বহুভাষিক মানুষের সম্প্রীতির চিত্র
Published: 22nd, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ১ম মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্যোৎসবের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিভাগীয় উৎসবে মঞ্চস্থ হলো বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাটক চইংজাঃখ্রাং, যার বাংলা অর্থ কল্পনা বা কাল্পনিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবীর মহাজনের নাট্যভাবনা, গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় নাটকটি প্রযোজনা করেছে বান্দরবান জেলা শিল্পকলা একাডেমি। নাটকটির ইতিবৃত্ত ঘেঁটে যতটুক জানা যায়, তা হলো পুরো নাটকটি একটি কর্মশালাভিত্তিক প্রয়োজনা, যেটির গ্রন্থনা, নাট্যরূপ দেওয়া ও নির্দেশনার কাজ ১৫ দিনের মধ্যে সমাপ্ত করতে হয়েছে। রিহার্সেল রুমে বসেই নাট্যকার নাটকটির সংলাপ রচনা করেন এবং ১৫ দিনের মধ্যেই বান্দরবান জেলা শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে মঞ্চস্থ করা হয়। এটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত দুরূহ একটি কাজ। এই অসম্ভব কাজটিকে সম্ভব করে তুলেছেন নাট্যকার ও নির্দেশক সুবীর মহাজন। বান্দরবানের একঝাঁক সম্ভাবনাময় শিল্পীর অংশগ্রহণে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মিলনায়তনে।
এবার আসা যাক নাটকের আলোচনায়। নাটকটিতে ছিল বহুভাষিক মানুষের সম্প্রীতির মিলনমেলার চিত্র, বান্দরবানের মানুষের জীবনবোধের বিভিন্ন আঙ্গিক, যা নাট্যকার সুচারুভাবে তুলে এনেছেন। নাটকে আরও রয়েছে বিভিন্ন অসংগতি ও সিস্টেম নামক এক বোঝায় সাধারণ নাগরিকের পিষ্ট হওয়ার জটিলতর বিষয়। উঠে এসেছে জুম চাষে পাহাড়ি কৃষকের পরিশ্রম, দু’মুঠো আহারের প্রতীক্ষা, উঠে এসেছে তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, আধুনিকতার ভিড়ে নিজস্ব ভাষা হারিয়ে যাওয়ার নির্মম সময়ের পটভূমি। নাটকে আরও আছে শিক্ষার নামে অপশিক্ষা ও শিক্ষকদের দুর্নীতিপরায়ণতা।
শেষের অংশে নাট্যকার দুর্দান্ত ক্যারিশমায় তুলে এনেছেন এদেশ তথা পুরো দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে সিস্টেমের নামে নিরীহ জনগোষ্ঠীর পিষ্ট হওয়ার বাস্তবতা। যেখানে দেখানো হয়েছে একজন অসহায় নাগরিক একটি গাছের নিচে চাপা পড়েছেন। তাকে উদ্ধারে প্রশাসনের সবাই ব্যর্থ হচ্ছেন কেবল সিস্টেম জটিলতার কারণে।
নাট্যঘটনা এগিয়ে যায় এক তরুণকে ঘিরে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তরুণদের বড় একটি অংশ হতাশায় নিমজ্জিত। অথচ তারুণরাই বারবার পথ খুঁজে দিয়েছে। বহুভাষিক মানুষের জেলা বান্দরবানের এক তরুণ বর্তমানের নানা পারিপার্শ্বিকতায় ক্লান্ত হয়ে যখন ঘুমের রাজ্যে তখন তার চোখজুড়ে ফিরে আসে শৈশব-কৈশোর, ক্লান্ত শরীর তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে বাস্তবে। স্বপ্নের ঘোরে সে ঘুরে বেড়ায় অপার্থিব প্রকৃতির রাজ্য বান্দরবানে; যেখানে রয়েছে জীবন ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় বিশাল ভান্ডার। ঘুম তাকে ফিরিয়ে দেয় সোনালি সময়। যখন বর্তমানে ফিরে আসে নানা জটিলতায় আবদ্ধ হয়ে যায় তরুণটি। সিস্টেম নামক এক জগদ্দল পাথর সরাতে চায় সে। পাহাড় আর সমতলকে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতার একই সুঁতোয় মেলবন্ধন ঘটাতে সে বদ্ধপরিকর।
১৫ দিনব্যাপী কর্মশালার মধ্য দিয়ে নাটকটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বান্দরবানের বসবাসরত বিভিন্ন ভাষিক জনগোষ্ঠীর মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় নাটকটি মঞ্চায়ন হয়। নাট্যকার এস এম সোলায়মানের ইঙ্গিত নাটকের কয়েকটি দৃশ্যে সংযোজন করা হয়েছে।
নাটকের সহকারী নির্দেশনায় ছিলেন আছাদ বিন রহমান। পোশাক ও দ্রব্যসামগ্রী পরিকল্পনা অরুন্ধতী চন্দ আঁচল। প্রযোজনা অধিকর্তা হিসেবে ছিলেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাচ্চু।
এবার নির্দেশনা, অভিনয় ও কারিগরি বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক। নাটকটির প্রতিটি শিল্পীই একেবারেই নবীন। অভিনয় করার কারও কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা তাদের নেই। নবীন শিল্পীদের কাছ থেকে নির্দেশক যা আদায় করে নিয়েছেন বা নিতে পেরেছে তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। সংলাপ প্রক্ষেপণের সাথে সাথে সেটকে একই শিল্পী কতৃক পুন সজ্জিত করা নাটকে ভিন্ন মাত্রা তৈরি করেছে। অভিনেতা সংলাপ দিচ্ছেন আবার মঞ্চসজ্জার কাজও করছেন; বিষয়টি অদ্ভুত ভাল লাগার জন্ম দিয়েছে। একজন দক্ষ নির্দেশক না হলে নবীন কোন অভিনেতার কাছ থেকে আদায় করে নেয়া সম্ভব নয়।
নবীন হলেও দু একজন ছাড়া প্রতিটি অভিনেতা অভিনেত্রী অভিনয় দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। শ্রাবণের ভূমিকায় অভিনয় করা অভিনেতার সংলাপ কম হলেও তার অভিনয়ে দক্ষতার ছাপ ছিল। তার লাইভ বাঁশি বাজানো দর্শকদের দারুণভাবে মুগ্ধ করেছে। মায়ের ভূমিকায় থাকা অভিনেত্রীও বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কথকের অভিনয় ভাল লেগেছে। বাদ্যের তালে তালে হালকা মুদ্রার নৃত্য নাটকটিকে বেশ উপভোগ্য করে তুলেছে। দর্শক কেবল শুধু তত্ত্বগত দিক নয় সাথে বিনোদনও চায়। নাটকটি দর্শকের সেই চাহিদা পূর্ণ করতে সমর্থ হয়েছে। সব চেয়ে ভাল লেগেছে নৃত্য অংশে অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়ন্ত্রিত কোরিওগ্রাফি। সব ভাল'র মধ্যে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতিও থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অপ্রিয় হলেও কিছু ত্রুটি তুলে না ধরলেই নয়।এ কজন দুজন অভিনেতা অতি অভিনয় করছেন বলে মনে হয়েছে। নাটকটির চমৎকার একটি দৃশ্য ছিল নদীর ঢেউ তৈরি করা। কিন্তু ঢেউয়ের শেষের দিকে যখন ধীরে লাইট জ্বলে উঠলো তখন ঢেউয়ের সাদা পর্দা তখনো মঞ্চে বিদ্যমান যা এই দৃশ্যের পুরো আমেজটাই নষ্ট করে দিয়েছে।
সব শেষে বলা যায়, সবকিছু মিলিয়ে এই নাটকটি একটি অনন্য ধারার উঁচুমানের প্রযোজনা। নাটকে দর্শক এক মুহূর্তের জন্যও চোখ ফেরানোর ফুরসৎ পায়নি।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোমেন চৌধুরী, আশিক হাসান, জুয়েল হোসেন, হারুন অর রসিদ, রতন খেয়াং, পংরাও ম্রো, হ্লাশৈ মারমা, ছংলিও ম্রো, মেসাইওয়ং মারমা, ওয়াইচিংপ্রু মারমা, নুম্যাশৈ মারমা, মিটন কুমার নাথ, মেসাচিং মারমা, ডমেচিং মারমা, ক্যউপ্রু মারমা, শ্রেয়া পুরোহিত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন টক ব ন দরব ন র শ ল পকল ন টকট র এক ড ম
এছাড়াও পড়ুন:
আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’
এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স