প্রস্তুতি ম্যাচেই বিশ্বাসের ঘাটতি
Published: 17th, February 2025 GMT
‘‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যাচ্ছি।’’ – দেশ ছাড়ার আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের লক্ষ্যর কথা এভাবেই জানিয়েছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। নিজেদের গ্রুপে ভারত, পাকিস্তান ও নিউ জিল্যান্ডের মতো দল থাকলেও বাংলাদেশ নকআউট পর্ব তো বটেই, ফাইনালও জয়ের স্বপ্ন দেখছে।
মুখের কথায় যে আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠেছিল, মাঠের ক্রিকেটে তার ছিটেফোঁটাও দেখা মিলল না। বরং বিশ্বাসের ঘাটতি প্রকট আকারে দেখা গেল। পাকিস্তান শাহীনসের বিপক্ষে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে। ২০ ফেব্রুয়ারি দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। অথচ এই ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসে জ্বালানি তো পেলই না বরং প্রবল বাজে পারফরম্যান্সে প্রস্তুতির ঘাটতিই ফুটে উঠল।
প্রতিপক্ষ দলে বড় নাম ছিল না। অথচ তারাই হেসেখেলে হারিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দলকে। ব্যাটিংয়ে বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর নির্বিষ বোলিংয়ে এলোমেলো পারফরম্যান্স গোটা দলের। টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৩৮.
আরো পড়ুন:
ছেলের সঙ্গে জাতীয় দলে খেলতে চান নবী, এখনই অবসর নয়
স্টেডিয়ামে ভারত ও বাংলাদেশের পতাকা না রাখার ব্যাখ্যা দিলো পাকিস্তান
সৌম্য সরকার ৩৫, মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৪ ও তানজিম সাকিব ৩০ রান করেন। এছাড়া বিশের ঘর ছুঁয়েছেন কেবল তাওহীদ হৃদয়। বাকিরা কেউ বিশের ঘর পেরোতে পারেননি। সৌম্য ৪ চারে ৩৮ বলে ৩৫ রান করেন। সর্বোচ্চ ৪৪ রান করে মিরাজ ৫৩ বলে ৩টি চার হাঁকান। বাংলাদেশের ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটি আসে তানজিম সাকিবের ব্যাট থেকে। ২৭ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কা হাঁকান লেজের এই ব্যাটসম্যান।
পাকিস্তান শাহীনসের হয়ে বল হাতে উসামান মির ৪৩ রানে ৪ উইকেট নেন। ২ উইকেট পেয়েছেন মুসা খান।
লক্ষ্য তাড়ায় মোহাম্মদ হারিসের ৭৬ রানের ইনিংসে পাকিস্তান শাহীনস সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। এছাড়া আজান আওয়াইজ ২৮, উমর ইউসুফ ৩১ রান করেন। রানের খাতা খুলতে পারেননি ওমর ইউসুফ।
বল হাতে মেহেদী হাসান মিরাজ, নাহিদ রানা ও তানজিম হাসান সাকিব ১টি করে উইকেট নেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর্দা উঠবে। পরের দিন মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ভারত পাকিস্তানে যেতে রাজি না হওয়ায় তাদের ম্যাচগুলো হবে দুবাইয়ে। এজন্য বাংলাদেশকে প্রথম ম্যাচ খেলতে হবে দুবাইতে। ২৪ ফেব্রুয়ারি নিউ জিল্যান্ড ও ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ম্যাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে। দুইটি ম্যাচই হবে রাওয়ালপিন্ডিতে।
ইয়াসিন/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।
তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।
ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।
প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।
তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।
এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।
তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।
চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।
এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।
২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।
এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।
অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।