রাজনৈতিক নিয়োগে অরাজনৈতিক ক্যাম্পাস আশা করেন কীভাবে
Published: 19th, February 2025 GMT
গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস পার হতে না হতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদের পক্ষগুলোর মধ্যে উত্তেজনা ছড়াতে দেখা যাচ্ছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মঙ্গলবার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত শতাধিক জন গুরুতর আহত হন। ছাত্রদের সংঘাতে স্থানীয়রা ও রাজনৈতিক কর্মীরা জড়িয়ে পড়লে সেটা ভয়াবহ রূপ নেয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করছে। যুবদলের কাউকে কাউকে রামদা-চাপাতির মতো ধারালো অস্ত্র নিয়েও হামলা করতে দেখা গেছে। এই সংঘর্ষ ও হামলা নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরস্পরকে দায়ী করেছে।
কুয়েটের এই সংঘর্ষের উত্তাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মিছিল হয়। বুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারেও একদল শিক্ষার্থী প্রতিবাদ মিছিল করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ, হামলাকারীদের শাস্তি এবং উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগের দাবি জানান। অন্যদিকে ছাত্রদলের দাবি, ‘বৈষম্যবিরোধী আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানার অপব্যবহার করে গুপ্ত সংগঠন শিবির “মব” তৈরি করছে।’
কুয়েটের ঘটনায় কোন পক্ষ দায়ী, তা নিয়ে ফেসবুকে পরস্পরবিরোধী ভাষ্য আসছে। কে প্রথম উসকানি দিয়েছে, তা নিয়েও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। বুধবার ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে কুয়েটে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট।
ছাত্র প্রশ্ন হচ্ছে, অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলো, যারা জান বাজি রেখে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, অভূতপূর্ব এক ঐক্যের নজির স্থাপন করেছেন, তাঁরাই কেন এ রকম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেন? তাঁদের মধ্যে কেন এমন অবিশ্বাস, চাপা অসন্তোষের পরিবেশ তৈরি হলো?
কুয়েটের ঘটনাকে রোগ নয়, রোগের লক্ষণ হিসেবেই দেখা দরকার। কেননা, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন সব ঘটনা ঘটেছে যেগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ কম।
দুই.
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টির হল ও একাডেমিক ভবনগুলোর নাম পরিবর্তন করেছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেওয়ার কারণ আমরা বুঝতে পারছি। এখানে ‘ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতা’র বিষয়টি আছে; কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জগদীশ চন্দ্র বসু থেকে শুরু করে নিতান্ত নিরীহ কবি জীবনানন্দ দাশের নাম পরিবর্তনের কারণ কী থাকতে পারে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্রল হয়েছে; প্রতিবাদ, সমালোচনাও হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে নাম পরিবর্তনের ব্যাপারটা রাজনৈতিকভাবে পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী প্রকল্প। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণ ও নাম পরিবর্তনের হিড়িক চলে। কেননা, এখানে মূলধারার রাজনীতি মূলত এক নেতার ভাবমূর্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ফলে চলতি হাওয়াপন্থীরা খুব ভালোভাবেই জানেন, নামকরণের রাজনীতি তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত বিনিয়োগ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে রাজনৈতিক শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে, কথিত রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস আশা করা কতটা যুক্তিসংগত? চূড়ান্ত বিচারে এখানে রাজনীতি সমস্যা নয়, সমস্যা পুরোনো ধারার লেজুড়বৃত্তিক ও কর্তৃত্ববাদী কাঠামোর রাজনীতি। কেননা, ছাত্র-জনতা রাজনীতি নিয়ে হাজির না হলে, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হতো না।আওয়ামী লীগ জোর করে চাপিয়ে দিয়ে এবং আইন করে এ ভূমির ইতিহাসকে একাত্তরে, তা-ও আবার একটিমাত্র বয়ানে আটকে রেখেছিল। চব্বিশের অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব যে ব্যাখ্যা-বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে ইতিহাসের সেই এককেন্দ্রিক অচলায়তনকে ভেঙে ফেলার কথাই বলা হয়েছে। ইতিহাসের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী যে সম্ভাবনা, তারই তালাশের কথা তাঁরা জোরেশোরে উচ্চারণ করেছেন।
এখন অন্তর্ভুক্তিমূলক আর বহুত্ববাদের সংজ্ঞা যদি কারও পক্ষের, কারও চিন্তার বাইরের সবাইকে বাদ দেওয়া কিংবা মুছে ফেলা, কিংবা তার চিন্তার ছাঁচে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সমাজে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হওয়াটা কি অস্বাভাবিক? আমাদের ইতিহাস নিশ্চিত করেই একাত্তরের একমাত্রিক বয়ানে আটকে থাকার নয়। গত ১৫০ বছরের ইতিহাস বিচার করলে নিঃসন্দেহে যাঁরা এ ভূমির ভূখণ্ড ছাপিয়ে বৈশ্বিক পরিসরের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন, তাঁদের মধ্যে জগদীশ চন্দ্র বসু আর সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে প্রথম কাতারেই রাখতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী স্রোতকে স্বীকৃতি দিতে হলে তাজউদ্দীন কিংবা আলীম চৌধুরীকে স্থান দিতে হবে। আর কোনো কবি যদি চিন্তায় এ ভূমির মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাহলে সেখানে সামনের কাতারে জীবনানন্দের নামও থাকবে।
তাহলে এই নাম পরিবর্তনের রাজনীতিটা আসলে কী?
কুয়েটের ঘটনায় ছাত্রদলের বিক্ষোভউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র জন ত র জন ত ক ছ ত রদল স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫