রোহিতের ২০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে কোথাও নেই ‘বাংলাদেশ’
Published: 19th, February 2025 GMT
২০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলন। ১৩ প্রশ্ন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার কোর্টে। সোজা ব্যাটে স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলার মতোই রোহিতের প্রতিটি উত্তর। একদমই সাদামাটা। ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে টুর্নামেন্ট নিয়ে ভাবনা, পরিকল্পনা, নিজেদের লক্ষ্য, প্রতিপক্ষ নিয়ে প্রশ্ন উঠে। অধিনায়কের কথাতেও ফুটে উঠে সেসব।
অথচ আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়ার আগে ভারতের অধিনায়কের বেশ লম্বা সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠল না একবারও। ১৩ প্রশ্নের কোনোটাতেই ছিল না বাংলাদেশের নাম। রোহিতের উত্তরেও ছিল না বাংলাদেশ। যার কোনো ব্যাখ্যা নিশ্চিতভাবেই থাকবে না। ভেন্যুতে উপস্থিত না থাকায় এই প্রতিবেদকের বাড়তি কিছু জানার সুযোগ নেই।
২০১৭ সালে সবশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত রানার্সআপ হয়েছিল। আইসিসি আয়োজিত সবশেষ টুর্নামেন্টে ভারত জিতেছিল শিরোপা। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এছাড়া ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তারা ঘরের মাঠে হয়েছিল রানার্সআপ। বৈশ্বিক এই আসরে তাদের থেকে সমর্থকদের প্রত্যাশা বেশ ভালোভাবেই জানেন রোহিত। সেভাবেই টুর্নামেন্টে এগিয়ে যেতে চান—
আরো পড়ুন:
ভারত-বাংলাদেশ: উত্তেজনা এক পাশে রেখে সবার মনোযোগ মাঠে
এপ্রিলে হতে পারে অধ্যাপক ইউনূস-মোদি বৈঠক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
‘‘২০১৭ সালের পর এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আট বছর হয়ে গেল। দেখুন আপনি যতগুলো আইসিসি ইভেন্ট খেলবেন প্রতিটিই জিততে চাইবেন। প্রতিটি সমান গুরুত্বের। শুধু এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নয়, শেষ বিশ্বকাপ যেটা আমরা খুব ভালো খেলেছি সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবারও তার কোনো পরিবর্তন হবে না। আমরা এখানে শিরোপা উচিয়ে ধরতেই এসেছি।’’
‘‘তবে শিরোপা ধরার জন্য বেশ কিছু বিষয় সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি। দল হিসেবে আমাদের নজর থাকবে মাঠে নিজেদের কাজগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা এবং সামনে এগিয়ে যাওয়া। এটাই আমাদের লক্ষ্য, ভাবনা। আমরা কিভাবে একটি একটি করে ম্যাচ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি এবং সেখান থেকে পরবর্তী ম্যাচ খেলতে পারি।’’
নিজের দল নিয়ে রোহিত বেশ আত্মবিশ্বাসী, ‘‘এই টুর্নামেন্ট হোক বা আইসিসির যেকোনো আয়োজন কিংবা ভারতের হয়ে যেকোনো ম্যাচ খেলতে নামা আমাদের জন্য অনেক বড় গর্বের। ভারতের হয়ে খেলতে পারা, নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা দারুণ কিছু। শুধু আমার জন্যই না, স্কোয়াডে থাকা ১৪ জনের জন্যও একই অনুভূতি।’’
‘‘আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আগামীকালকে ভালো শুরু করা। দলের প্রত্যেকে জানে তাদের কি করতে হবে। আমরা জানি আমাদেরকে কি করতে হবে, সেটা করে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’’ –যোগ করেন রোহিত।
ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এখনও পাহাড়ের নিচে বাস ২০ সহস্রাধিক মানুষের
২০১৭ সালের ১৩ জুনের ভয়াবহ পাহাড় ধসের দৃশ্য এখনও চোখে ভেসে উঠলে শিউরে উঠি। এখনও আমার ঘরের আশপাশে সেই পাহাড় ধসের চিহ্ন রয়ে গেছে। তাই অল্প বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে থাকি, আশ্রয়কেন্দ্র খুঁজি। কিন্তু আমরা অসহায় ও গরিব, যেখানে পেটের ভাত জোগাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে নিরাপদ ভাড়া বাসায় থাকার সামর্থ্য কোথায়? তাই মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই পাহাড়ের নিচে বসবাস করছি।
কথাগুলো বলছিলেন রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর লোকনাথ মন্দিরের পাশে সিএনবির পাশে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা পঞ্চাশোর্ধ্ব নূরজাহান। শুধু নূরজাহান নন, রূপনগর, মুসলিমপাড়া, শিমুলতলী, লোকনাথ মন্দির এলাকা, রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন নিচু এলাকা, কিনারাম পাড়াসহ শহরের অন্তত ২৯টি স্থানে ২০ হাজারের বেশি নিম্ন আয়ের মানুষ মারাত্মক ঝুঁকি জেনেও বসবাস করছে পাহাড়ের পাদদেশে। একটু ভারী বৃষ্টি এলেই সবার স্মৃতিতে ফিরে আসে, ২০১৭ সালের এ দিনে শহরে পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু পুনর্বাসন না হওয়ায় পাহাড়ের নিচে বসবাস বন্ধ হয় না। উল্টো দিন দিন বাড়ে।
এমন অবস্থায় আজ শুক্রবার ২০১৭ সালেই সেই ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনার আট বছর পূর্ণ হলো। ২০১৭ সালের ১৩ জুন ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর যুব উন্নয়ন বোর্ড এলাকা, মুসলিমপাড়া, শিমুলতলী, রূপনগর, সাপছড়ি, মগবান, বালুখালী, জুরাছড়ি, কাপ্তাই, কাউখালী ও বিলাইছড়ি এলাকায় ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের মৃত্যু হয়। মানিকছড়িতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ওপর থেকে মাটি সরাতে গিয়ে ৫ সেনা সদস্য পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়েন। ওই সময় পাহাড় ধসে জেলায় ১৬০০ থেকে ১৭০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সারাদেশের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল এক সপ্তাহ। দীর্ঘ তিন মাসের বেশি সময় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার পর ক্ষতিগ্রস্তরা নিজেদের জায়গায় ফিরে যায়। এ ছাড়া ২০১৮ সালে নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে দুই শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের কাপ্তাইয়ে ৩ জনের প্রাণহানি ঘটে।
২০১৭ সালের সেই পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল ও বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পরও ঝুঁকিতে থাকা লোকজনদের পুনর্বাসন করতে পারেনি প্রশাসন। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করেই দায় সারে তারা। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে স্থাপনা নির্মাণ না করতে মাঝেমধ্যে নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়। কিন্তু এই সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান আজও হয়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, রাঙামাটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে শিমুলতলী, রূপনগর, লোকমন্দির পাড়া, পোস্ট অফিস কলোনি এলাকা, নতুনপাড়া, বিদ্যানগর, কিনারামপাড়া, সিলেটি পাড়াসহ অন্তত ২৯টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া নানিয়ারচর, কাউখালীসহ কয়েকটি উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে। এসব এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে এখনও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রূপনগর, লোকনাথ মন্দির, মুসলিমপাড়া এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ওই পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। কথা হয় রূপনগর এলাকার বাসিন্দা সমলা আক্তার, কমলা বেগম, আব্দুল মান্নান ও শাহানা বেগমের সঙ্গে। তারা জানান, ভারী বৃষ্টি হলেই ভয় লাগে। কিন্তু তাদের যাওয়ার কোথাও জায়গা নেই। বেশি বৃষ্টি হলে জেলা প্রশাসন থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু সম্পদ হারানোর ভয়ে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে চায় না।
তারা আরও জানান, সবাই চায় ভালো ও নিরাপদ স্থানে বসবাস করতে। তাই সরকার যদি তাদের পুনর্বাসন করে তাদের জন্য ভালো হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের পুনর্বাসন চলমান প্রক্রিয়া। তবে এ ক্ষেত্রে জটিলতা হচ্ছে, যেখান থেকে মানুষজনদের সরিয়ে নেওয়া হয়, সেখানে আবারও নতুন লোকজন বসবাস শুরু করে। এসব এলাকায় লোকজন কম টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। তা ছাড়া পাহাড়ে ভূমি জটিলতা থাকার কারণে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বা পাহাড়ের ঢালুতে মানুষ বসবাস করছে। যারা অবৈধভাবে বসবাস করছে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নেওয়া হচ্ছে আইনি ব্যবস্থাও। তবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস বন্ধ করতে সচেতনতা সৃষ্টি জরুরি।