ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলবে: আলী রীয়াজ
Published: 15th, February 2025 GMT
সংস্কারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের লক্ষ্য দ্রুততার সঙ্গে সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা, যাতে নির্বাচনের পথে অগ্রসর হওয়া যায়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ কথা বলেন। আজ শনিবার ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে কমিশনের লক্ষ্য ও বৈঠকের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানান তিনি। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ২৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ওই বৈঠক করে কমিশন। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক আজ বেলা তিনটার পর শুরু হয়। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে এ বৈঠক চলে। বৈঠক শেষে আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, আজকের বৈঠকের লক্ষ্য ছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রক্রিয়াটি কী হবে, সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা। এক অর্থে এটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ২৭টি দল ও জোটের পক্ষ থেকে এক শ জনের বেশি রাজনীতিক বৈঠকে যোগ দেন। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্যে যে বিষয়গুলো খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে—জাতীয় ঐক্য রক্ষার আর কোনো বিকল্প নেই। সংস্কারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দলগুলো দৃঢ়তা প্রকাশ করেছে। তাদের (দলগুলো) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের এই সংস্কারপ্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করবে, সাহায্য করবে, অংশগ্রহণ করবে।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে; যেটা আজ প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন—আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই, আমরা প্রত্যেকেই—রাজনৈতিক দল হিসেবে, নাগরিক হিসেবে, সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই সংস্কারপ্রক্রিয়াকে সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তার লক্ষ্যেই আজ এই সূচনা। আমরা আশা করছি, জাতীয় ঐকমত্যের কাজ এখন শুরু হবে।’
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আলাদাভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলব, জোটগতভাবে কথা বলব এবং সম্ভাব্য লক্ষ্য হচ্ছে একপর্যায়ে হয়তো আবারও সবাইকে একত্রিত করব। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা করতে চাই না। আমরা আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে এটা করতে পারব।’ তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কমিশনের জমা দেওয়া প্রতিবেদনগুলোর ছাপা কপি চেয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে সেটি দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, সর্বোপরি যেটা বিষয়, সেটা হলো ঐকমত্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কারও কোনো দ্বিধার সুযোগ নেই এবং সেই প্রক্রিয়াটিই দ্রুত অগ্রসর করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা বৈঠক কবে শুরু হবে এবং সংলাপ কত দিন লাগতে পারে? জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ দেওয়া হয়েছে ছয় মাস। সে ক্ষেত্রে কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে চাই। ছয়টি কমিশনের সারাংশ ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পর্যালোচনা করার জন্য তাদের সময় দিতে হবে। আমরা চাই অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে; কেননা সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যাতে আমরা নির্বাচনের পথে অগ্রসর হতে পারি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ছয় মাসের কম সময়ে যদি সম্ভব হয়। রাজনৈতিক দলগুলোরও আগ্রহ আছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও মনে করে যত দ্রুত সম্ভব। কিন্তু এটি অকস্মাৎ হবে না, মাত্র প্রতিবেদনগুলো পাওয়া গেছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র য় জ বল ন
এছাড়াও পড়ুন:
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিয়ে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এবি পার্টির চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মজিবুর রহমান বলেছেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন, সংস্কার, সংশোধন, নতুন করে লেখা বা বাতিলের চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের। আমরা ঐক্যবদ্ধ মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরি করেছি, হয়তো কয়েকটি বিষয়ে কারও কারও “নোট অব ডিসেন্ট” (দ্বিমত) আছে। কিন্তু চূড়ান্ত কোনটা হবে, তা নির্ধারণের মূল ক্ষমতা জনগণের।’
কমিশনের আজকের প্রস্তাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদকে রেফারেন্স আকারে উল্লেখ করায় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও নেতা জুলাই ঘোষণাপত্রের বৈধতা নিয়ে মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যাঁরা আজ প্রশ্ন তুলছেন, কাল তাঁরা সংসদে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবেন এবং এই সনদকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী?
এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক বলেন, সংবিধানে এটা নেই, ওটা নেই বলে সংবিধান সংস্কার করা যাবে না—এই ধারণা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাপরিপন্থী। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান থেকে নমনীয় না হয়, তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পুরো প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে।
আশঙ্কা প্রকাশ করে এবি পার্টির এই নেতা বলেন, এমন পরিস্থিতি জাতিকে এক গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। সুতরাং জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি; অন্যথায় গণভোট ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
আরও পড়ুনবর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ৪ ঘণ্টা আগে