরত পাঠানো হয়, তখন হাত ও পা বাঁধা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানে গাদাগাদি অবস্থায় মেঝেতে বসে ৪০ ঘণ্টা তারা এভাবে ছিলেন। বিমানটি পাঞ্জাবের অমৃতসরে অবতরণ করে। তাদের সঙ্গে গুরুতর অপরাধীর মতো আচরণ নিয়ে ভারতজুড়ে ক্ষোভের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে ভারতের বিরোধী রাজনীতিক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের লোকজন নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।
তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতজানু নীতিতে চলছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পার্লামেন্টের সামনে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে প্রতীকী বিক্ষোভ করেন ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী।
আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এর আগে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের আচরণ তাঁর সরকারকে বিব্রত অবস্থায় ফেলেছে। ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ সম্বোধন করেন মোদি। তাহলে এ ধরনের পদক্ষেপ কেন থামাতে পারেননি– এ প্রশ্ন উঠছে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, এ দফায় সব মিলিয়ে ৪৮৭ জন নথিপত্রহীন ভারতীয়কে ফেরত পাঠাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আটকদের সঙ্গে যাতে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ না হয়, সেজন্য তারা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছেন। দ্য হিন্দু অনলাইন জানায়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭৫৬ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এ তথ্য দিয়েছেন। সম্প্রতি ১০৪ জনকে ফেরত পাঠানো নিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু নিয়ম থাকে।
ভারতে ফেরত আসা নথিপত্রহীনদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন গুজরাটের। এ রকমই একজন রাজ্যটির ভাদোদারার বাসিন্দা ৩৫ বছরের খুশবু প্যাটেল। মার্কিন সামরিক বিমানে ৪০ ঘণ্টা ভ্রমণের দুঃসহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। তাঁর বড় ভাই বরুণ প্যাটেল বলেন, পুরো ভ্রমণে খুশবু শিকলে বাঁধা অবস্থায় ছিলেন। যে জায়গাটিতে বসা ছিলেন, সেখানে নড়াচড়াও করতে পারেননি। খুশবু জানিয়েছেন, অপরাধী ও সাজাপ্রাপ্তদের মতো তাদের সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ৪০ থেকে ৫০ লাখ রুপি খরচ করে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন।
ভারতীয়দের এভাবে দেশে ফেরার সমালোচনা করে এটাকে ‘বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন কংগ্রেস নেতা মনিকম ঠাকুর। সামাজিক মাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, যেভাবে ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো হয়েছে অপরাধীদের মতো শিকলে বেঁধে, তা অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ফেরত পাঠানো ভারতের জন্য অপমানজনক।
যে অবৈধ পথে ভারতীয়রা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে যান, সেটা ‘ডাংকি’ নামে পরিচিত। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বিনোদ কুমার বলেন, ডাংকি পথে যাওয়ার জন্য তরুণরা তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে সব হারা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান পছন্দ হয়নি স্যামির
চট্টগ্রামের সাগরিকায় উপস্থিত থাকা দর্শকরা গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাপোর্ট করেছে এমন কথা শুনলে অবাক হবেন নিশ্চিয়ই? অবাক হওয়ার কিছু নেই। সত্যিই এমন কিছুই হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে।
ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ বাংলাদেশ দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দর্শকরা আপাতদৃষ্টিতে এমনটাই মনে হয়েছে। লাল-সবুজের পতাকা গ্যালারিতে উড়তে দেখা যায়নি তেমনটা নয়। কিন্তু ম্যাচ যত গড়িয়েছে সেই পতাকা উড়ানোও তত কমেছে। টিকিটের মূল্য একেবারে হাতের নাগালে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তবুও ভরেনি গ্যালারি।
লিটন, জাকের, তাসকিন, শরিফুল, সাইফদের পারফরম্যান্স এমন গড়পড়তা যে সমর্থকরা প্রতিপক্ষের ব্যাটিং-বোলিং দেখেই বেশি আনন্দিত হচ্ছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে নিবেদন, যে চাহিদা তা রোস্টন চেজ, আকিম আগাস্তের ব্যাটে পাওয়া গেলে সমর্থকদের দোষ কোথায়? তাদের চার-ছক্কায় গ্যালারিতে তালির ঝড় উঠে। উল্লাস, উদ্দীপনায় মাততে দেখা যায়।
আর স্বাগতিক দলের জন্য উড়ে আসে দুয়ো ধ্বনি। ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান চললো পুরো ম্যাচ জুড়েই। বিশেষ করে সীমানায় থাকা ক্রিকেটাররা দর্শকদের রোষানলে পড়লেন বেশি। শুধু তা-ই নয়, স্টেডিয়ামের যাওয়া-আসার পথেও সেই সমর্থকরাই ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগানে এলোমেলা করে দেন ক্রিকেটারদের।
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে এসব স্লোগান একেবারেই পছন্দ হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ড্যারেন স্যামির। ক্যারিয়ারে নানা সময় বাংলাদেশে আসায় কিছুটা বাংলা শব্দ তারও জানা। তবে ভুয়া অর্থটা জেনেছেন এবারই। তাইতো তার হৃদয়ে কিছুটা দহনও হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য, “তারা (দর্শকরা) ক্রিকেটারদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছে, সেটা আমার ভালো লাগেনি। আমি শুনেছি তারা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলছে। এর অর্থও আমি জেনেছি। কিন্তু আমি মনে করি না, হোম টিমের দর্শক হিসেবে এমন করা উচিত। কারণ আপনারা তখন সমর্থক। প্রত্যেক ক্রিকেটারই মাঠে আসে তাদের সেরাটা দেওয়ার জন্য। তাই আপনাদের উচিত, তাদের সমর্থন করা।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইবার বিশ্বকাপ জেতানো স্যামি কঠিন সময়ে ক্রিকেটারদের পাশে থাকার কথা বললেন, ‘‘তবুও তারা (দর্শকরা) ভালো। তারা নিজেদের দলকে পারফর্ম করতে দেখতে চায়। তবে যত বেশি সমর্থন ও উৎসাহ দেবেন, তারা তত দূর যেতে পারবে। ক্রিকেটারদের অযথা চাপে ফেলবেন না। ফ্যানদের বলব, তাদের (ক্রিকেটারদের) সঙ্গে সুন্দর আচরণ করুন।”
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন