আগের পর্বে আমরা রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব কাজ করতেন, তার কিছু কিছু আলোচনা করেছি। আরও কিছু আলোচনা এই পর্বে করব।

৬. আবু হুরায়রা (রা.)–র বিবরণে আছে যে রাসুল (সা.) বলেন,  তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পেছনের অংশে তিনটি গেরো দেয়। প্রতি গেরোতে সে এই বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাকো। এর পর সে যদি জেগে উঠে আল্লাহকে স্মরণ করে তাহলে একটি গেরো খুলে যায়, এরপর অজু করলে আরেকটি গেরো খুলে যায়। তারপর নামাজ আদায় করলে আরও একটি গেরো খুলে যায়। তখন তার ভোর হয়, উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। নইলে সে সকালে জাগে কলুষ কালিমা ও আলস্য নিয়ে। (বুখারি, হাদিস: ১,১৪২; মুসলিম, হাদিস: ৭৬৩)

৭.

অজুর শুরুতে রাসুল (সা.) বিসমিল্লাহ পড়তেন। রাসুল (সা.) বলেন, অজুর শুরুতে যে ব্যক্তি আল্লাহর নাম না নেবে, তার অজু পরিপূর্ণ হবে না। (তিরমিজি, হাদিস: ২৫)

আরও পড়ুনআলহামদুলিল্লাহ সর্বোত্তম দোয়া১০ আগস্ট ২০২৩

রাসুল (সা.) অজুর মধ্যখানে একটি দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো: আল্লাহুমমাগফিরলি জানবি ওয়া ওয়াসসিয়লি ফি দারি ওয়া বারিকলি ফি রিজকি।

এর অর্থ: হে আল্লাহ! আমার গোনাহগুলো ক্ষমা করুন, আমার ঘর প্রশস্ত করে দিন, আমার রিজিক প্রশস্ত করে দিন। (নাসায়ি, হাদিস: ৯,৯০৮)

রাসুল (সা.) অজুর শেষেও একটি দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো: আশহাদু আল্লাইলাহা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদন আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। আল্লাহুমাজ আলনি মিনাত তাওওয়াবিনা ওয়াজাআলনি মিনাল মুতাতাহহিরিন।

এর অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্র বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।

আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনে আছে জীবন ও মৃত্যুর কথা১০ আগস্ট ২০২৩

রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও সম্পূর্ণরূপে অজু করে এই দোয়াটি পড়বে—আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু; তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম, হাদিস: ২৩৪)

৮. শেষ রাতে গোসলের প্রয়োজন হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তা করতেন। কখনও কখনও ফজরের নামাজের আগেও গোসল সেরে নিতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, (একবার) নামাজের ইকামাত দেওয়া হয়ে গেছে, লোকেরা তাদের কাতার সোজা করে নিয়েছে—আল্লাহর রাসুল (সা.) বেরিয়ে এলেন এবং সামনে এগিয়ে গেলেন। তখন তাঁর ওপর গোসল ফরজ ছিল। তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় অপেক্ষা করো। অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং গোসল করলেন। এরপর আবার ফিরে এলেন—তখন তাঁর মাথা থেকে পানি টপ টপ (ফোঁটায় ফোঁটায়) করে ঝরছিল। এরপর সবাইকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। (বুখারি, হাদিস: ৬৪০; মুসলিম, হাদিস: ৬০৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৫৪১)

৯. ইবাদতের পরিবেশ তৈরি করতে রাসুল (সা.) কিছুক্ষণ দোয়া ও জিকির করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, জেগে ওঠার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) দশবার করে আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করতেন এবং দশবার বলতেন, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে হেদায়াত দান করুন এবং আমাকে উত্তম রিজিক দান করুন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৫,১০২; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৬৩) 

১০. রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হে আবদুল্লাহ! কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জুদের নামাজ) কখনো ছেড়ো না। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) তা কখনো ছাড়েননি। কখনো অসুস্থতা বা দুর্বলতা বোধ করলে বসে আদায় করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ১৩০৯)

১১. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাতে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করলাম। তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন—আমি একটি মন্দ কাজের ইচ্ছা করেছিলাম। (আবু ওয়াইল রহ. বলেন) আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কী ইচ্ছে করেছিলেন? তিনি বললেন, ইচ্ছে করেছিলাম—বসে পড়ি এবং আল্লাহর রাসুলের ইক্তিদা ছেড়ে দেই। (বুখারি, হাদিস: ১১৩৫)

আরও পড়ুনসালাম এল যেভাবে১০ আগস্ট ২০২৩

উরওয়াহ (রহ.) বর্ণনা করেছেন, আয়েশা (রা.) আমাকে জানিয়েছেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) (তাহাজ্জুদে) স্বাভাবিকভাবে এগারো রাকাত নামাজ আদায় করতেন। সে নামাজে তিনি এক একটি সিজদা এত পরিমাণ দীর্ঘ করতেন—তোমাদের কেউ সিজদাহ থেকে তাঁর মাথা তোলার আগে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারত। (বুখারি, হাদিস: ১১২৩)

হুজাইফা (রা.) বর্ণনা করেছেন, (দীর্ঘ হাদিসে রাতের নামাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি রুকু ও সিজদা সম্পর্কে বলেন) অতঃপর তিনি রুকু করলেন। রুকুতে তিনি বলতে থাকলেন, সুবহা-না রব্বিয়াল আজিম (আমার মহান প্রভু পবিত্র, আমি তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি)। তার রুকু কিয়ামের (দাঁড়ানো অবস্থার) মতোই দীর্ঘ ছিল। এরপর সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ (আল্লাহ শুনে থাকেন যে তার প্রশংসা করে) বললেন। এরপর যতক্ষণ সময় রুকু করেছিলেন প্রায় ততক্ষণ সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলেন। এরপর সিজদা করলেন। সিজদাতে তিনি বললেন, সুবহা-না রব্বিয়াল আলা (মহান সুউচ্চ সত্তা আমার প্রভু পবিত্র, আমি তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি)। তার এ সিজদাও প্রায় কিয়ামের (দাঁড়ানো অবস্থার) সময়ের মতো দীর্ঘায়িত হলো। (মুসলিম, হাদিস: ৭৭২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩,৩৬৭)

আরও পড়ুনঅকালমৃত ও গর্ভপাত হয়ে যাওয়া শিশুরা হবে নাজাতের উপায়০৮ আগস্ট ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন কর ছ ল আল ল হ করল ন আগস ট বলল ন করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

টাকার জন্য দেশে ছেড়েছি, এখন টাকা খরচের সময় নেই: পিয়া বিপাশা

লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে পা রাখেন পিয়া বিপাশা। এরপর অভিনয় করেছেন মিউজিক ভিডিও, নাটক ও সিনেমায়। কিন্তু হুট করেই নাই হয়ে গেলেন। পরে জানা গেল অভিনেত্রী আমেরিকায়। গেল পাঁচ বছর সেখানেই বাস করছেন তিনি। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রবাসজীবনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

পিয়া বিপাশা জানান, একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে তাঁর প্রেম ও ভালোবাসা তৈরি হয়। তারপর তাঁরা বিয়ে করেন। দুজনে মিলে বিয়ে করলেও আনুষ্ঠানিকতা সারেননি। চলতি বছরের শেষ দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেওয়ার ইচ্ছা।

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘বাংলাদেশে ভালো লাগত না। কারণ, লবিং ছাড়া কাজ হতো না। ভালো একটা সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর হয়নি। এরপর আমার মিডিয়ায় কাজ করার ইচ্ছাই নষ্ট হয়ে যায়। আমি আসলে কাজ করতে চেয়েছিলাম টাকা কামানোর জন্য। কাজ না করতে পারলে টাকা কামাব কী করে। তাই সিদ্ধান্ত নিই অন্য কিছু করার।’

বিপাশার কথায়, ‘টাকা রোজগারের জন্য আমি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেছিলাম। কারণ, আমার একটা মেয়ে ছিল। মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকার বিষয় ছিল। পরে দেখলাম, যেভাবে কাজ হয়, আমাকে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমেরিকায় চলে আসার। এখানে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। অনেক টাকাও আয় করছি।’

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘সত্যি বলতে এখন আমার এমন অবস্থা, টাকা ইনকাম না করলেও হয়।  আমার এখন আর কোনো স্বপ্ন নেই। যা চেয়েছি, গত পাঁচ বছরে সবই পেয়েছি। টাকাপয়সা, সুন্দর জীবন, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ভালো স্বামী—সবই আমার হয়েছে। টাকা নিয়ে এখন কোনো চিন্তা নেই আমার—যা আয় করি, তা ব্যয় করার সময় পাই না।’ 

পিয়া বিপাশা জানান, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্যের যেসব পোস্ট করেন, তার জন্য বেশ ভালো সম্মানী পান। তাঁর দাবি, এই সম্মানী কখনো দুই হাজার ডলার, আবার কখনো তিন হাজার ডলারের মধ্যে।

২০১৩ সালে ‘দ্বিতীয় মাত্র’ নাটকে তাহসান খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। ছোটবেলায় রূপকথার বই পড়তে পছন্দ করতেন। বই পড়ার সময় গল্পের নায়িকার চরিত্রে নিজেকে কল্পনাও করতেন। বড় পর্দায়ও অভিনয় করেছিলেন। ‘রুদ্র: দ্য গ্যাংস্টার’ নামের সেই ছবি মুক্তি পায়। এরপর ‘রাজনীতি’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। পরে সেই ছবিতে পিয়া বিপাশার পরিবর্তে অপু বিশ্বাস অভিনয় করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রযোজক তার সঙ্গে রাত কাটাতে বলেন: অঞ্জনা
  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট, মিরাজ ধন্যবাদ দিলেন ৬ জনকে
  • পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার
  • ঢাকায় চালান পৌঁছে প্রতি মাসে পান ৬ লাখ টাকা
  • ১৭ মাস পর দেশের মাটিতে টেস্ট জয় বাংলাদেশের
  • নদীতে মিলল স্কুলছাত্রের লাশ, চার সহপাঠী আটক
  • টাকার জন্য দেশে ছেড়েছি, এখন টাকা খরচের সময় নেই: পিয়া বিপাশা