এআই হ্যাকাথনে চ্যাম্পিয়ন টিম ‘পরিধি’
Published: 9th, February 2025 GMT
ভিভাসফট এআই হ্যাকাথন মূলত জাতীয় পর্যায়ের একটি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। অংশগ্রহণকারীকে এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কোনো সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান বের করতে হয়। সম্প্রতি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শিক্ষার্থীদের দল ‘পরিধি’। পরিধির পরিধিটা বেশ বড়ই বলতে হয়। নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সদ্য স্নাতকেরা আছেন দলে। সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগের তাহনিক আহমেদ রাইয়ান (দলনেতা), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকাট্রনিকস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আবদুর রহমান, একই বিভাগের সদ্য স্নাতক রায়হান ইসলাম ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের স্নাতক আবদুল্লাহ আল আসিফ। হ্যাকাথনে কেউ কাজ করেছেন জেনারেটিভ এআই দিয়ে এসআইইএম নিরাপত্তা বুদ্ধিমত্তা নিয়ে, আবার কেউবা রিমোট জবের জন্য ভার্চুয়াল ওয়ার্কস্পেস তৈরি করেছেন। এ ছাড়া এআই পাওয়ারড সিকিউরিটি মনিটরিং টুল তৈরি করেও দেখিয়েছেন কেউ।
চমকপ্রদ এসব উদ্ভাবনীয় আইডিয়াগুলোর মধ্যে সেরা সমাধান করে প্রথম স্থান অর্জন করেছে টিম ‘পরিধি’। তাদের আইডিয়া ছিল ‘ইবিপিএফ এবং এআই এজেন্টদের সাহায্যে সিস্টেমের নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি করা’। রানার্সআপ হয়েছে টিম ‘ডিফাইন কোডারস’। এআইর সাহায্যে দ্রুততম সময়ে কীভাবে নির্ভুলভাবে মার্কেট অ্যানালাইসিস করা যায় তার সমস্যা সমাধানের জন্য ‘মার্কেট ফ্লিক এআই’ আইডিয়া দিয়ে এক লাখ টাকা জিতে নেয় এ দলটি।
এ ছাড়া ‘পারসোনালাইজড টিচিং এসিসট্যান্ড ফর
সমস্যা সমাধান করতে পারায় ‘অনারেবল মেনশন’ স্বীকৃতি পায় টিম ‘কোডমেন্টর’।
দেশি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ভিভাসফট লিমিটেডের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘ভিভাসফট এআই হ্যাকাথন ২০২৫’ ৩৭৮টি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান ১০টি টিমের ৩২ জন প্রতিযোগী। হ্যাকাথনের ফাইনালে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন হগার্থ ওয়ার্ল্ডওয়াইডের (বাংলাদেশ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজ ইলাহি, বিকাশ লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট (সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট) নাবিল আহমেদ লিপন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট (রিসার্চ এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) শুভ্র সরকার এবং ভিভাসফট লিমিটেডের মেশিন লার্নিং কনসালট্যান্ট আমিনুল ইসলাম।
ভিভাসফট এআই হ্যাকাথনটি আয়োজন করা হয়েছে বাংলাদেশের তরুণ এআই প্রতিভাদের বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য। তাদের দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং যুগান্তকারী ধারণাগুলো প্রদর্শন করাই এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য বলে জানান ভিভাসফট লিমিটেডের কো-ফাউন্ডার শাফকাত আসিফ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে উৎসাহিত করতে ভিভাসফট লিমিটেড প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ’ভিভাসফট এআই হ্যাকাথন ২০২৫’ আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’ এআই প্রফেশনালসদের কাছ থেকে সাড়া পেলে ভিভাসফট প্রতিবছর এ ধরনের এআই হ্যাকাথন আয়োজন করবে বলেও জানান তিনি। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ ভ সফট ল ম ট ড
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।