এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে ছিটকে গেলেন স্টার্ক
Published: 12th, February 2025 GMT
ভাগ্যিস ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্কোয়াড বদলের সুযোগ রেখেছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। তা না হলে, কি হতো একবার ভাবুন দেখি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য দল ঘোষণার পর সেই দল থেকে গুণে গুনে ৫ জন ক্রিকেটার ছিটকে গেলেন! সেই দলভুক্ত সব শেষ নামটি গতিদানব মিচেল স্টার্ক। ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া দলের প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন স্টার্ক। এই টুর্নামেন্টের ঘোষিত স্কোয়াড থেকে চোটের জন্য সর্বপ্রথম ছিটকে গিয়েছিলেন অলরাউন্ডার মিচেল মার্শ। এরপর সেই পথ অনুসরণ করেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স এবং আরেক পেসার জশ হ্যাজলউড। এসবের মাঝে হঠাৎ করেই ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দেম অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিস। সব মিলিয়ে টালমাটাল অবস্থা অজিদের। এই চোটের মিছিলে অস্ট্রেলিয়া তাদের দলের মূল পেসারদের কাউকেই পাচ্ছে না এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে।
আরো পড়ুন:
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০০২: দুইদিনেও হয়নি শিরোপার ফয়সালা
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের ম্যাচগুলোতে আম্পায়ার যারা
স্টার্ক কেন খেলবেন না, সেই ব্যাপারে পরিষ্কার করে জানাইনি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি বলেন, আমরা মিচের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি সর্বজনবিদিত। তার ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খেলে যাওয়া এবং দেশের হয়ে খেলার জন্য ক্যারিয়ারের অন্যান্য সুযোগ ত্যাগ করাও প্রশংসনীয়। তার অনুপস্থিতি অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য একটি ধাক্কা, তবে এটি অন্য কাউকে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ দিচ্ছে।”
এদিকে এই ৫ ক্রিকেটারের বদলি হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে এসেছেন, শন অ্যাবট, বেন ডোয়ারশিস, জ্যাক ফ্রেজার–ম্যাগার্ক, স্পেনসার জনসন ও তানভীর সাংহা। আর অনুমেয় ভাবেই এই দলটির নেত্যৃত্বের ভার পড়েছে স্টিভেন স্মিথের উপর।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির অস্ট্রেলিয়া দল:
স্টিভ স্মিথ (অধিনায়ক) অ্যালেক্স ক্যারি, নাথান এলিস, অ্যারন হার্ডি, ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিস, মারনাস লাবুশেন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ম্যাট শর্ট, অ্যাডাম জাম্পা, শন অ্যাবট, বেন ডোয়ারশিস , জ্যাক ফ্রেজার–ম্যাগার্ক, স্পেনসার জনসন ও তানভীর সাংহা।
২২ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে মাঠের লড়াইয়ে নামবে টিম অস্ট্রেলিয়া। তবে তার আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে অজিরা; যার প্রথমটি এখন চলছে।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।