জাতীয় দলের সতীর্থকে স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ হলেন সোহেলী আক্তার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ক্রিকেটে দুর্নীতি প্রতিরোধের পাঁচটি ধারা ভঙ্গের অভিযোগে এ নিষেধাজ্ঞা।
২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত নারী টি২০ বিশ্বকাপ চলাকালে বাংলাদেশ অলরাউন্ডার লতা মণ্ডলকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে পেস বল ডেলিভারির পর হিট উইকেট (আউট) হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল লতাকে। বিনিময়ে জুয়াড়ির কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা পাইয়ে দিতে চেয়েছিলেন সোহেলী।
বান্ধবীর প্রস্তাবে রাজি না হয়ে লতা উল্টো রিপোর্ট করেন আইসিসি দুর্নীতি দমন বিভাগ (এসিইউ) কর্মকর্তার কাছে। বিশ্বকাপ শেষে ঢাকায় সোহেলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এসিইউ কর্মকর্তা। সে সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও এসিইউ তদন্ত দলের অনুসন্ধানে দোষী প্রমাণিত হন তিনি। শেষ পর্যন্ত নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেওয়ায় পাঁচ বছর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সাল থেকে কার্যকর হবে এ শাস্তি।
২০১৩ সালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় সোহেলীর। তিনি শেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর নারী এশিয়া কাপে। ক্যারিয়ারে দুটি ওয়ানডে ও ১৩টি আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ফিক্সিংয়ে জড়িত হওয়ার আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন।
আইসিসি জানায়, ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের ম্যাচ সামনে রেখে একজন ক্রিকেটারের সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন সোহেলী। ভয়েস মেসেজ দিয়ে সে খেলোয়াড়কে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়াতে চেষ্টা করেন। মূলত লতা রাজি না হওয়ায় জোরাজুরি করেছিলেন সোহেলী। ২০ লাখেরও বেশি টাকা পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। রাজি হলে মেসেঞ্জার থেকে সব প্রমাণ মুছে ফেলার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
যদিও অভিযোগ ওঠার পর সোহেলী সমকালকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা যে ফিক্সিংয়ে জড়িত নন, তা প্রমাণ করতে তাঁর চাচাতো ভাইয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলন। এসিইউ কর্মকর্তাকেও সাক্ষাৎকারে একই কথা বলেছিলেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, তথ্য গোপন, তদন্তে বিলম্ব করার অভিযোগও আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। পাঁচটি অভিযোগ মেনে নেওয়ায় শুনানির প্রয়োজন হয়নি বলে জানায় আইসিসি। আনীত অভিযোগের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে হেরে গেলে আজীবন নিষিদ্ধ হওয়ার শঙ্কা ছিল।
ছেলেদের পর ফিক্সিং ইস্যুতে কলঙ্কিত হলো মেয়েদের ক্রিকেটও। কলঙ্কের সে দাগ লাগালেন সোহেলী। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের কাছে বার্তা গেল নারী ক্রিকেটারকেও নজরদারিতে রাখতে হবে বিসিবিকে। ছেলেদের মতো মেয়েদের ঘরোয়া ক্রিকেটেও রাখতে হবে দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্মকর্তা।
ফিক্সিংয়ের অপরাধে বাংলাদেশে প্রথম নিষিদ্ধ হন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০১৩ সালের বিপিএলে চট্টগ্রামে স্পট ফিক্সিং করেন তিনি। ২০১৯ সালে সাকিব আল হাসান এক বছর নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার তথ্য গোপন করে। টি১০ লিগে ৭৫০ ডলারের বেশি মূল্যের মোবাইল ফোন নেওয়ার অপরাধে নিষিদ্ধ হয়েছেন নাসির হোসেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইস স
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের বেতন বাড়াল বিসিবি
জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটারদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আজ মিরপুরে বিসিবি পরিচালকদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এত দিন ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা মেয়েরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেতেন। তাঁদের বেতন ৪০ হাজার টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটাররা পেতেন ১ লাখ টাকা করে বেতন। তাঁরা এখন থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বেতন পাবেন।
‘সি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটারদের বেতন ৭০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে আর ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ৬০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া জাতীয় দলের অধিনায়কদের জন্য ৩০ হাজার ও সহ-অধিনায়কদের জন্য ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া নারী ক্রিকেটারদের নতুন চুক্তিতে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আছেন তিন ক্রিকেটার—নিগার সুলতানা, নাহিদা আক্তার ও শারমিন আক্তার। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আছেন ফারাজনা হক, রিতু মনি, ফাহিমা খাতুন, মারুফা আক্তার, রাবেয়া খান ও সোবহানা মোস্তারি। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আছেন স্বর্ণা আক্তার।
‘ডি’ ক্যাটাগরিতে আছেন সুমাইয়া আক্তারর, ফারিহা ইসলাম, রুবাইয়া হায়দার, সানজিদা আক্তার, নিশিতা আক্তার। এই চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের কেউ জাতীয় দলে এলে মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন পাবেন।