বন্ধ থাকা পাটকল ব্যক্তিখাতে চালু হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
Published: 10th, February 2025 GMT
বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘‘দেশের বন্ধ থাকা পাটকল ব্যক্তিখাতে লিজের মাধ্যমে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লিজগ্রহীতা হিসেবে ব্যবসায়ীরা বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলে বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।’’
সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে খুলনায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের দৌলতপুর জুট মিলের উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফকালে একথা বলেন তিনি।
বশিরউদ্দীন বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে কুড়িগ্রামে বন্ধ থাকা সরকারি টেক্সটাইল মিল বেসরকারি খাতে লিজের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে আরো তিনটি মিল লিজ প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকল চালুর ক্ষেত্রে কেবল হাজার কোটি টাকা লোকসান ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রসূ কিছুই হয়নি। তাই সরকারের মালিকানায় থাকা জুট ও টেক্সটাইল মিলগুলো ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেওয়ায় পরিকল্পনা রয়েছে।’’
‘‘দেশে বিদ্যমান সব পাটকল চালু রাখতে বছরে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন পাটের প্রয়োজন কিন্তু দেশে পাটের উৎপাদন কেবল ১২ লাখ মেট্রিক টন। উপরন্তু সারা বিশ্বে বার্ষিক পাটের উৎপাদন মাত্র ২৫ লাখ মেট্রিক টন। সেক্ষেত্রে কেবল পাট দিয়ে এতগুলো প্রতিষ্ঠান চালু রাখা বাস্তবসম্মত নয়। তাই পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে লিজ প্রদানের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে পাটভিত্তিক শিল্পের পাশাপাশি অন্য শিল্প কারখানা স্থাপনের সুযোগ রাখা হচ্ছে’’- যোগ করেন তিনি।
উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘‘খুলনার দৌলতপুর জুট মিলটি বেসরকারি উদ্যোগে চালু হওয়ায় প্রায় সাত শ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এখানে আরো তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’’
এ ধরনের সফল উদ্যোগ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পথ খুলে যাবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘মিলটিতে বেসরকারি উদ্যোগে পাটপণ্য এবং জুতোর উৎপাদন একসাথে চালু রেখে ইতিবাচক ও লাভজনক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের উদ্ভাবনী উদ্যোগ সরকারিভাবে বাস্তবায়ন ততটা ফলপ্রসূ হয় না।’’
উপদেষ্টা বলেন, ‘‘বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কারসাজির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সিন্ডিকেট সরকারের চেয়ে শক্তিশালী নয়। দেশে বিভিন্ন পণ্যের মজুত ও সরবরাহের ওপর সরকারের নজরদারি রয়েছে। এই মুহূর্তে ভোজ্যতেলের বাজারে যে সাময়িক সংকট রয়েছে, তা অল্প কয়েকদিনের মধ্যে কেটে যাবে।’’
পরিদর্শনকালে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও দৌলতপুর জুট মিলের কর্মকর্তার উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ২৪ কোটি টাকার পানি প্রকল্প
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বাসিন্দাদের সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য প্রায় ২৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। কিন্তু প্রকল্প শেষ হওয়ার বহু বছর পরও পৌরবাসীর ঘরে পৌঁছায়নি এক ফোঁটা পানিও। নিন্মমানের কাজ, অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে মাটির নিচে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে পুরো প্রকল্প।
২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় পর্যায়ের পানি সরবরাহ প্রকল্পের অংশ হিসেবে শ্রীপুর পৌরসভায় কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ে ২০২১ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা টেনে নেয় ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো ও ১০টি পাম্প হাউস নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে পাইপলাইনের জন্য বরাদ্দ হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা এবং পাম্প হাউসের জন্য ৮ কোটি টাকারও বেশি। মনিরা ট্রেডার্স পাইপলাইন ও জিলানী ট্রেডার্স পাম্প হাউস নির্মাণের কাজ করে। তদারকির দায়িত্বে ছিল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
কাগজে-কলমে কাজ শেষ দেখালেও বাস্তবে অধিকাংশ পাইপলাইন ভেঙে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ১০টির মধ্যে মাত্র ৯টি পাম্প হস্তান্তর করা হলেও সেগুলোও বিকল হয়ে আছে। একটি পাম্প হাউস এখনো নির্মাণাধীন।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “এত কোটি টাকা খরচ হলো, কিন্তু আমাদের ঘরে একদিনও পানি আসেনি। পাইপলাইন মাটির নিচে পচে গেছে, বাসাবাড়ির গ্যাস লাইন কিংবা সড়ক সংস্কারের সময়ও এগুলো কেটে একাকার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি আসলে টাকার লুটপাট ছাড়া কিছু নয়।”
৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরেক বাসিন্দা খোরশেদ আলমের ক্ষোভ, “২৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, অথচ একটি ফোঁটা পানিও মানুষ পায়নি। নিম্নমানের পাইপ বসানো হয়েছিল, সেগুলো সব ভেঙে গেছে। প্রকল্প চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।”
প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে বলে দেখানো হলেও, বাস্তবে শ্রীপুর পৌরবাসীর ঘরে এখনো পৌঁছায়নি পানি। কোটি কোটি টাকা খরচ করেও শুধু মাটির নিচে চাপা পড়েছে স্বপ্নের এই পানি সরবরাহ প্রকল্প। নাগরিকরা বলছেন, সরকারের মূল্যবান অর্থ অপচয়ের এমন নজির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন।
শ্রীপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন) আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “আমি দায়িত্বে থাকলেও শুরুতে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে সত্যি বলতে, নিম্নমানের পাইপ ব্যবহার হয়েছে। ১৫০০ সংযোগ দেওয়া হয়েছিল, এখন একটিও চালু নেই।”
গাজীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, “২০২৩ সালে কাজ পৌরসভার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজের মান খারাপ হলে তারা কেন গ্রহণ করলো?”
পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাহেদ আখতার বলেন, “কাজ বুঝে নেওয়ার পরও বাস্তবে পানি সরবরাহ চালু করা যায়নি। পাইপ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকল্প চালু হবে কিনা তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।”
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক সজীব আহমেদ বলেন, “প্রকল্প হস্তান্তর হয়েছে আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই। আমি আসার পর থেকে পুরো প্রকল্প বিকল অবস্থায় রয়েছে। চালু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।”
ঢাকা/রফিক/এস