২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে ফেডারেল নির্বাচন। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই দেশটিকে একটি রাজনৈতিক ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সেখানে এই প্রথমবারের মতো প্রধান বিরোধী দল মধ্যডানপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নকে (সিডিইউ) পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস করতে চরম ডানপন্থী অলটারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) সমর্থন নিতে হয়েছে। 

সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিখ মের্জ এএফডির সমর্থন নেওয়ার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি বলেছেন, অভিবাসন সমস্যা নিয়ে অন্য দলগুলো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় সিডিইউ এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। যদিও এ প্রস্তাবের ফলে কোনো সরাসরি পরিবর্তন হয়নি, তবে এটি জার্মানির রাজনীতিতে বড় একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এত দিন পর্যন্ত দেশটির গণতান্ত্রিক দলগুলো চরম ডানপন্থীদের সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে রাজি ছিল না। কিন্তু এ ঘটনার পর সেই নৈতিক বাধা ভেঙে গেছে। ফলে জার্মানি আর দাবি করতে পারবে না যে তারা এখনো চরম ডানপন্থার ‘স্বাভাবিকীকরণ’ থেকে মুক্ত রয়েছে। 

প্রশ্ন হলো ‘স্বাভাবিকীকরণ’ আসলে কী এবং কেন এটি নিয়ে উদ্বেগ থাকা উচিত? প্রথমত, এটি ‘মূলধারায় নিয়ে আসা’ বা ‘মেইনস্ট্রিমিং’-এর মতো কিছু নয়। এখন স্বাভাবিকীকরণ বলতে বোঝায় কোনো বিদ্যমান নিয়ম ভাঙার বিষয়টিকে যৌক্তিক হিসেবে তুলে ধরা। গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ চরম ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে আঁতাত করাকে এখন ‘স্বাভাবিকীকরণ’ বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। 

অন্যদিকে এখন ‘মূলধারা’ বলতে সেই জিনিসকে বোঝায়, যা সবচেয়ে সাধারণ বা সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। এটি নির্দিষ্ট কোনো আদর্শের ওপর নির্ভর করে না, বরং সময়ের সঙ্গে কী বেশি প্রচলিত হয়ে উঠেছে, সেটির ওপর নির্ভর করে।

সেদিক থেকে ধরলে চরম ডানপন্থী কোনো দলের সঙ্গে জোট গঠন করা বা তাদের সমর্থনে আইন পাস করানোকে স্বাভাবিকীকরণের একটি উদাহরণ বলা যেতে পারে। অন্যদিকে চরম ডানপন্থীদের বক্তব্য বা মতাদর্শ অনুসরণ করা মূলধারায় নিয়ে আসার (মেইনস্ট্রিমিং) একটি উদাহরণ।

কোনো বিষয়কে মূলধারায় নিয়ে আসা মানে সেটিকে জনগণের সামনে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা এবং তা চরম ডানপন্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী উপস্থাপন করা। এ জন্য সমাজবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন, যদি কোনো নির্বাচনী প্রচারে চরম ডানপন্থীদের তোলা ইস্যুগুলোই প্রধান হয়ে ওঠে, তাহলে তারা নির্বাচনে ভালো ফল করে থাকে। 

গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিকেরা সাধারণত নিজেদের স্বার্থপর বা সুবিধাবাদী হিসেবে দেখাতে চান না। সে কারণে তাঁরা চরম ডানপন্থীদের স্বাভাবিক করে তোলার (নরমালাইজেশন) ব্যাপারে নানা যুক্তি দেখান। ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে তাঁরা বলার চেষ্টা করেন, নিয়ম ভাঙা হয়নি; বরং সব ঠিক আছে। যেমন মের্জ দাবি করেছেন, তাঁর আসল লক্ষ্য হলো এএফডির জনপ্রিয়তা কমানো। কিন্তু এটি খুবই খোঁড়া যুক্তি।

আরেকটি বিকল্প হলো নীতি বা আদর্শকে অবৈধ ঘোষণা করা। আগে ইতালিয়ান সোশ্যাল মুভমেন্ট (এমএসআই) ও কমিউনিস্ট পার্টি—এই দুটি রাজনৈতিক দল ছিল, যারা ইতালির যুদ্ধোত্তর গণতান্ত্রিক সংবিধানকে মেনে নেয়নি। তাই দল দুটিকে দীর্ঘদিন মূলধারার রাজনৈতিক দল বলে গণ্য করা হতো না। ফ্যাসিবাদ ও মুসোলিনির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এমএসআইয়ের মূল মতবাদ ছিল। তাই তাদের অনেক সময় মূলধারার রাজনীতির বাইরে রাখা হতো।

কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি এ ধারণা চ্যালেঞ্জ করে বসেন। তিনি দাবি করেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য এখন আর প্রাসঙ্গিক বা প্রয়োজনীয় নয়; এটি মূলত ডানপন্থীদের দমিয়ে রাখতে বামপন্থীদের একটি কৌশলমাত্র। 

আসলে যখন কোনো দল বা রাজনৈতিক গোষ্ঠী মূলধারার সমাজে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে (যেমন যখন নেতারা বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে বা তাদের সমর্থন দেন), তখন সাধারণ জনগণের মধ্যে সেই দলের প্রতি গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। তবে এই প্রক্রিয়া বোঝার ক্ষেত্রে জনসাধারণের সচেতনতা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো জনপ্রিয় নেতা বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব একটি দলকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মেনে নেন, তখন তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ মানুষও সেই দলকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখতে শুরু করে। 

দুশ্চিন্তার বিষয়, জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশ এখন এই রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। 

জ্যঁ ভার্নার ম্যুলার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ভ ব ক করণ স ব ভ ব ক কর র র জন ত র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ আছে। বিএনপিকে জনগণ যদি ভোট দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আনে, তাহলে অবশ্যই দেশের জন্য ড. ইউনূসকে কাজে লাগানো হবে। দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়– এ ব্যাপারে তাঁর পরামর্শ নেওয়া হবে। এ রকম আরও যারা আছেন তাদের মতামত নিয়ে কাজ করতে চান তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র-বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির গতকাল শুক্রবার সমকালকে এ কথা বলেন। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনার প্রথম পর্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে দলের প্রতিনিধি হিসেবে হুমায়ুন কবিরও ছিলেন। 
তারেক রহমানের পররাষ্ট্র-বিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, তারেক রহমান মনে করেন, জাতীয় স্বার্থে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রয়োজন আছে। যদি জনগণের ভোটে বিএনপি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারে, তাহলে তারেক রহমান সবাইকে নিয়ে কাজ করবেন। তিনি সেটাই উপস্থাপন করেছেন।  

এর আগে গত বুধবার লন্ডনে চ্যাথাম হাউসে অনুষ্ঠিত সংলাপে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচনের পর গঠিত পরবর্তী সরকারের অংশ হওয়ার কোনো আগ্রহ তাঁর নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, যা নির্বাচন দ্বারা সম্পন্ন হবে।’ 
গতকালের বৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনায় তারেক রহমান বিএনপির পূর্বঘোষণা এবং ৩১ দফা অনুযায়ী সব দলমতের মানুষকে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন। সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিকে আগামীর রাষ্ট্র বিনির্মাণে পাশে চান তিনি। তাঁর মতো অন্য যোগ্যদেরও দেশ গঠনে সম্পৃক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তারেক রহমান। 

নির্বাচনের বাইরে আর কী বিষয়ে আলাপ হয়েছে– জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির বলেন, স্বাভাবিকভাবে ব্যক্তিগত আলাপে অনেক কিছু উঠে এসেছে। যেটা জেনেছি, খুবই ফলপ্রসূ ও আন্তরিক আলাপ হয়েছে। দেশ নিয়ে গঠনমূলক চিন্তা বিনিময় হয়েছে। কীভাবে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়েও কথা হয়েছে।  
হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থে নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা একটা জায়গায় আসতে পেরেছি। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’    
 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যে কী আলোচনা হলো
  • প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে
  • একটি দলের নেতার সঙ্গে যৌথ বিবৃতি প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়া‌তে ইসলামী
  • বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান
  • একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে: জামায়াত
  • ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি
  • লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সম্পর্কিত বক্তব্যে দ্বিমত প্রিন্সের
  • সরকার একতরফা নির্বাচন করতে উঠেপড়ে লেগেছে: জি এম কাদের
  • অন্তর্বর্তী সরকার একতরফা নির্বাচন করতে উঠেপড়ে লেগেছে: জি এম কাদের