বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী মুনতাসির আল জেমির কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে কারা অধিদপ্তর (উন্নয়ন)। সোমবার রাতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মুনতাসির আল জেমিসহ কারাগার থেকে অন্যান্য আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে। 

আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ সোমবার সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, আবরার হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুনতাসির আল জেমি গত বছরের ৬ আগস্ট কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই সংবাদটি কারা কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষে কারা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে যে, সংশ্লিষ্ট মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দী কয়েদি নং-৫১৭৭/এ মুনতাসির আল জেমি ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০২ জন বন্দির সঙ্গে একত্রে (৮৭ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দী) কারাগারের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে ওই বছরের ১৫ আগস্ট কোনাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের এবং তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। 

এতে আরও বলা হয়, সকল কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে ৩৫ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তসহ ৫১ জন বন্দীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বন্দীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। 

উল্লেখ্য, আবরার হত্যা মামলায় বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডিত ২২ জন বন্দির মধ্যে বর্তমানে ২১ জন কারাগারে আটক আছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আবর র ফ হ দ আবর র

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ