Samakal:
2025-08-01@03:14:54 GMT

বাংলাদেশ হউক বহুপক্ষীয়

Published: 20th, February 2025 GMT

বাংলাদেশ হউক বহুপক্ষীয়

বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা নহে; জাতিসত্তা রক্ষার আন্দোলনেও অমর দিবসরূপে দেদীপ্যমান। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বুকের তাজা রক্ত ঢালিয়া দিয়া ভাষাশহীদগণ কেবল দেশপ্রেমের অনন্য উদাহরণই সৃষ্টি করেন নাই; দিবসটি বাংলা ছাপাইয়া সকল ভাষার মর্যাদার স্মারক হইয়া উঠিয়াছে। একুশের চেতনা দেশ-কাল-পাত্রভেদে অধিকার আদায়ে প্রেরণার উৎসরূপে ক্রিয়াশীল। আমরা দেখিয়াছি, অধিকার আদায়ে বাঙালি ভাষা আন্দোলনের যেই সংগ্রাম রচনা করিয়াছিল, সেই পথপরিক্রমায়ই সূচিত হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। অকুতোভয় বাঙালি জনগোষ্ঠী এই ভূখণ্ডের অপরাপর জাতিগোষ্ঠীকে লইয়া দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জন করে স্বাধীনতা। স্বাধীনতার পরও যুগ যুগ ধরিয়া আন্দোলনের প্রেরণা হইয়া রহিয়াছে ভাষা আন্দোলন। এমনকি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানও উহার বাহিরে নহে। বায়ান্নতে ছাত্র-জনতা মুখের ভাষা রক্ষায় সোচ্চার হইয়া আন্দোলনে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও তাহারা প্রেরণা হইয়া উঠিয়াছিল। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দেয়ালে দেয়ালে মায়ের ভাষায় লিখিত গ্রাফিতি মানুষকে উজ্জীবিত করিয়াছিল। মাতৃভাষায় উচ্চারিত স্লোগান যে কতটা শক্তিশালী হইয়া উঠিতে পারে; যুগে যুগ দাবি আদায়ের আন্দোলনে উহা প্রমাণিত। যেই কারণে ঐতিহাসিক দিবসটি সাত দশক অতিক্রম করিলেও উহার চেতনা চিরঅমলিন।

আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রধান দুইটি দাবি ছিল– রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন। ১৯৫৪ সালেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় তৎকালীন পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা রাষ্ট্রভাষারূপে স্বীকৃতির মাধ্যমে প্রথম দাবি পূরণ হইলেও দ্বিতীয় দাবিটি এখনও প্রত্যাশিত মাত্রায় পূরণ হয় নাই। সর্বত্র বাংলা প্রচলনের প্রশ্নটা আমরা ফি বৎসরই করিয়া আসিতেছি। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিটা পর্যায়ে, প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাদের মাতৃভাষার প্রচলন কতটা হইয়াছে? যেই জাতির মানুষ ভাষার তরে জীবন দিয়াছে, সেই জাতির কোটি কোটি মানুষের পড়িতে ও লিখিতে না পারিবার বিষয় বেদনাদায়কই বটে। একই সঙ্গে মাতৃভাষা এখনও আমাদের সর্বত্র শিক্ষার বাহন হইয়া উঠিতে পারে নাই। উচ্চশিক্ষার পুস্তকসহ অনেক বিষয় আমরা এখনও বাংলায় করিতে পারি নাই। মাতৃভাষারূপে বাংলার দাপ্তরিক ব্যবহার বৃদ্ধি পাইয়াছে সত্য, কিন্তু আদালতের কর্মকাণ্ড এখনও ইংরাজিনির্ভর। 

তবে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঘোষণায় বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার ভাবমূর্তিই কেবল উজ্জ্বল হয়নি, একই সঙ্গে বিশ্বের সব মাতৃভাষাই বিশেষ মর্যাদা ও মনোযোগ লাভ করিয়াছে। জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষারূপে বাংলাও আবির্ভূত হউক। আমরা বিশ্বাস করি, সকলের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করিবার বিষয়ও একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা। অমর একুশে আমাদের জাতিসত্তা রক্ষার আন্দোলনরূপেও দেখিয়া আসিয়াছি। আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইহা প্রেরণার বাতিঘরস্বরূপ ক্রিয়াশীল। তজ্জন্য দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটেও পথ দেখাইতে পারে একুশের চেতনা।
আমরা জানি, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমাদের চ্যালেঞ্জ দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ। তজ্জন্য অবাধ-সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করিয়াছেন। এখন প্রয়োজন নির্বাচন ও অন্যান্য সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য। বিশেষত রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ঐকমত্য জরুরি।
আমরা প্রত্যাশা করিব, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দেশবাসী বায়ান্ন সালের ন্যায় দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হইবে। আমরা জানি, একুশে ফেব্রুয়ারি মানে বহুপাক্ষিকতা ও সকলের যথাযোগ্য মর্যাদার প্রশ্ন। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যেই পথ আমাদের সম্মুখে উন্মুক্ত, উহা সকলের জন্য অবারিত হউক। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন আম দ র কর য় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ১ বছর পূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের নিচ তলায় এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়েরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন বিষয় চিত্রকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং নির্ধারিত পুরস্কারের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কমিটিকে আহ্বান জানান।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থী সাজিদ স্মরণে ইবিতে ব্যতিক্রমী আয়োজন

জকসুর রোডম্যাপ ও সম্পূরক বৃত্তি দাবি শিক্ষার্থীদের

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ উপলক্ষ্যে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। চারটি বিভাগে প্লে গ্রুপ হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন।

ক বিভাগে প্লে গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ বিষয়ে; খ বিভাগে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ‘শিশুর চেতনায় জুলাই বিপ্লব’ বিষয়ে; গ বিভাগে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘ফিরে দেখা ৩৬ জুলাই’ বিষয়ে এবং ঘ বিভাগে নবম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ‘সমতল থেকে পাহাড়, স্বাধীনতা সবার’ বিষয়ে অঙ্কন করতে দেওয়া হয়।

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা চলাকালে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা (মাওলা প্রিন্স), লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব মো. অলি উল্লাহ, চারুকলা বিভাগের সহাকরী অধ্যাপক দিদারুল হোসাইন লিমন, চারুকলা বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক রাশেদুর রহমান প্রমুখ।

এই প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের আগামী ৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার প্রদান করা হবে।

ঢাকা/মুজিবুর/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’
  • তিতুমীর কলেজে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী
  • হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না: নাহিদ 
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • নরসিংদীতে আজ এনসিপির পদযাত্রা 
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
  • পাবিপ্রবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রজেক্ট শো
  • নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পথে নেমেছি: নাহিদ ইসলাম