নিয়ম রক্ষার ম্যাচে বাংলাদেশ যেখানে এগিয়ে!
Published: 27th, February 2025 GMT
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির গ্রুপ পর্বের শেষ রাউন্ডের খেলা শুরু হচ্ছে স্বাগতিক পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে। রীতি অনুযায়ী এই ম্যাচ ঘিরে নানান উত্তাপ ছড়ানোর কথা ছিল। তবে আসর থেকে এই দুই দলেরই বিদায় ঘন্টা বেজে গিয়েছে সবার আগে। তাই তো এই ম্যাচে যেই জিতুক সেমি ফাইনালে উঠতে পারবে না কেউই। আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিতব্য এই ম্যাচটা তাই কেবলই নিয়ম রক্ষার।
আসরে খেলে ফেলা প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ আবারও প্রামণ পেয়েছে যে, তাদের ব্যাটিং আধুনিক ক্রিকেটের মান থেকে বহু দূরে। ভারতের বিপক্ষে ১৫৯টি ডট খেলার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং স্বররগে ১৮১টি ডট খেলেছে টাইগাররা। ফিল্ডিংয়ে টাইগাররা ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়া সব দলের চেয়ে পিছিয়ে!
এদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট সংস্কৃতিটা এমন যে কারও ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে মূল সমস্যার দিকে যেতে না পারলেই বাঁচে বোর্ড, টিম ম্যানেজম্যান্ট, গণমাধ্যম এবং দর্শক। এবার সেই দোষটা গিয়ে পড়েছে মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উপর।
আরো পড়ুন:
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ
মুলতানে পাকিস্তানের বড় লিডের দিনে ফিরে এল বাংলাদেশ
শেষ ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাই এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ভবিষ্যতের কথা (২০২৭ বিশ্বকাপ) মাথায় রেখে এখনই দল থেকে ছাটাইএয় দাবি উঠেছে গণমাধ্যম এবং দর্শকদের দিক থেকে। এমনকি পাকিস্তানের বিপক্ষে একাদশের বাইরে রাখার জোর দাবি করেছে অনেকে। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের জানালেন, “যেহেতু টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছি, কাউকে সুযোগ দেওয়ার মতো আসলে অবস্থা নেই। এখানে সেরা ১১ জন নিয়েই মাঠে নামা উচিত।”
সালাউদ্দিনের কথায় স্পষ্ট যে পাকিস্তানের বিপক্ষে মুশফিক এবং রিয়াদ একাদশে থাকবেন। গুঞ্জন আছে যে এটাই এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের শেষ ম্যাচ হতে পারে। তবে সালাউদ্দীন জানালেন এই দুই ক্রিকেটার এখনও খোলাসা করে কিছুই জানাননি, “গুঞ্জন আপনারা যেহেতু শুনেছেন, আপনারাই ফলটা দিয়ে দিয়েন। আমরা তো কোনো কিছু শুনিনি।”
অন্যদিকে কাছাকাছি অবস্থা বিরাজ করছে প্রতিপক্ষ শিবির পাকিস্তানেও। তাদেরও ব্যাটিং দেখলেও মনে হয়, সেই নব্বই দশকেই পড়ে আছে। ফিল্ডিংয়েরও সেই একই অবস্থা, হাতে এসে পড়া বল তালুবন্ধি করতে ব্যর্থ। মাঝের দিকে কিংবা শেষের দিকে বোলাররা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে আসরের সবচেয়ে বাজে দুই দলেরই লড়াই দেখতে যাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্ব।
এই ম্যাচের আগে এই দুদল মুখোমুখি হয়েছিল ৩৯ বার। সেখানে পাকস্তানের ৩৪ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশর জয় ৫টিতে। তবে আজকের ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্তর দলই এগিয়ে। আইসিসির বৈশ্বিক আসরগুলোতে বহুদিন ধরেই গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ যে টাইগারদের জন্য নিয়ম রাক্ষারই হয়ে আসছে। সেই তুলনায় পাকিস্তান খানিকটা পিছিয়েই থাকবে।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই ম য চ এই দ ই
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।