কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে উড়োচিঠি দিয়ে রেজাউল ইসলাম (৫৭) নামের এক গামছা বিক্রেতা হকারের কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার মধ্যে টাকা না দিলে বা পুলিশকে জানালে হকারসহ তাঁর দুই নাতিকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

হুমকি পাওয়া রেজাউল ইসলাম উপজেলার সদকী ইউনিয়নের বাটিকামারা এলাকার আবদুল গফুরের ছেলে। তিনি ফুটপাতে হকারি করে গামছা বিক্রি করেন। এ ঘটনায় রেজাউল দুপুরে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে দুই মাসে উড়োচিঠিতে তিনবার চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।

লিখিত অভিযোগে রেজাউল উল্লেখ করেন, তিনি একজন ছোটখাটো ফুটপাতের গামছা ব্যবসায়ী। বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে কে বা কারা তার বাড়ির জানালা ভেঙে দেয়। জানালা ভাঙার শব্দে ঘুম ভেঙে বাইরে এসে দেখেন, অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে লেখা একটি চিঠি। চিঠিতে অজ্ঞাত ব্যক্তি তাঁর কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেছেন। রাত ১২টার মধ্যে টাকা না দিলে দুই নাতিকে হত্যা করবে। বিষয়টি পুলিশ বা কাউকে জানালে তাঁকেও গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়ক থেকে ২০০ মিটার দূরে রেজাউলের চার কক্ষবিশিষ্ট টিনশেডের আধা পাকা ঘর। সেখানে স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূ, মেয়ে, দুই নাতিসহ সাতজনের বসবাস। ঘরের একটি কাচের জানালা ভাঙা।

রেজাউলের মেয়ে রিমা খাতুন বলেন, ‘কারও সাথে শত্রুতা নেই। তবু কে বা কারা চিঠি দিয়ে চাঁদা দাবি করে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। গত দুই মাসে তিনবার এ ঘটনা ঘটেছে। এতে আমরা আতঙ্কিত।’

দুর্বৃত্তের ফেলে যাওয়া চিঠিতে ভাঙা ভাঙা হাতের লেখা হয়েছে, ‘ভয় নাই আজ মারবো নানে। চলে গেলাম। তোর দুই নাতি ছেলের মাথার দাম ধরা হয়েছে তিন লাখ টাকা। আগামীকাল রাত ১২টার মধ্যে তিন লাখ টাকা নিয়ে চলে আসবি। আর এটা আমার এলাকা। তাই পুলিশ বা অন্য কোনো ঝামেলা না করলে তোর ভালো হবে। আর যদি কিছু করিস। তাহলে রেজাউল তুই বাড়ির বাইরে আসলে আগে তোকে পাখির মতো গুলি করে মারব মনে রাখিস। আজ গুলি করে মারতে পারতাম। কিন্তু মারিনি একটা সুযোগ দিলাম। মনে রাখিস, আগামীকাল রাত ১২টার মধ্যে টাকা নিয়ে চলে আসবি।’

ভুক্তভোগী রেজাউল বলেন, ‘কারা কেন এমন করছে জানি না। পরিবার নিয়ে খুব ভয়ে আছি। বিচার চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। এর আগে ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম।’

উড়োচিঠিতে চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকির বিষয়ে লিখিত অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলা যাবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনীতিকেরা পেশাদার পুলিশ চাননি, এখনই সংস্কার জরুরি

জনগণ প্রভাবমুক্ত ও পেশাদার পুলিশ চাইলেও রাজনৈতিক নেতারা কখনো তা চাননি। ১৯৩০ সাল থেকে দমন করাই ছিল পুলিশের কাজ। এ সংস্কৃতি বদলাতে হবে, পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এ জন্য পুলিশ সংস্কারের এখনই উপযুক্ত সময়।

পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ অডিটরিয়ামে ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বিশিষ্ট নাগরিকদের বক্তব্যে এমন মতামত উঠে এসেছে। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সব মহানগর পুলিশের কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপাররা উপস্থিত ছিলেন।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের সঙ্গে পুলিশ সপ্তাহে এ ধরনের মতবিনিময়ের ভাবনাটি নতুন। পুলিশ-নাগরিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, কেমন পুলিশ তাঁরা চান—এই বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে জানার জন্যই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। মতবিনিময় সভায় শিক্ষক, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা, লেখক, খেলোয়াড়, সংগীতশিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক, শ্রমিকনেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানের শেষ দিনে নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সর্বশেষ বিকেলে আইজিপির সঙ্গে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভা হয়।

নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পুলিশের সাবেক দুজন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বক্তব্য দেন। তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচিত পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া। পুলিশকে একটি দানবীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। পুলিশ সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি দরকার।

নুরুল হুদা আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে রাজনীতিবিদেরা সবকিছুর পরিবর্তন করলেন কিন্তু দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন পরিবর্তন করলেন না। অথচ সেগুলো যুগের দাবি ছিল। এর মানে হলো তখনো রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছিল না। তিনি বলেন, ‘এই রাজনৈতিক সদিচ্ছা আমরা একাত্তরেও দেখিনি। আমাদের যে সংবিধান আছে, সেটি অপারেশনাল করতে হলে যেসব রুলস-রেগুলেশনগুলো পরিবর্তন করা দরকার ছিল, সেগুলো আমরা করলাম না। এর মানে আমাদের কথায় বৈপরীত্য রয়ে গেছে। রাজনৈতিক নেতারা পুলিশকে যথাযথভাবে পেশাদার করতে চাননি।’

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, পুলিশ যে একরকম অদ্ভুত অবস্থায় আছে, তাদের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে, এর কারণ অনুসন্ধানের মতো উদার চিন্তা থাকা উচিত। পুলিশ দলীয় পুলিশ হয়ে যায়, সেটা তো বাহ্যিক। কিন্তু ভেতরে সমস্যা আছে।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, যাকে রাষ্ট্র বলা হয়, তার একটি শাখা হলো বলপ্রয়োগ। পুলিশ যেহেতু এই বলপ্রয়োগের কাজটি করে, সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই তাদের এ কাজটি জনপ্রিয় নয়। তবে পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যত রাষ্ট্র ছিল বা আছে, সব কটিতেই পুলিশ লাগে। পুলিশ কথার মধ্যেই রাষ্ট্র কথাটা লুকিয়ে আছে।

বিচারব্যবস্থার কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের যে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা, সেখানে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করলে সেটা আদালতের হাতে চলে যায়। প্রায়ই আমরা পুলিশের থেকে শুনেছি, আমাদের দেশের ফৌজদারি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা যায় না। আদালত জামিন দিয়ে দেন, অপরাধী মুক্ত হয়ে যায়। কোনো ক্ষেত্রে নিরপরাধ শাস্তি পায়, অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও এটা বাস্তবে প্রয়োগ হয় না।

মতবিনিময় সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন লেখক ও গবেষক সলিমুল্লাহ খান। ঢাকা, ১ মে

সম্পর্কিত নিবন্ধ