রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন
Published: 13th, February 2025 GMT
আগের পর্বে আমরা রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব কাজ করতেন, তার কিছু কিছু আলোচনা করেছি। আরও কিছু আলোচনা এই পর্বে করব।
৬. আবু হুরায়রা (রা.)–র বিবরণে আছে যে রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পেছনের অংশে তিনটি গেরো দেয়। প্রতি গেরোতে সে এই বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাকো। এর পর সে যদি জেগে উঠে আল্লাহকে স্মরণ করে তাহলে একটি গেরো খুলে যায়, এরপর অজু করলে আরেকটি গেরো খুলে যায়। তারপর নামাজ আদায় করলে আরও একটি গেরো খুলে যায়। তখন তার ভোর হয়, উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। নইলে সে সকালে জাগে কলুষ কালিমা ও আলস্য নিয়ে। (বুখারি, হাদিস: ১,১৪২; মুসলিম, হাদিস: ৭৬৩)
৭.
রাসুল (সা.) অজুর মধ্যখানে একটি দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো: আল্লাহুমমাগফিরলি জানবি ওয়া ওয়াসসিয়লি ফি দারি ওয়া বারিকলি ফি রিজকি।
এর অর্থ: হে আল্লাহ! আমার গোনাহগুলো ক্ষমা করুন, আমার ঘর প্রশস্ত করে দিন, আমার রিজিক প্রশস্ত করে দিন। (নাসায়ি, হাদিস: ৯,৯০৮)
রাসুল (সা.) অজুর শেষেও একটি দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো: আশহাদু আল্লাইলাহা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদন আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। আল্লাহুমাজ আলনি মিনাত তাওওয়াবিনা ওয়াজাআলনি মিনাল মুতাতাহহিরিন।
এর অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্র বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনে আছে জীবন ও মৃত্যুর কথা১০ আগস্ট ২০২৩রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও সম্পূর্ণরূপে অজু করে এই দোয়াটি পড়বে—আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু; তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম, হাদিস: ২৩৪)
৮. শেষ রাতে গোসলের প্রয়োজন হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তা করতেন। কখনও কখনও ফজরের নামাজের আগেও গোসল সেরে নিতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, (একবার) নামাজের ইকামাত দেওয়া হয়ে গেছে, লোকেরা তাদের কাতার সোজা করে নিয়েছে—আল্লাহর রাসুল (সা.) বেরিয়ে এলেন এবং সামনে এগিয়ে গেলেন। তখন তাঁর ওপর গোসল ফরজ ছিল। তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় অপেক্ষা করো। অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং গোসল করলেন। এরপর আবার ফিরে এলেন—তখন তাঁর মাথা থেকে পানি টপ টপ (ফোঁটায় ফোঁটায়) করে ঝরছিল। এরপর সবাইকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। (বুখারি, হাদিস: ৬৪০; মুসলিম, হাদিস: ৬০৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৫৪১)
৯. ইবাদতের পরিবেশ তৈরি করতে রাসুল (সা.) কিছুক্ষণ দোয়া ও জিকির করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, জেগে ওঠার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) দশবার করে আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করতেন এবং দশবার বলতেন, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে হেদায়াত দান করুন এবং আমাকে উত্তম রিজিক দান করুন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৫,১০২; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৬৩)
১০. রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হে আবদুল্লাহ! কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জুদের নামাজ) কখনো ছেড়ো না। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) তা কখনো ছাড়েননি। কখনো অসুস্থতা বা দুর্বলতা বোধ করলে বসে আদায় করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ১৩০৯)
১১. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাতে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করলাম। তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন—আমি একটি মন্দ কাজের ইচ্ছা করেছিলাম। (আবু ওয়াইল রহ. বলেন) আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কী ইচ্ছে করেছিলেন? তিনি বললেন, ইচ্ছে করেছিলাম—বসে পড়ি এবং আল্লাহর রাসুলের ইক্তিদা ছেড়ে দেই। (বুখারি, হাদিস: ১১৩৫)
আরও পড়ুনসালাম এল যেভাবে১০ আগস্ট ২০২৩উরওয়াহ (রহ.) বর্ণনা করেছেন, আয়েশা (রা.) আমাকে জানিয়েছেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) (তাহাজ্জুদে) স্বাভাবিকভাবে এগারো রাকাত নামাজ আদায় করতেন। সে নামাজে তিনি এক একটি সিজদা এত পরিমাণ দীর্ঘ করতেন—তোমাদের কেউ সিজদাহ থেকে তাঁর মাথা তোলার আগে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারত। (বুখারি, হাদিস: ১১২৩)
হুজাইফা (রা.) বর্ণনা করেছেন, (দীর্ঘ হাদিসে রাতের নামাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি রুকু ও সিজদা সম্পর্কে বলেন) অতঃপর তিনি রুকু করলেন। রুকুতে তিনি বলতে থাকলেন, সুবহা-না রব্বিয়াল আজিম (আমার মহান প্রভু পবিত্র, আমি তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি)। তার রুকু কিয়ামের (দাঁড়ানো অবস্থার) মতোই দীর্ঘ ছিল। এরপর সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ (আল্লাহ শুনে থাকেন যে তার প্রশংসা করে) বললেন। এরপর যতক্ষণ সময় রুকু করেছিলেন প্রায় ততক্ষণ সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলেন। এরপর সিজদা করলেন। সিজদাতে তিনি বললেন, সুবহা-না রব্বিয়াল আলা (মহান সুউচ্চ সত্তা আমার প্রভু পবিত্র, আমি তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি)। তার এ সিজদাও প্রায় কিয়ামের (দাঁড়ানো অবস্থার) সময়ের মতো দীর্ঘায়িত হলো। (মুসলিম, হাদিস: ৭৭২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩,৩৬৭)
আরও পড়ুনঅকালমৃত ও গর্ভপাত হয়ে যাওয়া শিশুরা হবে নাজাতের উপায়০৮ আগস্ট ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ন কর ছ ল আল ল হ করল ন আগস ট বলল ন করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
ব্যক্তিগত সম্পদ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসির এক সাংবাদিকের ওপর ভীষণ চটে যান। ওই সাংবাদিকের কারণে ‘অস্ট্রেলিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে’ বলে সতর্ক করেন তিনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে ওই সাংবাদিকের ব্যাপারে নালিশ করারও হুমকি দেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের লনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। এবিসির সাংবাদিক জন লায়ন্সও তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন। লায়ন্স এবিসিতে প্রচারিত ফোর কর্নারস অনুষ্ঠানের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।
গতকাল লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কতটা ধনী হয়েছেন? তিনি আরও উল্লেখ করেন, ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে অবস্থান করা সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না।’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন নামে তাঁর যে পারিবারিক ব্যবসাটি আছে, সেটি এখন তাঁর সন্তানেরা পরিচালনা করেন।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বেশির ভাগ ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।এরপর লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’
এরপর লায়ন্সকে ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, তিনি (লায়ন্স) কোথা থেকে এসেছেন।
এরপর ট্রাম্প চটে গিয়ে বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে লায়ন্স ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি’ করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলতে থাকেন, ‘আমার মতে, আপনি এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্ষতি করছেন। আর তারা আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। আপনি জানেন, আপনার নেতা (অ্যান্থনি আলবানিজ) শিগগিরই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। আমি তাঁকে আপনার ব্যাপারে বলব। আপনি খুব খারাপ ভঙ্গিতে কথা বলছেন। আপনি আরও ভালোভাবে কথা বলুন।’
সাংবাদিক লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’এরপর লায়ন্স আবারও কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘চুপ করুন’।
গত জুনে কানাডায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রথমবারের মতো ট্রাম্প ও আলবানিজের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে হঠাৎই তা বাতিল হয়ে যায়। এর পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন আলবানিজ।
আরও পড়ুনট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডার পর কী বললেন স্টারমার ও আলবানিজ০১ মার্চ ২০২৫সম্প্রতি আলবানিজ বলেছেন, নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সম্মেলন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানকালে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমাদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হবে। আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার রাতে তিনি একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিভিন্ন ফোরামে আমাদের দেখা হবে। এটা সম্মেলনের মৌসুম।’
ট্রাম্পের সঙ্গে আলবানিজের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে পেন্টাগনের অকাস পারমাণবিক সাবমেরিন চুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বাড়াতে ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার কাছে যে দাবি জানিয়েছেন, তা নিয়ে পর্যালোচনা।