চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: কোন দলে গেম চেঞ্জার কারা
Published: 19th, February 2025 GMT
উইকেটে এলেন ৩০তম ওভারে। মানে ওভার বাকি এখনো ২০টি। চাইলে ধরেও খেলতে পারতেন। ঝড় তোলার জন্য শেষের ওভারগুলোর জন্য অপেক্ষা করতেই পারতেন। কিন্তু প্রথাগত ওয়ানডে ইনিংস আপনার পছন্দ নয়। আপনি উইকেটে এসেই বেধড়ক মার দিয়ে উল্টো বোলারকে রাখলেন চাপে। মুহূর্তে খেলার চেহারা বদলে দিলেন। এটা যদি করতে পারেন, তাহলে আপনি একজন গেম চেঞ্জার।
এ তো গেল ব্যাটসম্যানের কথা। বোলাররাও এটা করতে পারেন। সে জন্য অবশ্যই তাঁকে নিতে হবে উইকেট। ফিল্ডাররা আর বাদ যাবেন কেন! একটা ক্যাচ খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে, এমন ঘটনা নেই নাকি!
বলে রাখা ভালো, এসব কোনো কিছু না করেও কেউ তাঁর দলকে জেতাতে পারেন। ওপেনিংয়ে নেমে ধরে খেলে শেষ পর্যন্ত দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ারও বাড়তি একটা মহিমা আছে। আবার কিপটে বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানকে চাপে রেখে সাফল্যর ঘটনাও অহরহ। তবে দিনে দিনে ‘হঠাৎ খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া’ ক্রিকেটারদের কদর একটু বেশিই বেড়ে চলছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও প্রতিটি দলে আছেন এ ধরনের ক্রিকেটার। যে দলে বেশি বেশি এ ধরনের ক্রিকেটার থাকবে, লড়াইয়ে তারাই থাকবে এগিয়ে।
ভারতের শ্রেয়াস আইয়ারের কথা ধরুন। আইয়ারের নাম শুনে চমকে উঠতে পারেন। এত নাম রেখে আইয়ার কেন? কিছু ক্রিকেটার এমন থাকে, যাঁদের প্রতিদিন নিজেদের প্রমাণ করতে হয়। আইয়ার সেই দলের। সে কারণেই নামটা নিয়ে একটু খটকা লাগতে পারে। তবে ভারতের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আগাগোড়া একজন গেম চেঞ্জার।
সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ দিয়েই বোঝানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। এ মাসের শুরুতেই নাগপুরে ভারত–ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচে ফিরে যান। ২৪৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা ভারতের ১৯ রানে ২ উইকেট নেই। সেখানে এসে চাইলেই তো ধরে ধরে খেলতে পারতেন। খেলেননি। করেছেন ৩৬ বলে ৫৯ রান।
ঘরের মাঠে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে এই আইয়ার কিন্তু ১১৩ স্ট্রাইক রেটে ৫৩০ রান করেছিলেন। এই পারফরম্যান্সও অবশ্য তাঁকে বেশি দিন আলোচনায় রাখতে পারেনি। ওই যে আগেই বলা হলো—প্রতিদিন প্রমাণ করতে হওয়াদের দলে আইয়ার। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও কি সেই প্রমাণের মঞ্চ হয়ে উঠবে?
ভারতের যদি আইয়ার হন, পাকিস্তানের এমন কে আছেন? খুব বেশি নেই। দলটি এখনো প্রথাগত ওয়ানডেই খেলে। মানে ব্যাটসম্যানরা শুরুতে সময় নিয়ে বুঝেশুনে হাত খোলেন। তবে তাঁদের মধ্যে একজনই ব্যতিক্রম। তিনি ফখর জামান।
খেলার চেহারা বদলে দিতে পারেন ফখর.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন আইয় র উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ