যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী স্বামীকে বারবার ফোনকল দিচ্ছিলেন ভারতের কুলবিন্দর কর। দুই সপ্তাহ ধরে তিনি যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এতে অনেকটাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

পাঞ্জাব রাজ্যের হোশিয়ারপুর থেকে তিনি জানান, তাঁর স্বামী বেঁচে আছেন না মারা গেছেন, তা নিয়ে তারা চিন্তায় পড়ে যান। পরে তিনি জানতে পারেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নথিপত্রহীন অভিবাসীদের স্বদেশে ফেরত পাঠাচ্ছেন। গত বুধবার যাদের ফেরত পাঠানো হয়, সেই ১০৪ ভারতীয়ের মধ্যে কুলবিন্দরের স্বামী হারবিন্দর সিংও ছিলেন।

আলজাজিরা জানায়, পাহাড়-পর্বত, জঙ্গল, নদী, সাগর-মরুর কঠিন পথ পার হয়ে পাঞ্জাব থেকে হারবিন্দর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছিলেন। নারী-শিশুদের সঙ্গে তাঁকেও যখন ফেরত পাঠানো হয়, তখন হাত ও পা বাঁধা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানে গাদাগাদি অবস্থায় মেঝেতে বসে ৪০ ঘণ্টা তারা এভাবে ছিলেন। বিমানটি পাঞ্জাবের অমৃতসরে অবতরণ করে। তাদের সঙ্গে গুরুতর অপরাধীর মতো আচরণ নিয়ে ভারতজুড়ে ক্ষোভের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে ভারতের বিরোধী রাজনীতিক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের লোকজন নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।

তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতজানু নীতিতে চলছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পার্লামেন্টের সামনে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে প্রতীকী বিক্ষোভ করেন ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী।

আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এর আগে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের আচরণ তাঁর সরকারকে বিব্রত অবস্থায় ফেলেছে। ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ সম্বোধন করেন মোদি। তাহলে এ ধরনের পদক্ষেপ কেন থামাতে পারেননি– এ প্রশ্ন উঠছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, এ দফায় সব মিলিয়ে ৪৮৭ জন নথিপত্রহীন ভারতীয়কে ফেরত পাঠাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আটকদের সঙ্গে যাতে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ না হয়, সেজন্য তারা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছেন। দ্য হিন্দু অনলাইন জানায়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭৫৬ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এ তথ্য দিয়েছেন। সম্প্রতি ১০৪ জনকে ফেরত পাঠানো নিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু নিয়ম থাকে।

ভারতে ফেরত আসা নথিপত্রহীনদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন গুজরাটের। এ রকমই একজন রাজ্যটির ভাদোদারার বাসিন্দা ৩৫ বছরের খুশবু প্যাটেল। মার্কিন সামরিক বিমানে ৪০ ঘণ্টা ভ্রমণের দুঃসহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। তাঁর বড় ভাই বরুণ প্যাটেল বলেন, পুরো ভ্রমণে খুশবু শিকলে বাঁধা অবস্থায় ছিলেন। যে জায়গাটিতে বসা ছিলেন, সেখানে নড়াচড়াও করতে পারেননি। খুশবু জানিয়েছেন, অপরাধী ও সাজাপ্রাপ্তদের মতো তাদের সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ৪০ থেকে ৫০ লাখ রুপি খরচ করে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন।

ভারতীয়দের এভাবে দেশে ফেরার সমালোচনা করে এটাকে ‘বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন কংগ্রেস নেতা মনিকম ঠাকুর। সামাজিক মাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, যেভাবে ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো হয়েছে অপরাধীদের মতো শিকলে বেঁধে, তা অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ফেরত পাঠানো ভারতের জন্য অপমানজনক।

যে অবৈধ পথে ভারতীয়রা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে যান, সেটা ‘ডাংকি’ নামে পরিচিত। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বিনোদ কুমার বলেন, ডাংকি পথে যাওয়ার জন্য তরুণরা তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে সব হারা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষমা পেয়ে কাজে যোগ দিলেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে ক্ষমা করা হয়েছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক হওয়ায় তাঁকে ক্ষমা করে আগের পদ আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালটি) পদে বহাল করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে মুঠোফোনে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমার জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে পূর্বের পদে বহাল করেছেন। আমি কাজে যোগ দিয়েছি।’

গতকাল বুধবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস স্বাক্ষরিত একটি পত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনকালে হাসপাতালের আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালটি) ও সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) ইনসিটু, ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে মহাপরিচালকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয় এবং সেই সঙ্গে ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। তিনি তাঁর অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের কারণে ক্ষমা চেয়ে এবং ভবিষ্যতে এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করবেন না বলে অঙ্গীকার করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিখিত জবাব দাখিল করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর দাখিলকৃত জবাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় বরাবর প্রেরিত প্রতিবেদন সন্তোষজনক হওয়ায় মহাপরিচালকের উদারতা ও মহানুভবতায় ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে ক্ষমা প্রদর্শন করেন এবং তাঁকে পূর্বের কর্মস্থল ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জ পদে পুনর্বহাল রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। সে মোতাবেক তাঁকে ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জের দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হলো। এই আদেশ পত্র জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে।’

আরও পড়ুনস্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ালেন চিকিৎসক, বললেন ‘আমাকে সাসপেন্ড করেন, নো প্রবলেম’০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফর। এ সময় হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটার পরিদর্শনে গিয়ে ডিজি কক্ষের ভেতরে টেবিল থাকার কারণ জানতে চান চিকিৎসকদের কাছে। এ সময় জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ধনদেব চন্দ্র বর্মণ তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়ান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক হেনস্তার নিন্দা ও তিন দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের
  • ‘কলেজ জীবনে ভাবতাম, আমি সুন্দর নই আমার শরীর ঠিকঠাক নেই’
  • নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানালেও সতর্ক থাকার আহ্বান গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের
  • ‘যারা বলে বেড়াচ্ছিল নির্বাচন হবে না, তাদের মুখে চুনকালি পড়ল’
  • নির্বাচন আচরণবিধি অনুসারে মাসুদুজ্জামানের ব্যানার-পোস্টার অপসারণ
  • ডিজির সঙ্গে তর্ক, ক্ষমা চেয়ে দায়িত্বে ফিরলেন সেই চিকিৎসক
  • ক্ষমা পেয়ে কাজে যোগ দিলেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ