গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস পার হতে না হতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদের পক্ষগুলোর মধ্যে উত্তেজনা ছড়াতে দেখা যাচ্ছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মঙ্গলবার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত শতাধিক জন গুরুতর আহত হন। ছাত্রদের সংঘাতে স্থানীয়রা ও রাজনৈতিক কর্মীরা জড়িয়ে পড়লে সেটা ভয়াবহ রূপ নেয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করছে। যুবদলের কাউকে কাউকে রামদা-চাপাতির মতো ধারালো অস্ত্র নিয়েও হামলা করতে দেখা গেছে। এই সংঘর্ষ ও হামলা নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরস্পরকে দায়ী করেছে।

কুয়েটের এই সংঘর্ষের উত্তাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মিছিল হয়। বুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারেও একদল শিক্ষার্থী প্রতিবাদ মিছিল করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ, হামলাকারীদের শাস্তি এবং উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগের দাবি জানান। অন্যদিকে ছাত্রদলের দাবি, ‘বৈষম্যবিরোধী আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানার অপব্যবহার করে গুপ্ত সংগঠন শিবির “মব” তৈরি করছে।’

কুয়েটের ঘটনায় কোন পক্ষ দায়ী, তা নিয়ে ফেসবুকে পরস্পরবিরোধী ভাষ্য আসছে। কে প্রথম উসকানি দিয়েছে, তা নিয়েও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। বুধবার ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে কুয়েটে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট।

ছাত্র প্রশ্ন হচ্ছে, অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলো, যারা জান বাজি রেখে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, অভূতপূর্ব এক ঐক্যের নজির স্থাপন করেছেন, তাঁরাই কেন এ রকম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেন? তাঁদের মধ্যে কেন এমন অবিশ্বাস, চাপা অসন্তোষের পরিবেশ তৈরি হলো?

কুয়েটের ঘটনাকে রোগ নয়, রোগের লক্ষণ হিসেবেই দেখা দরকার। কেননা, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন সব ঘটনা ঘটেছে যেগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ কম।

দুই.


খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টির হল ও একাডেমিক ভবনগুলোর নাম পরিবর্তন করেছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেওয়ার কারণ আমরা বুঝতে পারছি। এখানে ‘ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতা’র বিষয়টি আছে; কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জগদীশ চন্দ্র বসু থেকে শুরু করে নিতান্ত নিরীহ কবি জীবনানন্দ দাশের নাম পরিবর্তনের কারণ কী থাকতে পারে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্রল হয়েছে; প্রতিবাদ, সমালোচনাও হয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে নাম পরিবর্তনের ব্যাপারটা রাজনৈতিকভাবে পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী প্রকল্প। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণ ও নাম পরিবর্তনের হিড়িক চলে। কেননা, এখানে মূলধারার রাজনীতি মূলত এক নেতার ভাবমূর্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ফলে চলতি হাওয়াপন্থীরা খুব ভালোভাবেই জানেন, নামকরণের রাজনীতি তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত বিনিয়োগ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে রাজনৈতিক শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে, কথিত রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস আশা করা কতটা যুক্তিসংগত? চূড়ান্ত বিচারে এখানে রাজনীতি সমস্যা নয়, সমস্যা পুরোনো ধারার লেজুড়বৃত্তিক ও কর্তৃত্ববাদী কাঠামোর রাজনীতি। কেননা, ছাত্র-জনতা রাজনীতি নিয়ে হাজির না হলে, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হতো না।

আওয়ামী লীগ জোর করে চাপিয়ে দিয়ে এবং আইন করে এ ভূমির ইতিহাসকে একাত্তরে, তা-ও আবার একটিমাত্র বয়ানে আটকে রেখেছিল। চব্বিশের অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব যে ব্যাখ্যা-বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে ইতিহাসের সেই এককেন্দ্রিক অচলায়তনকে ভেঙে ফেলার কথাই বলা হয়েছে। ইতিহাসের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী যে সম্ভাবনা, তারই তালাশের কথা তাঁরা জোরেশোরে উচ্চারণ করেছেন।

এখন অন্তর্ভুক্তিমূলক আর বহুত্ববাদের সংজ্ঞা যদি কারও পক্ষের, কারও চিন্তার বাইরের সবাইকে বাদ দেওয়া কিংবা মুছে ফেলা, কিংবা তার চিন্তার ছাঁচে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সমাজে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হওয়াটা কি অস্বাভাবিক? আমাদের ইতিহাস নিশ্চিত করেই একাত্তরের একমাত্রিক বয়ানে আটকে থাকার নয়। গত ১৫০ বছরের ইতিহাস বিচার করলে নিঃসন্দেহে যাঁরা এ ভূমির ভূখণ্ড ছাপিয়ে বৈশ্বিক পরিসরের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন, তাঁদের মধ্যে জগদীশ চন্দ্র বসু আর সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে প্রথম কাতারেই রাখতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী স্রোতকে স্বীকৃতি দিতে হলে তাজউদ্দীন কিংবা আলীম চৌধুরীকে স্থান দিতে হবে। আর কোনো কবি যদি চিন্তায় এ ভূমির মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাহলে সেখানে সামনের কাতারে জীবনানন্দের নামও থাকবে।

তাহলে এই নাম পরিবর্তনের রাজনীতিটা আসলে কী?

কুয়েটের ঘটনায় ছাত্রদলের বিক্ষোভ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন ত র জন ত ক ছ ত রদল স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম

উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে  ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ