প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘‘চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’’ 

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

এতদিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছর জুনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো ন্যূনতম সংস্কার চাইলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে এবং বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছর জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আরো পড়ুন:

সিরাজগঞ্জ ও ঝিনাইদহের ৯টি আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা

মে-জুনের মধ্যেই ভোটের পূর্ণ প্রস্তুতি: বিএনপিকে বলল ইসি

ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘কালবৈশাখী ও ঝড়-বৃষ্টির কারণে এপ্রিল থেকে জুন নির্বাচন আয়োজনের জন্য এতটা উপযোগী না।’’

নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা নিয়ে কিন্তু অনেকবার কথা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা, অন্যান্য উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের অনেকেই এটা নিয়ে কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা আগে দুইটা ডেইট বলেছিলেন, একটা হচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে ইলেকশন যদি রাজনৈতিক দলগুলো কম রিফর্ম চায়। আর যদি তারা চান আমরা আরো কিছুদিন থাকি তাহলে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছিলেন (আগামী বছরের) প্রথমার্ধে হবে।

‘‘কিন্তু এখানে প্র্যাকটিক্যাল একটা ইস্যু হচ্ছে যে, এপ্রিল মাসের থেকে কালবৈশাখী ও ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। জুনে আবার মনসুন (বর্ষাকাল) শুরু হয়ে যায়। ফলে ওই তিনটা মাস আসলে ইলেকশনের জন্য অতটা উপযোগী না। সেজন্য আমাদের ধারণা ইলেকশন হয় ডিসেম্বরের মধ্যে হবে, নতুবা ম্যাক্সিমাম মার্চের মধ্যে।’’

আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘এটা অন্তর্বর্তী সরকার দেখবে। এটা উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত। এখনো এ বিষয়ে কোনো আলাপ হয়নি উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে।”

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সুপারিশ করেছিল স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।

প্রেস সচিবের ভাষ্য, বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের ‘বিরোধিতা করলেও’ অনেক দলই ‘এটার পক্ষে আছে’।

নতুন রাজনৈতিক দল গঠনকে কেন্দ্র করে তথ্য উপদেষ্টা নাইদ ইসলাম উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলে গুঞ্জন আছে। এ বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘‘এখনো পর্যন্ত তথ্য উপদেষ্টা পদত্যাগ করেননি। বাকিটা ওনার বিষয়। আমরা এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’’

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদলের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘এটা আমরা এখনো জানি না, কোনো ডিসিশন আছে কি না।’’

ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলোর কপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানোর তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ রিপোর্টগুলো বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য কমিশনকে তাদের ফিডব্যাক জানাবে।’’

সংস্কার প্রস্তাবের ওপর তাদের মতামত পাওয়ার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনার উদ্যোগ নেবে, যোগ করেন তিনি।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড স ম বর ন র জন বছর র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি

সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) বিষয়ে একমত পোষণ করলেও এটি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে।’

আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেই রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনকে কার্যকর আলোচনা জন্য আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষে সংবিধান সংশোধনের জন্য ‘টু-থার্ডস মেজরিটি’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন—এমন কথা বলা হলেও, বিশ্বজুড়ে এফপিটিপি (যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান) ও পিআর উভয় পদ্ধতিতেই বৈধতা রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।

কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন সময়সীমাকে এনসিপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান দলটির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সিদ্ধান্তগুলো তৎক্ষণাৎ কার্যকর হোক।’ তিনি বলেন, ‘১ শতাংশ ভোট পেলেও যেন একটি দল একজন করে প্রতিনিধি উচ্চকক্ষে পাঠাতে পারে—এটি বহু মতের ও বহু দলের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। আইন পাসের আগে যদি উচ্চকক্ষে আলোচনা হয়, তাহলে ভুলত্রুটি ধরার সুযোগ তৈরি হবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরেও আইন নিয়ে আলোচনা গড়ে উঠবে।’

‘বর্তমানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেভাবে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটা যেন না হয়’ উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব থাকলে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও জনগণের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।’

উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তাঁরা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—তাঁরা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কি না। আমরা বিশ্বাস করি, ১০০ আসনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশ একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে। এতে গণতন্ত্রচর্চার নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’

আলোচনার সময় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আখতার হোসেন। যদিও কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে, তবে সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে বলেও তিনি দাবি করেন।

আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ১০০ আসনের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যেখানে প্রতিনিধিরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। এ কক্ষে নিম্নকক্ষ থেকে পাঠানো বিল সর্বোচ্চ দুই মাস আটকে রাখা যাবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘সিম্পল মেজরিটি’র কথা বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে কমিশনের সভা বর্জন বাম দলগুলোর
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
  • সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের, সদস্য মনোনীত হবেন পিআর পদ্ধতিতে
  • ‘জুলাই সনদের’ দাবিতে শাহবাগে অবরোধ, যানজট
  • ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করলে এনসিবি তা করবে: আখতার হোসেন
  • খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি
  • প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে
  • ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার প্রত্যাশা
  • ‘বাদ দেওয়ার চেষ্টা হলেও ঘোষণাপত্রে নিশ্চিত হবে জুলাই ছাত্র-জনতার ন্যায্য স্বীকৃতি’