দুই মাসে শেয়ারবাজারে দুর্বল কোম্পানি নিউলাইন ক্লথিংস ও ইয়াকিন পলিমারের শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অথচ জেড শ্রেণিভুক্ত এই দুই কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের ঠিকমতো লভ্যাংশও দিতে পারছে না। অথচ শেয়ারবাজারে গত দুই মাসে কোম্পানি দুটির শেয়ারের দাম বেড়েছে লাফিয়ে।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২৩ ডিসেম্বর নিউলাইন ক্লথিংসের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৬ টাকা ৪০ পয়সা। আজ রোববার দিন শেষে এই দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ২০ পয়সায়। সেই হিসাবে দুই মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৪ টাকা ৮০ পয়সা বা ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। অথচ কোম্পানিটির নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমও হয় না। এ কারণে কোম্পানিটি দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত। তাই কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে কোনো ঋণসুবিধাও পান না বিনিয়োগকারীরা। তারপরও বাজারে গত কয়েক মাসে লাফিয়ে বেড়েছে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম। অস্বাভাবিক এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটিকে চিঠি দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি কোম্পানিটি।

একইভাবে ইয়াকিন পলিমারের শেয়ারের দাম দুই মাসের ব্যবধানে ৬ টাকা বা ৭২ শতাংশ বেড়েছে। গত ২২ ডিসেম্বর ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৮ টাকা ২০ পয়সা। আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ১০ পয়সায়। এর মধ্যে আজও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ বা ১ টাকা ২০ পয়সা বেড়েছে। সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ারের মালিকানা বদল হয়েছে। কিন্তু আদালতের অনুমতি না পাওয়ায় কোম্পানিটি বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম করতে পারছে না। এমনকি ২০২০ সালের পর কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশও দেয়নি। তারপরও বাজারে ইয়াকিন পলিমারের শেয়ারের দামও লাফিয়ে বাড়ছে।

শেয়ারের অস্বাভাবিক এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটিকে চিঠি দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আজ রোববার পর্যন্ত কোম্পানিটির পক্ষ থেকে সেই চিঠির কোনো জবাব দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় কোম্পানি দুটির শেয়ারের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা মনে করছেন, দুর্বল মানের কোম্পানি দুটির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। কারসাজির মাধ্যমে হয়তো একটি গোষ্ঠী এই দুটি শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছে। কোম্পানি দুটির অস্বাভাবিক এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারসাজির কোনো ঘটনা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড এসই

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও