রাজনৈতিক নিয়োগে অরাজনৈতিক ক্যাম্পাস আশা করেন কীভাবে
Published: 19th, February 2025 GMT
গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস পার হতে না হতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদের পক্ষগুলোর মধ্যে উত্তেজনা ছড়াতে দেখা যাচ্ছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মঙ্গলবার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত শতাধিক জন গুরুতর আহত হন। ছাত্রদের সংঘাতে স্থানীয়রা ও রাজনৈতিক কর্মীরা জড়িয়ে পড়লে সেটা ভয়াবহ রূপ নেয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করছে। যুবদলের কাউকে কাউকে রামদা-চাপাতির মতো ধারালো অস্ত্র নিয়েও হামলা করতে দেখা গেছে। এই সংঘর্ষ ও হামলা নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরস্পরকে দায়ী করেছে।
কুয়েটের এই সংঘর্ষের উত্তাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মিছিল হয়। বুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারেও একদল শিক্ষার্থী প্রতিবাদ মিছিল করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ, হামলাকারীদের শাস্তি এবং উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগের দাবি জানান। অন্যদিকে ছাত্রদলের দাবি, ‘বৈষম্যবিরোধী আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানার অপব্যবহার করে গুপ্ত সংগঠন শিবির “মব” তৈরি করছে।’
কুয়েটের ঘটনায় কোন পক্ষ দায়ী, তা নিয়ে ফেসবুকে পরস্পরবিরোধী ভাষ্য আসছে। কে প্রথম উসকানি দিয়েছে, তা নিয়েও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। বুধবার ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে কুয়েটে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট।
ছাত্র প্রশ্ন হচ্ছে, অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলো, যারা জান বাজি রেখে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, অভূতপূর্ব এক ঐক্যের নজির স্থাপন করেছেন, তাঁরাই কেন এ রকম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেন? তাঁদের মধ্যে কেন এমন অবিশ্বাস, চাপা অসন্তোষের পরিবেশ তৈরি হলো?
কুয়েটের ঘটনাকে রোগ নয়, রোগের লক্ষণ হিসেবেই দেখা দরকার। কেননা, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন সব ঘটনা ঘটেছে যেগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ কম।
দুই.
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টির হল ও একাডেমিক ভবনগুলোর নাম পরিবর্তন করেছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেওয়ার কারণ আমরা বুঝতে পারছি। এখানে ‘ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতা’র বিষয়টি আছে; কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জগদীশ চন্দ্র বসু থেকে শুরু করে নিতান্ত নিরীহ কবি জীবনানন্দ দাশের নাম পরিবর্তনের কারণ কী থাকতে পারে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্রল হয়েছে; প্রতিবাদ, সমালোচনাও হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে নাম পরিবর্তনের ব্যাপারটা রাজনৈতিকভাবে পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী প্রকল্প। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণ ও নাম পরিবর্তনের হিড়িক চলে। কেননা, এখানে মূলধারার রাজনীতি মূলত এক নেতার ভাবমূর্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ফলে চলতি হাওয়াপন্থীরা খুব ভালোভাবেই জানেন, নামকরণের রাজনীতি তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত বিনিয়োগ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে রাজনৈতিক শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে, কথিত রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস আশা করা কতটা যুক্তিসংগত? চূড়ান্ত বিচারে এখানে রাজনীতি সমস্যা নয়, সমস্যা পুরোনো ধারার লেজুড়বৃত্তিক ও কর্তৃত্ববাদী কাঠামোর রাজনীতি। কেননা, ছাত্র-জনতা রাজনীতি নিয়ে হাজির না হলে, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হতো না।আওয়ামী লীগ জোর করে চাপিয়ে দিয়ে এবং আইন করে এ ভূমির ইতিহাসকে একাত্তরে, তা-ও আবার একটিমাত্র বয়ানে আটকে রেখেছিল। চব্বিশের অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব যে ব্যাখ্যা-বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে ইতিহাসের সেই এককেন্দ্রিক অচলায়তনকে ভেঙে ফেলার কথাই বলা হয়েছে। ইতিহাসের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী যে সম্ভাবনা, তারই তালাশের কথা তাঁরা জোরেশোরে উচ্চারণ করেছেন।
এখন অন্তর্ভুক্তিমূলক আর বহুত্ববাদের সংজ্ঞা যদি কারও পক্ষের, কারও চিন্তার বাইরের সবাইকে বাদ দেওয়া কিংবা মুছে ফেলা, কিংবা তার চিন্তার ছাঁচে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সমাজে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হওয়াটা কি অস্বাভাবিক? আমাদের ইতিহাস নিশ্চিত করেই একাত্তরের একমাত্রিক বয়ানে আটকে থাকার নয়। গত ১৫০ বছরের ইতিহাস বিচার করলে নিঃসন্দেহে যাঁরা এ ভূমির ভূখণ্ড ছাপিয়ে বৈশ্বিক পরিসরের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন, তাঁদের মধ্যে জগদীশ চন্দ্র বসু আর সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে প্রথম কাতারেই রাখতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী স্রোতকে স্বীকৃতি দিতে হলে তাজউদ্দীন কিংবা আলীম চৌধুরীকে স্থান দিতে হবে। আর কোনো কবি যদি চিন্তায় এ ভূমির মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাহলে সেখানে সামনের কাতারে জীবনানন্দের নামও থাকবে।
তাহলে এই নাম পরিবর্তনের রাজনীতিটা আসলে কী?
কুয়েটের ঘটনায় ছাত্রদলের বিক্ষোভউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র জন ত র জন ত ক ছ ত রদল স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন আগামীকাল মঙ্গলবার। ‘বিশ্বের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত এই শহরে প্রথমবার এমন একজন মেয়র পদে নির্বাচিত হতে পারেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির চলতি ধারার একদম বিপরীতমুখী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান পার্টি এক ‘শ্বেতকায়, খ্রিষ্টান ও রক্ষণশীল’ আমেরিকার কথা বলছেন।
জোহরান মামদানি শ্বেতকায় নন, তিনি বাদামি রঙের দক্ষিণ এশীয়। তিনি খ্রিষ্টান নন, একজন মুসলিম। তিনি অবশ্যই রক্ষণশীল নন, তিনি খোলামেলাভাবে একজন প্রগতিশীল, যিনি নিজেকে সমাজতন্ত্রী বলতে দ্বিধা করেন না।
‘মামদানি একজন ভয়ানক মানুষ’, সাবধান করে বলেছেন অ্যান্ড্রু কুমো, মঙ্গলবারের নির্বাচনে যিনি মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী। সারা জীবন ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য থাকলেও বাছাইপর্বে পরাজিত হয়ে তিনি এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
ব্যালটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এই নির্বাচনে তিনি একজন অদৃশ্য প্রার্থী। কুমোর পক্ষ নিয়ে তিনিও এই নির্বাচনের একজন অংশগ্রহণকারী। বড় ব্যবধানে মামদানির বিজয় হলে অনেকেই তা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনাস্থা হিসেবেই দেখবেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের আদি বাসিন্দা। তিনি কোনোভাবেই চান না মামদানি এই শহরের মেয়র নির্বাচিত হোন। তাঁর বিবেচনায় মামদানি শুধু একজন পাক্কা কমিউনিস্টই নন, রীতিমতো উন্মাদ। এমন একজনকে নির্বাচিত করা হলে তিনি নিউইয়র্ক সিটির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল আটকে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, মামদানি একজন অবৈধ অভিবাসী। তা প্রমাণিত হলে তাঁকে বহিষ্কার করা হবে। মেয়র নির্বাচিত হয়ে মামদানি যদি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের চলতি অভিযানে বাধা দেন, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে, এমন হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
শহরের প্রতিটি প্রধান কেন্দ্র হেঁটে জনসংযোগ সেরেছেন মামদানি। ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যাঁদের অধিকাংশই নবীন, শহরের প্রতিটি বাসায় কড়া নেড়েছেন। টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর উপস্থিতি অভূতপূর্ব। মামদানির এই ‘মাঠপর্যায়ের খেলা’ ঠেকাতে কুমো বেছে নিয়েছেন একদিকে ঘৃণা, অন্যদিকে ভীতি।ট্রাম্পের ব্যাপারে জনরায়
শুধু নিউইয়র্কে নয়, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আরও অন্তত তিনটি রাজ্যে নির্বাচন হবে আগামীকাল, যার ফলাফল ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের ব্যাপারে একটি রেফারেন্ডাম বা জনরায় হবে ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে নির্বাচন। এই দুই রাজ্যে প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চ পরিষদেও ভোট গ্রহণ করা হবে। উভয় রাজ্যই ডেমোক্রেটিক রাজনীতির সমর্থক, বা ‘ব্লু স্টেট’। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই দুই রাজ্যেই ট্রাম্পের হার হয়, কিন্তু ২০১৬ সালের তুলনায় তিনি অনেক ভালো ফল করেন। দেখার বিষয়, দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে এই দুই রাজ্যে ট্রাম্পের জনসমর্থন এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে।
এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ায় গভর্নর গেভিন ন্যুসাম নির্বাচনী ম্যাপ পরিবর্তনের অনুমতি চেয়ে একটি গণভোটের আয়োজন করেছেন। আগামী বছরের নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে রিপাবলিকান পার্টি বড় রকমের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। তা ঠেকাতেই ট্রাম্পের নির্দেশে টেক্সাসের নির্বাচনী ম্যাপ ঢেলে সাজানো হয়েছে, যার ফলে রিপাবলিকান দল কংগ্রেসে আরও পাঁচটি আসন নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হবে ভাবা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ‘ব্লু স্টেট’ ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর ন্যুসামের নির্দেশে নির্বাচনী ম্যাপ বদলানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে সেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য কংগ্রেসে পাঁচটি আসনে বিজয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
এই তিনটি নির্বাচনের প্রতিটিতেই ভোটারদের মনে থাকবেন ট্রাম্প, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আইনি বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন ডেমোক্রেটিক শহরে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানের নামে সেনাসদস্যদের পাঠাচ্ছেন তিনি। যেসব ডেমোক্রেটিক নেতাকে শত্রু মনে করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছেন। কোনো যুক্তি বা কারণ ছাড়াই ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর পক্ষে ভোট দেয়নি এমন ডেমোক্রেটিক রাজ্যের কেন্দ্রীয় অনুদান বাতিল করছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই একাধিক সরকারি দপ্তর আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে মাদক পাচার বন্ধের নামে ভেনেজুয়েলার সমুদ্রসীমায় সামরিক হামলা চালাচ্ছেন। আমদানি শুল্কের নামে যে বাণিজ্যযুদ্ধ তিনি শুরু করেছেন, তার ফলে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের দাম বাড়া শুরু হয়েছে।
গ্যালপ জানাচ্ছে, ২০২১ সালে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ধনতন্ত্রের সমর্থক ছিল, তা এখন কমে ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই যে পরিবর্তিত আমেরিকা, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা সে কথা জানেন না বা জানতে চান না। গাজা প্রশ্নে তাঁদের রক্ষণশীল অবস্থান দলটির প্রতি নবীন প্রজন্মের ভোটারদের অবজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।এসব কার্যকলাপের ফলে সারা দেশে ট্রাম্পের জনসমর্থন কমেছে। অধিকাংশ জনমত জরিপে তাঁর প্রতি সমর্থন ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশের বেশি নয়। সাম্প্রতিক সময়ে মাত্র ১০ মাসের মাথায় অন্য আর কোনো প্রেসিডেন্টের জনসমর্থনে এমন ধস নামেনি।
এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প কোনো রাজ্যেই ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি প্রচারে আসেননি। এমনকি রিপাবলিকান প্রার্থীদের পক্ষে সরব সমর্থনও জানাননি। এর একটা সম্ভাব্য কারণ, জয়ী হবেন এমন প্রার্থীর সমর্থন দিতেই ট্রাম্প ভালোবাসেন। আগামীকালের নির্বাচনে তেমন সম্ভাবনা কম।
এই নির্বাচন যে ট্রাম্পের ব্যাপারে জনরায়, তার আরেক প্রমাণ নির্বাচনী প্রচারণায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অংশগ্রহণ। ডেমোক্রেটিক পার্টিতে জাতীয় নেতা বলতে তিনিই সবেধন নীলমণি। শনিবার নিউ জার্সির ডেমোক্রেটিক গভর্নর পদপ্রার্থী মাইকি শেরিলকে পাশে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। একই দিন ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্রেটিক গভর্নর পদপ্রার্থী এবিগেইল স্প্যানবার্গারের পক্ষেও প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। উভয় রাজ্যেই ওবামা কঠোর ভাষায় ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী নীতির কারণেই আমেরিকা আজ এক দুঃসময়ের মুখোমুখি।
জনমতে এগিয়ে মামদানি
ওবামা মামদানিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেননি। তবে তিনি যে মামদানির পাশে আছেন, সে কথাও গোপন রাখেননি। মামদানির ক্যাম্পেইন থেকে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি ওবামা নিজেই ফোন করে জানিয়েছেন, তাঁর (মামদানির) বিজয়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তিনি বলেছেন, মামদানির নির্বাচনী প্রচার ‘ইম্প্রেসিভ’ বা নজরে পড়ার মতো।
কুমো ক্যাম্প থেকে অহোরাত্রি তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ হিসেবে প্রচার সত্ত্বেও মামদানি যেসব জনমত জরিপে এগিয়ে, তার একটি বড় কারণ মাঠপর্যায়ে তাঁর এই ‘ইম্প্রেসিভ’ প্রচারণা। শহরের প্রতিটি প্রধান কেন্দ্র হেঁটে জনসংযোগ সেরেছেন মামদানি। ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যাঁদের অধিকাংশই নবীন, শহরের প্রতিটি বাসায় কড়া নেড়েছেন। টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর উপস্থিতি অভূতপূর্ব। মামদানির এই ‘মাঠপর্যায়ের খেলা’ ঠেকাতে কুমো বেছে নিয়েছেন একদিকে ঘৃণা, অন্যদিকে ভীতি। এতে তিনি ফল পাচ্ছেন, গত দুই সপ্তাহে মামদানির সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ১০ শতাংশের মতো কমে এসেছে। নিউইয়র্কের চলতি মেয়র নির্বাচন থেকে এরিক অ্যাডামস সরে দাঁড়ানোয় কুমোর লাভ হয়েছে সন্দেহ নেই, তবে এখনো মামদানির সঙ্গে যে ১৬-১৭ পয়েন্টের ব্যবধান রয়েছে, তা অতিক্রম করা কার্যত অসম্ভব, এই মত অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের।
ভূমিধস পরিবর্তন
একটা বিষয় স্পষ্ট। মেয়র নির্বাচনে মামদানি জয়ী হলে তা মার্কিন রাজনীতিতে প্রজন্মগত ও নীতিগত পরিবর্তনের সূচনা করবে। ভূমিধস পরিবর্তন আসবে ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতিতে। মধ্যপন্থী ও ডানঘেঁষা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এই দল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কম জনপ্রিয়। এই দলে যাঁরা নেতৃত্বে, তাঁদের অধিকাংশই বয়োবৃদ্ধ, করপোরেট আমেরিকার কাছে এদের হাত-পা বাঁধা। ইসরায়েল প্রশ্নে তাদের সমর্থন এখনো আগের মতো নতজানু।
পিউ রিসার্চের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েল প্রশ্নে এখন নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে এমন আমেরিকানের সংখ্যা ৫৩ শতাংশ, যা তিন বছর আগের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। একইভাবে ধনতন্ত্রের প্রতিও আমেরিকানদের সমর্থন নিম্নগামী। গ্যালপ জানাচ্ছে, ২০২১ সালে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ধনতন্ত্রের সমর্থক ছিল, তা এখন কমে ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই যে পরিবর্তিত আমেরিকা, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা সে কথা জানেন না বা জানতে চান না। গাজা প্রশ্নে তাঁদের রক্ষণশীল অবস্থান দলটির প্রতি নবীন প্রজন্মের ভোটারদের অবজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।
অন্যদিকে ট্রাম্পের নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টি খোলামেলাভাবে অভিবাসনবিরোধী, দক্ষিণপন্থী, খ্রিষ্টবাদী ও রক্ষণশীল। চলতি সপ্তাহের নতুন উদ্বাস্তু নীতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন শ্বেতকায় ও ইউরোপীয় আশ্রয়প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেবে। এই অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতকায় নাগরিকবৃন্দ, ট্রাম্প প্রশাসনের চোখে যারা সে দেশের সরকারের বৈষম্যের শিকার।
এই প্রতিক্রিয়াশীল রিপাবলিকান পার্টির বিপরীতে একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল ডেমোক্রেটিক আন্দোলন গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও কংগ্রেস সদস্য ওকাসিও-কর্তেজ ইতিমধ্যে এই আন্দোলনের প্রধান মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। সবাই মানেন, মামদানির মতো তরুণ ও বুদ্ধিমান নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে।
এই সম্ভাবনার কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছেন বার্নি স্যান্ডার্স। তাঁর কথায়, এই দেশ করপোরেট আমেরিকার নির্দেশে চলবে, না তার রাজনীতির কেন্দ্রে থাকবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ—এ মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ‘যদি আমরা দ্বিতীয় পথটি বেছে নিতে চাই, করপোরেট আমেরিকার বদলে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিই, তাহলে আমাদের মামদানির পাশে দাঁড়াতে হবে।’
কোন পথ বেছে নেবে নিউইয়র্ক, মঙ্গলবারেই তা নিশ্চিত হবে।