বিশ্বখ্যাত সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান অ্যাডোবি তাদের বার্ষিক ম্যাক্স ক্রিয়েটরস সম্মেলনে একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ছবি সম্পাদনা ও ডিজাইন টুল উন্মোচন করেছে। জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে লাইটরুম ও অ্যাডোবি ক্যামেরার জন্য অ্যাডাপটিভ প্রোফাইলস ও ডিসট্রাকশন রিমুভাল নামে দুটি এআইনির্ভর সম্পাদনা প্রযুক্তি উন্মোচন করা হয়।

অ্যাডোবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন এই সুবিধা ছবি সম্পাদনার প্রক্রিয়াকে আরও সহজ, স্বয়ংক্রিয় ও কার্যকর করে তুলবে। ফলে ব্যবহারকারীদের সময় বাঁচবে এবং সম্পাদনার মানও উন্নত হবে।

এআইনির্ভর স্মার্ট ইমেজ প্রসেসিংয়ের জন্য অ্যাডাপটিভ প্রোফাইলস সুবিধা ব্যবহার করা যাবে। সুবিধাটি ছবির রং ও টোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করতে পারে। প্রচলিত প্রিসেট ও প্রোফাইলের মতো নির্দিষ্ট সেটিংস ব্যবহারের পরিবর্তে এটি প্রতিটি ছবির বৈশিষ্ট্য বুঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনবে। অ্যাডোবি জানিয়েছে, এই প্রযুক্তি ছবির এক্সপোজার, শ্যাডো, হাইলাইট, রং মিশ্রণ ও কার্ভের মতো বিভিন্ন সেটিংস এমনভাবে সামঞ্জস্য করবে, যাতে ছবিটি আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও স্বাভাবিক দেখায়। তবে ব্যবহারকারীর মূল কন্ট্রোল সেটিংস অপরিবর্তিত থাকে। এই সুবিধা লাইটরুম, লাইটরুম ক্ল্যাসিক, লাইটরুম মোবাইল (অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস), লাইটরুম ওয়েব এবং অ্যাডোবি ক্যামেরায় পর্যায়ক্রমে যুক্ত হবে।

অন্যদিকে ডিসট্রাকশন রিমুভাল সুবিধাটি ছবিতে থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু, ব্যাকগ্রাউন্ডের বিরক্তিকর উপাদান সরিয়ে ফেলতে পারবে। অ্যাডোবির তথ্য অনুসারে, এই সুবিধা ব্যবহার করে ফটোশুটে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির উপস্থিতি, ভ্রমণের সময় ভিড়ে থাকা মানুষ কিংবা অন্যান্য ব্যাকগ্রাউন্ডের অতিরিক্ত উপাদান সহজেই সরানো যাবে। ফলে ব্যবহারকারীরা ঝামেলাহীনভাবে পেশাদার মানের ছবি তৈরি করতে পারবেন। এই প্রযুক্তি প্রাথমিকভাবে ক্যামেরায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এবং শিগগিরই লাইটরুমেও যুক্ত হবে বলে জানিয়েছে অ্যাডোবি। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি উইন্ডো রিফ্লেকশনস সরানোর প্রযুক্তি চালু করেছিল।

নতুন আপডেটের অংশ হিসেবে লাইটরুমের ক্লিন আপ টুলে একই রকম ছবি শনাক্তকরণের সুবিধা যুক্ত হয়েছে। ফলে টুলটি একই ধরনের ছবি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারবে। এ ছাড়া লাইটরুম ক্ল্যাসিকের সঙ্গে সংযুক্ত ক্যামেরার অটোফোকাস মোড সরাসরি নিয়ন্ত্রণের সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। ব্যবহারকারীরা টেথার লাইভ ভিউ মোডে গিয়ে অটোফোকাস পরিবর্তন ও নির্দিষ্ট ফোকাস পয়েন্ট নির্বাচন করতে পারবেন। এ ছাড়া গ্রাফিক ডিজাইনারদের জন্য নতুন ত্রিমাত্রিক ডিজাইন টুল প্রজেক্ট নিও–এর পরীক্ষামূলক সংস্করণ উন্মোচন করেছে অ্যাডোবি। এবারের ম্যাক্স সম্মেলনে ওয়ার্কফ্লো ও পারফরম্যান্স ইমপ্রুভমেন্ট, দ্রুত উপযুক্ত ফন্ট শনাক্তকরণ এবং জাপানি টাইপোগ্রাফির উন্নয়নসহ অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটরের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আপডেটের ঘোষণাও এসেছে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র ড জ ইন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ