Samakal:
2025-06-16@04:13:24 GMT

গরিবের ভরসা ইমপ্যাক্ট জীবনতরী

Published: 22nd, February 2025 GMT

গরিবের ভরসা ইমপ্যাক্ট জীবনতরী

রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদ ফকির। সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালান। চোখের সমস্যার কারণে ভালোভাবে কাজ করতে পারছিলেন না। অর্থাভাবে যেতে পারছিলেন না চিকিৎসকের কাছেও। সম্প্রতি জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালের কথা জানতে পারেন। সেখানে গিয়ে খুব কম খরচে চিকিৎসা করিয়ে এখন তিনি ঠিকঠাক চোখে দেখতে পারছেন। 
এভাবেই নদীতীরবর্তী আর দুর্গম এলাকার মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছে ‘ইমপ্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতাল’। হাসপাতালটি এখন রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর মৌলভীঘাটে অবস্থান করছে। এ হাসপাতালে অত্যন্ত কম খরচে চিকিৎসাসেবা পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ। 
মাহমুদ ফকির জানান, তাঁর চোখের সমস্যার কারণে অনেক দিন ধরে ঠিকমতো কাজ করতে পারছিলেন না। তাঁর ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। মাথাব্যথার কারণে তাঁর ছেলের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছিল। বাবা-ছেলে দু’জনই জীবনতরী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক দেখিয়েছেন। টিকিট, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব মিলিয়ে দু’জনের খরচ হয়েছে মাত্র তিনশ টাকা। এত কম খরচে ভালো চিকিৎসা পেয়ে খুশি তিনি। 
জীবনতরী হাসপাতাল সূত্র জানায়, ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১৯৯৯ সালে জীবনতরী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ২৫ বছরে দেশের প্রায় ৫০টি জেলা ভ্রমণ করেছে হাসপতালটি। মূলত প্রান্তিক বা পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর সেবা দেওয়াই এর মূল লক্ষ্য। মাত্র ৫০ টাকা টিকিট কেটে যে কেউ চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন। হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে চক্ষু রোগের চিকিৎসা ও ছানি অপারেশন, রোগীর চাহিদা অনুযায়ী লেন্স সংযোজন ও ফ্যাকো সার্জারি, নাক-কান-গলা রোগের চিকিৎসা ও অপারেশন করা হয়। এছাড়া জন্মগত বাঁকা-পা, ঠোঁট কাটা ও তালুকাটা রোগের অপারেশন, অর্থপেডিক সমস্যাজনিত শারীরিক ব্যথা, মাজাব্যথা, মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়। তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চারজন নার্সসহ মোট ৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী হাসপাতালটিতে কর্মরত। শুক্রবার বাদে সপ্তাহের ছয় দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেওয়া হয় চিকিৎসাসেবা। গত ১ জানুয়ারি থেকে রাজবাড়ীতে অবস্থান করছে হাসপাতালটি। মার্চ মাসজুড়ে বা এর চেয়ে বেশি দিন এটি এখানে থাকছে বলে জানা গেছে।
গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সোনাকান্দর মৌলভীঘাট এলাকায় পদ্মা নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, নোঙর করে রাখা হয়েছে আকাশি-সাদা রঙের তিনতলা হাসপাতালটি। নদীতীর থেকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বালুর বস্তা ও বাঁশের মাচা দিয়ে রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। রোগীরা যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। নদীর পারে রয়েছে টিকিট কাউন্টার। এ সময় কথা হয় ধুঞ্চি গ্রামের বাসিন্দা শাহেদা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছেন। চোখে কম দেখেন। কোরআন তেলাওয়াত করতে অসুবিধা হয়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। এখানে কমমূল্যে চিকিৎসার কথা শুনে এসেছেন। ৫০ টাকা টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখিয়েছেন। খুব যত্ন নিয়ে তাঁর চোখ দেখেছেন তারা। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছেন। এখানে চিকিৎসা পেয়ে সন্তুষ্ট তিনি। 
স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম, রাকিবুল হোসেনসহ অনেকেই জানান, দুর্গম চরের মানুষ সব সময় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। জীবনতরী হাসপাতাল তাদের এলাকাতে আসায় মানুষের অনেক উপকার হয়েছে। যতদিন থাকবে ততদিন তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের কাছে শুনেছেন হাসপাতালটিতে ভালো চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। 
জীবনতরী হাসপাতালের প্রশাসক চিকিৎসক একেএম সহিদুল হক বলেন, হাসপাতালটিতে দিনে গড়ে ৭০–৮০ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। মূলত মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্যই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে অত্যন্ত কম মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়ে থাকে। মাত্র চার হাজার টাকায় জটিল সব অপারেশন করা হচ্ছে। নদ-নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ বেশির ভাগই তুলনামূলক দরিদ্র হয়। তাদের পক্ষে বেশি টাকা খরচ করে শহরে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা নেওয়া কঠিন। তাই তাদের সুবিধার্থে ২৫ বছর ধরে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। যে এলাকায় যান সেখানে সাধারণত দুই থেকে ছয় মাস অবস্থান করে তারা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন। রাজবাড়ীতে তিন মাস বা তারও বেশি সময় অবস্থান করতে পারেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

তিনভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে

সরকারের ওপর তিনভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝারি মাত্রায় আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানখাত সম্পর্কিত বিশ্লেষণে করে দেখা গেছে- সম্মিলিতভাবে এসওই খাত দেশের সরকারের জন্য মাঝারি মাত্রার ফিসকাল ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এসওই এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বিকভাবে সরকারের আর্থিক অবস্থার ওপর তিনভাবে প্রভাব ফেলে।

প্রথমত, যদি এসওই-এর ঋণের জন্য গ্যারান্টি দেয় এবং তারা সেই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকারের তা পুনর্ভরণসহ আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। এটি ঘটতে পারে যদি প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে যায় বা তাদের প্রকল্পগুলো আশানুরুপ উৎপাদশীলতা দেখাতে ব্যর্থ হয়।

দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি না হলেও যদি তারা ক্রমাগত লোকসান করে, তাহলে তাদের সচল রাখতে সরকারকে বাড়তি পুঁজি যোগান দিতে হতে পারে।

তৃতীয়ত, যদি এসব প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত মুনাফা না করতে পারে তাহলে সেটিও সরকারের রাজস্ব আয়ে চাপ বাড়াতে পারে। সার্বিকভাবে দেখা গেছে যে, এসওই সমূহের সম্পদকে সুচিন্তিতভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন, যাতে সর্ব্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করা যায়।

এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারকে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে আট ধরণের নীতি কৌশল গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। এই নীতি কৌশলের মধ্যে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের জনগণকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে সুরক্ষা দিতে সরকার ওএমএস (খোলা বাজারে খাদ্য পণ্য বিক্রি) টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডের মতো কর্মসূচি চালু করেছে। সরকার ডায়নামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রি তৈরির মাধ্যমে উপকারভোগীর সহায়তাপ্রাপ্তি ব্যবস্থা পূর্ণ অটোমেশন করার উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারে।

বিদ্যুৎখাতের পরিকল্পনা বিষয়ে নীতি কৌশলে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎখাতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকার ২০২৬ -২০২৭ অর্থবছরে তিন বছর মেয়াদে একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে, যার মাধ্যমে  বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে ভর্তুকি কমিয়ে এখাতকে আর্থিকভাবে টেকসই করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সার ব্যবস্থাপনা পুনঃমূল্যায়ন করছে এবং কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণের প্রাপ্যতা ও সরবরাহে যেনন কোনো বিঘ্ন না ঘটে তা নিশ্চিত করছে।

ঋণ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও আর্থিক ঝুঁকি কমাতে সরকার অর্থ বিভাগের অধীনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং বন্ড/বিল বাজার উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

নীতি কৌশলের বিষয়ে আরও রয়েছে, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ জোরদারে সরকার আর্থিক লেনদেনের অটোমেশন করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা যেতে পারে।

রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ‘মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল(এমএলটিআরএস,২০২৫)’ ও ‘ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার নীতিমালা’ গ্রহণ করা হয়েছে।  এসব কাঠামোগত সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ ও কার্যকর করার মাধ্যমে সরকার ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য দক্ষ এসেট ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি গ্রহণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকার একটি দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে, যার মাধ্যমে মধ্যমেয়াদে বিভিন্ন ঝুঁকি অর্থায়নের উত্তম বিকল্পের মূল্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একটি সামগ্রিক দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং সাড়া প্রদান কৌশল তৈরি করা যেতে পারে বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের নীতি বিবৃতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ