খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের পথ দেখাতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই এই দায়িত্ব নেবে—এমন প্রত্যাশা করেন দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও লেখকেরা। তাঁরা অবশ্য এ–ও বলেন, আগামী ছয় মাসেই সব ঠিক হবে, এমন আশা প্রকাশ করাও ঠিক হবে না। তবে পথ দেখাবেন বর্তমান সরকারের নেতৃত্ব প্রদানকারীরা। বর্তমানে বৈষম্যহীন, সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ আছে।

আজ শনিবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের গভর্নরের স্মৃতিকথা শীর্ষক বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। দৈনিক বণিক বার্তা বইটি প্রকাশ করেছে। রাজধানীর আইসিএবি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নতুন বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালে এ বইয়ের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়।

অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। মানসম্পন্ন জীবনযাত্রা দিতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয় সংস্করণে গভর্নরের স্মৃতি কথা থাকবে না। এখনকার বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে চাই। শপথ নিয়েছি তো, তাই অনেক কথা এখন বলতে পারি না।’

বইয়ের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘ছাত্রজীবনে আমি যে সংগঠনের রাজনীতি করতাম, লেখকও সেই ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। লেখকের রাজনীতিতে যেমন সংযোগ ছিল, তেমনি পড়াশোনায় সংযোগ ছিল।’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে—এই বইয়ে সেই চিত্র উঠে এসেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বিকাশ কীভাবে ঘটেছে, সেই বিষয়েও এতে আলোকপাত করা হয়েছে।

লেখক ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন, ব্যাংক খাত ঠিক করার সুযোগ এখন। কারণ, এখন রাজনৈতিক চাপ নেই। তিনি প্রবাসী শ্রমিকদের মর্যাদা দেওয়ার আহ্বান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীরের মতে, বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ আছে এই বইয়ে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশের গভর্নরকে পালিয়ে যেতে হয়। নীতিনির্ধারণের সময় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হয়। খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখাবে বর্তমান সরকার, এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ষাটের দশকের রাজনীতির একটি চিত্র পাওয়া যায় গভর্নরের স্মৃতিকথা বইয়ে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, দেশকে উন্নত করতে হলে গ্রামের দিকে নজর দিতে হবে। আর গরিব মানুষকে দেখতে হলে বিনয়ী হতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক কাজী মারুফুল ইসলাম মনে করেন, ‘এত দিনের বাজার বন্দোবস্তে একটুও আঁচড় লাগেনি। সরকারের তরফেও কোনো উদ্যোগ দেখছি না।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র জন ত পথ দ খ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ