ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়– এটি আবেগ, ভালোবাসা আর স্মৃতির এক অমূল্য সংকলন। বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কিংবা মেয়েদের বিশ্বকাপ– প্রতিটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) টুর্নামেন্ট বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্তকে একত্র করে, পরিণত হয় এক মহোৎসবে। স্মরণীয় মুহূর্তগুলো ধরে রাখার এক বিশেষ মাধ্যম হলো ক্রিকেট স্মারক সংগ্রহ। এর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ আইসিসি ইভেন্টের অফিসিয়াল মার্চেন্ডাইজ।
বাংলাদেশে আইসিসির প্রথম বৈশ্বিক ইভেন্ট হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম আসর ‘উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপ ১৯৯৮’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকায়, যেখানে অংশ নিয়েছিল ৯টি দেশ। আমার জন্য এটি এক অনন্য স্মৃতি হয়ে রয়েছে, কারণ আমার বাবা, বীর মুক্তিযোদ্ধা জি এম পাইকার আমাকে সেই ইভেন্টে ‘বলবয়’ হিসেবে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এর ফলে আমি কাছ থেকে দেখতে পেয়েছিলাম বিশ্ব ক্রিকেটের তৎকালীন সেরা তারকাদের। সে সময় থেকেই শুরু হয় আমার অটোগ্রাফ সংগ্রহ ও ক্রিকেট স্মারক সংগ্রহের নেশা। যদিও তখন শুধু কিছু ফটো আর অটোগ্রাফই সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম। প্রায় ১৯ বছর পর, ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের এক ক্রিকেট স্মারক সংগ্রাহকের কাছ থেকে সেই ইভেন্টের একটি ‘অফিসিয়াল টাই’ সংগ্রহের সুযোগ হয়।
ক্রিকেট স্মারক সংগ্রহ করা শুধু ভালোবাসা বা শখের বিষয় নয়, এটি এক ধরনের ঐতিহাসিক সংরক্ষণও বটে। বিশেষ করে আইসিসির অফিসিয়াল মার্চেন্ডাইজ সংগ্রহ করা অনেক ভক্তের কাছে টুর্নামেন্টের রোমাঞ্চকর স্মৃতি ধরে রাখার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
মার্চেন্ডাইজ বলতে বোঝায় বিশেষ কোনো ক্রীড়া ইভেন্ট, দল বা খেলোয়াড়কে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ও বিক্রীত পণ্য, যা সাধারণত অফিসিয়ালভাবে প্রস্তুত ও বাজারজাত করা হয়। এটি আয়োজকদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্থান। অফিসিয়াল জার্সি, চাবির রিং, ক্যাপ, ব্যাজ, মাসকট, ব্যাগ, ট্রফির রেপ্লিকা এসব পণ্য ভক্তদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
আমার প্রথম অফিসিয়াল আইসিসি মার্চেন্ডাইজ সংগ্রহের যাত্রা শুরু হয় ২০১১ বিশ্বকাপ থেকে; যখন ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। সেই বিশ্বকাপে সংগ্রহ করা টি-শার্ট, কোট পিন, চাবির রিং, ক্যাপগুলো আজও আমার সংগ্রহে এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে।
স্মারক সংগ্রহের অন্যতম সৌন্দর্য হলো এগুলোর পেছনের গল্প। অনেকে স্টেডিয়ামে গিয়ে এগুলো সংগ্রহ করেন, আবার কেউ অনলাইনের মাধ্যমে দূর থেকেও সংগ্রহ করেন। বিশ্বকাপ ট্রফির আইকনিক ডিজাইন ও লোগোযুক্ত জিনিসপত্র বিশেষভাবে সংগ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয়। ম্যাচের টিকিট, যা প্রায়ই দলের লোগো ও সুন্দর গ্রাফিকসের মাধ্যমে মুদ্রিত হয়, সংগ্রহকারীদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে ওঠে। কোটপিন ও চাবির রিংও সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়, কারণ এগুলো সূক্ষ্ম নকশায় টুর্নামেন্টের চিহ্ন বহন করে। এমনকি সাধারণ মগ কিংবা চাবির রিংও বিশ্বকাপের অনন্য মোটিফ দিয়ে সজ্জিত থাকে।
বিশ্বজুড়ে অনেক ক্রিকেট স্মারক সংগ্রাহক রয়েছেন, যারা আইসিসি ইভেন্টের অফিসিয়াল মার্চেন্ডাইজ সংগ্রহকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তাদেরই একজন যুক্তরাজ্যের সংগ্রাহক অ্যান্ড্রু কোলিয়ার বলেন, ‘আইসিসি ইভেন্টের অফিসিয়াল মার্চেন্ডাইজ শুধু একটি স্মারক নয়, এটি ইতিহাসের একটি অংশ। প্রতিটি সংগ্রহের পেছনে থাকে অবিস্মরণীয় স্মৃতি, যা আমাদের সেই বিশেষ মুহূর্তে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।’ অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রাহক পিটার স্কোফিল্ড বলেন, ‘বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্মারক সংগ্রহ করা আমার কাছে অন্যরকম এক আবেগ। বিশেষ করে ম্যাচে ব্যবহৃত বল, টস কয়েন ও অফিসিয়াল জার্সি এগুলোর বিশেষ জায়গা রয়েছে আমার সংগ্রহে।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট সংগ্রাহক মেজর (অব.
অনেক ক্রিকেটপ্রেমী তাদের প্রিয় দলকে সমর্থন করতে মহাদেশ পেরিয়ে বিদেশেও যান। মাঠে সরাসরি ম্যাচ উপভোগের পাশাপাশি তারা অফিসিয়াল মার্চেন্ডাইজ সংগ্রহ করেন, যা শুধু একটি স্মারক নয়; বরং তাদের ভ্রমণ ও অংশগ্রহণের এক চিরস্মরণীয় নিদর্শন হয়ে থাকে। আমার সংগ্রহ সমৃদ্ধ করতে অনেক প্রিয়জনই আমাকে অফিসিয়াল স্মারক উপহার দিয়েছেন, যা আমি কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহণ করেছি।
আমার প্রথম দেশের বাইরে অফিসিয়াল মার্চেন্ডাইজ সংগ্রহের অভিজ্ঞতা হয় ২০১৬ আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, যেখানে ভারতের বিভিন্ন স্টেডিয়াম থেকে আইসিসির অফিসিয়াল পণ্য সংগ্রহ করার সুযোগ পাই। এ ছাড়াও অনলাইনে বেশ কয়েকবার আইসিসি স্মারক কিনেছি। আইসিসির অফিসিয়াল চাবির রিং ও কোট পিন বিশেষভাবে আমার প্রিয়, কারণ এগুলোর দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন ও চমৎকার মান সত্যিই অনন্য। যদিও তুলনামূলকভাবে অফিসিয়াল মার্চেন্ডাইজগুলোর দাম একটু বেশিই থাকে। চাইলে আপনারাও আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর অফিসিয়াল মার্চেন্ডাইজ সংগ্রহ করতে পারেন এই ওয়েবসাইট থেকে: global-shop.icc-cricket.com।
বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটপ্রেমীরা আইসিসি ইভেন্টের ব্যবহৃত টসের কয়েন, বল এবং স্কোরকার্ড সংগ্রহ করতে পারেন নিলামের মাধ্যমে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর অকশন ওয়েবসাইট auctions.officialmemorabilia.com.au ভিজিট করে যে কেউ অংশ নিতে পারেন এবং জিতে নিতে পারেন ম্যাচে ব্যবহৃত ঐতিহাসিক স্মারকগুলো। আমি সৌভাগ্যবান যে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয় দিয়ে শুরু হওয়া প্রথম ম্যাচে ব্যবহৃত টসের কয়েন সংগ্রহ করতে পেরেছি। এ ছাড়াও ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে সাউদাম্পটনে সাকিব আল হাসানের ৫ উইকেট নেওয়া ম্যাচের বল এবং লর্ডসের ঐতিহাসিক মাঠে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মোস্তাফিজুর রহমানের ৫ উইকেট পাওয়া ম্যাচে ব্যবহৃত বলও আমার সংগ্রহে গর্বের অংশ।
স্টেডিয়ামগুলোতে আইসিসি ইভেন্ট চলাকালীন লোগো-সংবলিত বিশেষ ড্রিংসের কাপ, চার-ছয়ের বোর্ড, ফিতাসহ টিকিট হোল্ডার ছাড়াও ছোটখাটো স্মারক বানানোর মতো আইটেম পাওয়া যায়। যেগুলো সবই সেই ইভেন্টের স্মৃতি বহন করে। আইসিসি তাদের অতিথিদের জন্য উপহারস্বরূপ ইভেন্টের টাই, স্যুভেনির কয়েন, মোমেন্টো, ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন রকমের জিনিস দিয়ে থাকে, যা সংগ্রহ করা দুরূহ।
আমার সংগ্রহে রয়েছে এমন অনেক ম্যাচ টিকিট, যা একেকটি অনন্য ইতিহাসের অংশ। যেমন– ২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ জয় কিংবা ২০২৩ বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিট। বিশেষ পারফরম্যান্সের স্মৃতিবিজড়িত টিকিট সংগ্রহের পাশাপাশি সেই ম্যাচগুলোর সেরা খেলোয়াড়দের অটোগ্রাফ নেওয়াও এক অসাধারণ অনুভূতি। তামিম ইকবালের প্রথম টি২০ শতকের ম্যাচের টিকিট, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ২০১৫ বিশ্বকাপ ও ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেঞ্চুরি করা ম্যাচের টিকিট, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ২০১৯ বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করা ম্যাচের টিকিটগুলোতে তাদের অটোগ্রাফ নেওয়া সত্যিই দারুণ এক অভিজ্ঞতা।
এ ছাড়া ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইডেন গার্ডেনসে শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক জয়ের টিকিটও আমার সংগ্রহে রয়েছে, যেখানে ম্যান অব দ্য ম্যাচ অরবিন্দ ডি সিলভার অটোগ্রাফ সেই ম্যাচের মহাকাব্যিক জয়কে স্মরণীয় করে তুলেছে। ক্রিকেট ইতিহাসের এমন দুর্লভ স্মারক সংরক্ষণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্য ও আবেগের অংশ হয়ে ওঠে। টিকিটগুলো কেবল টুকরো কাগজ নয়; বরং একেকটি মুহূর্তের ঐতিহাসিক স্মারক।
ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়, এটি স্মৃতির এক অনন্য ভান্ডার, যা ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে। ক্রিকেটের জগতে আবেগের কোনো সীমা নেই। প্রত্যেক ক্রিকেট ভক্ত ইতিহাসের একটি অংশ নিজের করে রাখতে চায়, অফিসিয়াল মার্চেন্ডাইজ সংগ্রহ সেই স্বপ্নপূরণে অনন্য ভূমিকা রাখে। v
লেখক: ক্রিকেট স্মারক সংগ্রাহক এবং প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স গ র হক র প রথম আইস স র ব যবহ ত স মরণ য় অনন য
এছাড়াও পড়ুন:
দুনিয়ায় প্রত্যেক মুসলিমকে যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে
জীবন একটি পরীক্ষার ময়দান, যেখানে আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও কষ্টের মুখোমুখি হই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)
এই পরীক্ষাগুলো প্রায়ই আমাদের হতাশ বা বিমর্ষ করে তুলতে পারে, কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায় যে এই কষ্টগুলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম এবং পরকালে চিরস্থায়ী সুখের পথ প্রশস্ত করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এই দুনিয়ার জীবন তো কেবল ক্ষণস্থায়ী ভোগ, আর পরকালই হলো চিরস্থায়ী আবাস।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৩৯)
পরীক্ষার উদ্দেশ্যইসলামে পরীক্ষা বা কষ্টকে আল্লাহর রহমতের অংশ হিসেবে দেখা হয়। এগুলো আমাদের পাপ থেকে মুক্তি, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি, নিজেকে নম্র করা এবং তাঁর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।
আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখনই তুমি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করবে, আল্লাহ তা তোমার জন্য আরও উত্তম কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩,০৭৪)
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যদুনিয়ার জীবন সাময়িক এবং এর কষ্টগুলো ক্ষণস্থায়ী। আমরা প্রায়ই দুনিয়ার সমস্যায়, যেমন অর্থনৈতিক সংকট, সম্পর্কের জটিলতা বা সামাজিক চাপ, এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ি যে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ভুলে যাই। পবিত্র কোরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘কিন্তু যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দাঁড়ানোর ভয় করেছে এবং নিজের নফসকে অবৈধ কামনা থেকে বিরত রেখেছে, তার জন্য জান্নাতই হবে আশ্রয়।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৪০–৪১)
ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য পর্দা তুলে দিতেন এবং তাকে দেখাতেন, কীভাবে তিনি তার জন্য সবকিছু পরিচালনা করেন, তবে তার হৃদয় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় গলে যেত এবং কৃতজ্ঞতায় টুকরা টুকরা হয়ে যেত। তাই যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে দুঃখ করো না। হয়তো আল্লাহ তোমার দোয়ার কণ্ঠ শুনতে চান।’ (ইবন কাইয়্যিম, আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১২৮, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)
পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি।পরীক্ষা আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়। এটি আমাদের নম্র করে, আমাদের পাপমুক্তি ঘটায় এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বাড়ায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ায় যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে, তাকে জান্নাতে একবার ডুবিয়ে দেওয়া হবে এবং জিজ্ঞাসা করা হবে, ‘হে আদম সন্তান, তুমি কি কখনো কোনো কষ্ট দেখেছিলে? তুমি কি কখনো দুঃখ অনুভব করেছিলে?’ সে বলবে, ‘না, হে আমার রব! আমি কখনো কোনো কষ্ট দেখিনি, কখনো কোনো দুঃখ অনুভব করিনি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর–২৮০৭)
আরও পড়ুনবালকের ঈমানের পরীক্ষা ও বাদশাহের নির্মম পরিণতি০৪ মে ২০২৪আল্লাহর পরিকল্পনায় ভরসাপরীক্ষার সময় মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের পরিকল্পনার চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)
এই আয়াত আমাদের শেখায় যে কষ্টের পেছনে আল্লাহর একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য রয়েছে।
হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পরকালের জন্য চিন্তিত থাকে, আল্লাহ তার বিষয়গুলো সহজ করে দেবেন, তার হৃদয়ে তৃপ্তি দেবেন এবং দুনিয়া তার কাছে আসবে, যদিও সে তা অপছন্দ করে।’ (ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪১০৫)
পরীক্ষায় ধৈর্য ও দোয়াপরীক্ষার সময় ধৈর্য ধরা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩) দোয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করি এবং তাঁর রহমতের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করি।
ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে সিজদায় তোমার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করো এবং জেনে রাখো, আল্লাহ কখনো ভোলেন না।’ (আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১৩০, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)
আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না।জীবনের পরীক্ষাগুলো আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়, আমাদের হৃদয়কে বিশুদ্ধ করে এবং পরকালে জান্নাত লাভের পথ প্রশস্ত করে। দুনিয়ার কষ্ট ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা ও রহমত চিরস্থায়ী।
আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না; বরং নবীজি (সা.)–এর শিক্ষা ও ধৈর্য, দোয়া এবং আল্লাহর ওপর ভরসার মাধ্যমে আমরা জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় বিজয়ী হতে পারব।
আরও পড়ুনত্যাগের পরীক্ষা, সফলতার উদ্যাপন০১ আগস্ট ২০২০