ওপেনএআই কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ আনছে, যা বললেন স্যাম অল্টম্যান
Published: 3rd, March 2025 GMT
প্রতিদ্বন্দ্বী মেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নতুন অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা করছে—এমন খবরে এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া খাতে প্রবেশের ইঙ্গিত দিলেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম অল্টম্যান। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘হয়তো আমরাও একটা সোশ্যাল অ্যাপ করব।’
এর আগে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, মেটা তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ‘মেটা এআই’-এর জন্য একটি স্বতন্ত্র অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা করছে। অ্যাপটি ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এ প্রসঙ্গে অল্টম্যান এক্সে আরও একটি পোস্টে রসিকতা করে লেখেন, ‘যদি ফেসবুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়, তবে আমরাও উনো রিভার্স কার্ড দেখাব।’ প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, মেটা যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজারে ওপেনএআইয়ের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে চায়, তবে ওপেনএআই-ও সোশ্যাল মিডিয়া খাতে প্রবেশ করে পাল্টা প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারে।
প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেটা এআইকে একটি স্বতন্ত্র অ্যাপ হিসেবে চালুর পরিকল্পনা করেছে মেটা। অ্যাপটি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের পাশাপাশি আলাদাভাবে কাজ করবে। নতুন অ্যাপটি ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে উন্মুক্ত হতে পারে। এখন পর্যন্ত মেটা এআই শুধু ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেটার নিজস্ব প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে স্বতন্ত্র অ্যাপ চালু হলে এটি আরও বেশি ব্যবহারকারীকে আকৃষ্ট করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মেটা এআই ছাড়াও মেটা নির্দিষ্ট কিছু সুবিধার জন্য আলাদা অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা করছে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি স্বতন্ত্র রিলস অ্যাপ চালুর পরিকল্পনার জন্য আলোচনায় আসে। প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনফরমেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মেটার প্রধান অ্যাডাম মোসেরি সম্প্রতি কর্মীদের জানিয়েছেন, মেটা একটি স্বতন্ত্র রিলস অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা করছে। সেটিতে টিকটকের মতোই ভিডিও স্ক্রলিংয়ের অভিজ্ঞতা মিলবে।
মেটা এআই অ্যাপ চালুর পাশাপাশি মেটা তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেবা ব্যবহারের জন্য ‘প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন’ চালুর পরিকল্পনাও করছে। সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি এবং মাইক্রোসফটের কোপাইলটের মতো মেটাও একটি সাবস্ক্রিপশন মডেল চালু করতে পারে।
সম্প্রতি এক্সে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন স্যাম অল্টম্যান। এখানে তিনি ইলন মাস্কের ওপেনএআই কেনার প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ক ওপেনএআই কিনতে ৯৭ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দেন। তবে ওপেনএআই বোর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাওয়ার আগেই অল্টম্যান এক্সে রসিকতা করে লেখেন, ‘ধন্যবাদ। তবে আপনি চাইলে আমরা ৯ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কিনতে পারি।’
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত স বতন ত র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনবেন যেভাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত লেখা যায়। আর তাই বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট, প্রবন্ধ, ই–মেইল থেকে শুরু করে গবেষণাপত্র, পত্রিকার কলাম লেখায় এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে অনেক এআই মডেল মানুষের লেখার মতোই সাবলীলভাবে লিখতে পারায় সেগুলো মানুষ না এআই লিখেছে, তা সহজে বোঝা যায় না। তবে বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে এআই দিয়ে লেখা বার্তা বা লেখা শনাক্ত করা সম্ভব। এআই দিয়ে তৈরি লেখা চেনার পদ্ধতিগুলো দেখে নেওয়া যাক।
এম ড্যাশ ব্যবহারবিভিন্ন এআই টুলে যে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রায়ই এম ড্যাশের অতিরিক্ত ব্যবহার দেখা যায়। সাধারণ লেখার ক্ষেত্রে আমরা এম ড্যাশ ব্যবহার করি না। সে ক্ষেত্রে কোনো লেখায় এম ড্যাশের উপস্থিতি থাকলে তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই মডেলগুলো মূলত নিজস্ব তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এম ড্যাশ সাধারণত বই বা লেখা ছাপানোর সময় বিরতি বা অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য প্রকাশে ব্যবহার করা হয়। এআই বিভিন্ন প্রকাশিত বইপত্রের লেখার শৈলী অনুকরণ করে বলে এম ড্যাশ বেশি ব্যবহার করে থাকে। আর তাই লেখায় অতিরিক্ত এম ড্যাশ ব্যবহার হলে তা এআই দিয়ে তৈরি বলে ধারণা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনএআই দিয়ে বানানো ছবি চিনবেন কীভাবে২২ আগস্ট ২০২৪যান্ত্রিক শব্দচয়নএআই মডেলগুলো প্রায়ই কিছু প্যাটার্ন ও শব্দকে পুনরাবৃত্ত করে, আর তাই এআই দিয়ে লেখায় পুনরাবৃত্তিমূলক বাক্য গঠন ও শব্দচয়ন বেশি দেখা যায়। শুধু তা–ই নয়, এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় একই ধরনের বাক্য গঠন বেশি চোখে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের সংযুক্তমূলক শব্দ যেমন এ ছাড়া, অতএব, ফলস্বরূপ বেশি ব্যবহার করে এআই মডেলে। আবার বিশেষ কিছু বিশেষণ বারবার ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আর তাই লেখায় যান্ত্রিক শব্দচয়ন বেশি থাকলে বুঝতে হবে সেটি এআই দিয়ে লেখা।
গভীরতার অভাবএআই তথ্য সংগ্রহে পারদর্শী হলেও মানুষের মতো জটিল বা মৌলিক বিশ্লেষণ করতে পারে না। আর তাই এআইয়ের তৈরি লেখায় গভীরতা ও বিশ্লেষণের অভাব দেখা যায়। এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় তথ্য উপস্থাপন বেশি থাকলেও লেখকের ব্যক্তিগত মতামত বা মানবীয় ভাব অনুপস্থিত থাকে। এআই দিয়ে তৈরি লেখাতে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, আবেগ বা গভীর চিন্তার অভাব থাকে। ফলে লেখাগুলোতে তথ্যের সারসংক্ষেপ বা অতিরঞ্জিত তথ্য দেখা যায়। এআই প্রায়ই এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে, যা ব্যাকরণগতভাবে সঠিক হলেও মানুষের স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন আলাপে অনুপস্থিত থাকে।
আরও পড়ুনএআই দিয়ে কণ্ঠ নকল করে প্রতারণা শনাক্ত করবেন যেভাবে২৫ মে ২০২৫মানবিক দিক অনুপস্থিতখুব স্বাভাবিকভাবে এআই দিয়ে লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা আবেগের অনুপস্থিতি থাকে। কিন্তু মানুষের লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, হাস্যরস বা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। এআই মডেল গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন সমাধান করতে পারলেও মানবিক স্পর্শ তৈরি করতে পারে না। যখন লেখা নিরপেক্ষ বা আবেগহীন মনে হয়, তখন তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই দিয়ে তৈরি লেখায় বেশ অনাকাঙ্ক্ষিত অসংগতি বা তথ্যের ভুল দেখা যায়।
আরও পড়ুনএআই প্রযুক্তি দিয়ে প্রতারণা বাড়ছে জিমেইলে, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এআই দিয়ে লেখা চেনার একাধিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পরও নিজের বিচার–বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। শুধু তা–ই নয়, বিষয়ে সঙ্গে লেখার প্রাসঙ্গিকতাও বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে ছোট একটি পরীক্ষা করা যাক। দুটি অনুচ্ছেদ পড়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন কোন লেখাটি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে।
ক. সুন্দরবনের শ্বাসমূল থেকে কক্সবাজারের বেলাভূমি—বাংলাদেশ এক বৈচিত্র্যময় দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত এই ব-দ্বীপ সুজলা-সুফলা। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে এটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ভূমি সত্যিই মন মুগ্ধ করে তোলে।
খ. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ, যেখানে সবুজ গ্রাম আর নদীর ঢেউয়ে জীবন প্রবাহিত হয়। এখানকার মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতা, আর সংস্কৃতিতে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য।
লেখাগুলো পড়ে অনেকেই বলবেন ‘ক’ অনুচ্ছেদের লেখাটি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কেউ বলবেন ‘খ’ অনুচ্ছেদের কথা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে ‘ক’ ও ‘খ’ দুটি অনুচ্ছেদই গুগলের জেমিনি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে। আর তাই এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনতে বেশ সতর্ক থাকতে হবে।
সূত্র: সেলজি ও ইস্ট সেন্ট্রাল কলেজ