শতভাগ রপ্তানিমুখী প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদনে যাচ্ছে আরএফএল
Published: 1st, March 2025 GMT
শতভাগ রপ্তানিমুখী গৃহস্থালি প্লাস্টিক উৎপাদনে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় গৃহস্থালি প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আরএফএল। পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত মেশিনারিজ আনা হবে চীন থেকে। সে জন্য চীনের হাইতিয়ান গ্রুপের সঙ্গে আজ রোববার বড় চুক্তি করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আরএফএল গ্রুপ এ তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে এখন নতুন বিনিয়োগ কম হচ্ছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ২১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। এ সময়ে এফডিআই কমেছে ৭১ শতাংশ। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আরএফএল গ্রুপের নতুন বিনিয়োগ উৎপাদনমুখী শিল্পের জন্য ইতিবাচক।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ জানিয়েছে, রপ্তানি বাড়াতে নতুন এই বিনিয়োগ করছেন তারা। কারখানা স্থাপন হবে গাজীপুরের কালীগঞ্জে আরএফএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে। সেখানে যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো নির্মাণে সব মিলিয়ে বিনিয়োগ হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। আগামী এপ্রিল-মে মাস থেকে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে। নতুন কারখানায় যেসব প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদন হবে, তার সবই রপ্তানি হবে। এটি হবে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম শতভাগ রপ্তানিমুখী কারখানা। নতুন কারখানায় অন্তত আড়াই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এখান থেকে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। ক্রেতাদের চাহিদামতো বিভিন্ন ডিজাইনের কনটেইনার, টয়েজ, টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যারসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন হবে। এ বিনিয়োগের ফলে আরএফএলের বার্ষিক রপ্তানি বাড়বে ৩০ শতাংশের মতো।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীন, ভারতসহ কয়েকটি দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে রপ্তানি বাজারে সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোর। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে আরএফএল। চীনের একটি রপ্তানিমুখী কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি থেকে ৬০ লাখ ডলারের পণ্যের ক্রয়াদেশ পেয়েছে তারা। পুরোনো ক্রেতাদের মাধ্যমেই এই ক্রয়াদেশ এসেছে। পোশাক খাতের বাইরে কোম্পানির এটি সবচেয়ে বড় ক্রয়াদেশ। কারখানায় উৎপাদন শুরু হওয়ার আগেই এ ধরনের ক্রয়াদেশ প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, নতুন কারখানা হবে শতভাগ কমপ্লায়েন্ট। ক্রেতা দেশগুলোতে প্লাস্টিকের আধুনিক যেসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে, এখানে সেগুলোই উৎপাদন করা হবে। উৎপাদিত সব পণ্যই রপ্তানি করা হবে। কোনো পণ্য স্থানীয়ভাবে বিক্রি করা হবে না।
উৎপাদনে যাওয়ার আগেই রপ্তানি আদেশ পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যে শুল্ক বসানোসহ নানা বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি কমে যেতে পারে। এই সুযোগে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি বাড়াতে পারবে। ইতোমধ্যে ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির আদেশ পাওয়া কারখানার যাত্রাকালে খুবই ইতিবাচক।
আরএফএল গ্রুপের রপ্তানি
আরএফএল গ্রুপ ২০০৭ সালে ভারতে গৃহস্থালি প্লাস্টিকপণ্য পাঠানোর মাধ্যমে রপ্তানি শুরু করে। এরপর থেকে প্রতিবছরই তাদের প্লাস্টিকপণ্য রপ্তানি বাড়ছে। রপ্তানিতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে প্লাস্টিকপণ্য রপ্তানি করে আরএফএল। ৩০ ক্যাটেগরিতে ৫০০ পণ্য রপ্তানি করা হয়। যেমন– গৃহস্থালি প্লাস্টিক, বাইসাইকেল, মেলামাইন, গৃহনির্মাণ সামগ্রী, পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, নন-লেদার ফুটওয়্যার, প্লাস্টিক ফার্নিচার। এসব পণ্য রপ্তানি করে আরএফএল গ্রুপ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি ডলার আয় করেছে। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় ভারতে। এরপর রয়েছে জার্মানি, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া, স্পেন, যুক্তরাজ্য এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
যুক্তরাষ্টের ওয়ালমার্ট, কানাডার ডোলারামা ও লবলোজ, ফ্রান্সের ক্যারিফোর, জার্মানির লিডল, অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট, কোরিয়ার লোকসি এবং যুক্তরাজ্যের উলওয়ার্থস ও আর্গসের মতো প্রসিদ্ধ সুপারশপগুলোতে আরএফএল পণ্য পাওয়া যায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আরএফএল গ র প শতভ গ
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।