বরগুনায় আসমা বেগম (৩৫) নামের এক নারীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী আবুল কালামের (৩৮) বিরুদ্ধে। পুলিশ বলছে, হত্যার পর থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেছেন তিনি।

রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে পৌর শহরের বাগানবাড়ি এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ দম্পতির রাকা মনি ও রাফি নামের দুই ছেলে–মেয়ে রয়েছে।

প্রতিবেশী তৌহিদ মিজান বলেন, ‘‘গতকাল সন্ধ্যায় আসমার সন্তানদের ডাক-চিৎকার শুনে এগিয়ে যাই। এ সময় আসমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।’’

নিহতের মেয়ে রাকা মনি বলে, ‘‘রবিবার বিকেলে বাবা কোমল পানীয় খাওয়ায়। এরপর আর কিছু মনে নেই। সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে দেখি, মা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।’’

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক হিমেল পাল বলেন, ‘‘আসমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কোপের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।’’

আসমার ভাই জুবায়ের হোসেন বলেন, ‘‘আমার বোনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে আবুল কালাম। কমপক্ষে ২০টি কোপ দিয়েছে। আবুল কালামের ফাঁসি চাই।’’

বরগুনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, ‘‘স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার পর থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেছেন আবুল কালাম। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’

জানা যায়, নিহত আসমা বেগম পূবালী ব্যাংক বরগুনা শাখার কর্মচারী ছিলেন। তিনি জেলার বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ এলাকার ইউনুস হাওলাদারের মেয়ে।

ঢাকা/ইমরান/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বরগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ

বরিশালের আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকার উৎস ঐতিহ্যবাহী টরকী–বাশাইল খালটি করুণ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নাব্যতাসংকট, নির্বিচার দখল, দূষণ ও কর্তৃপক্ষের লাগাতার অবহেলার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের এমন পরিণতি খুবই দুঃখজনক। এটি পরিবেশের ওপর কাঠামোগত আগ্রাসনের ধারাবাহিকতারই চিত্র।

খালটি যখন প্রবহমান ছিল, তখন তা ছিল দুই উপজেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের এখন সেচের
জন্য ‘ডাবল লিফটিং’ (দুবার পানি উত্তোলন) করতে হচ্ছে। প্রথমে পাম্প দিয়ে কোনোমতে খালে পানি আনতে হয়। এরপর সেই পানি আবার পাম্প দিয়ে জমিতে দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কৃষকের সেচ খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ শতক জমিতে যেখানে খরচ হতো ৭০০ টাকা, সেখানে এখন গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে অনেক কৃষক বোরো আবাদ ছেড়ে মাছের ঘের বা পানের বরজ তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন, নয়তো আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে স্থানীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষি অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামতে বাধ্য।

এ বিপর্যয়ের মূল কারণটি অত্যন্ত স্পষ্ট—অবৈধ দখলদারত্ব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। খালের উৎসমুখ, অর্থাৎ টরকী বন্দরসংলগ্ন পালরদী নদীর মোহনা দখলদারেরা পুরোপুরি রুদ্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাকা ও আধা পাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গৌরনদী ভূমি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ‘খালের জমি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি’—এমনটা বলা হলেও দখলদারেরা কীভাবে খালের জায়গাকে ‘রেকর্ডীয় সম্পত্তি’ বা ‘ইজারা নেওয়া জমি’ দাবি করেন? এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যেই সরকারি সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ করছেন।

এই দখলদারদের দাপট এতটাই বেশি যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) গত বছর খাল খননের আবেদন পেয়েও কাজ শুরু করতে পারেনি। বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাহেদ আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, অবৈধ স্থাপনার কারণে খননযন্ত্র চালানো বা খনন করা মাটি রাখার মতো সামান্য জায়গাও সেখানে নেই। অর্থাৎ মুষ্টিমেয় অবৈধ দখলদার একটি সরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে তার আইনি দায়িত্ব পালনে পঙ্গু করে রেখেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন এই দখলদারত্বের সামনে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ কেন এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কার ইশারায় এই দখলদারত্ব এত বছর ধরে চলতে দেওয়া হলো? টরকী–বাশাইল খালকে পুনরুদ্ধার করতে এখন কি কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি আমরা এ জলধারার উৎসের পুরোপুরি মৃত্যু নিশ্চিত হতে দেখব?

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ