প্রতিদ্বন্দ্বী মেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নতুন অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা করছে—এমন খবরে এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া খাতে প্রবেশের ইঙ্গিত দিলেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম অল্টম্যান। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘হয়তো আমরাও একটা সোশ্যাল অ্যাপ করব।’

এর আগে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, মেটা তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ‘মেটা এআই’-এর জন্য একটি স্বতন্ত্র অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা করছে। অ্যাপটি ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এ প্রসঙ্গে অল্টম্যান এক্সে আরও একটি পোস্টে রসিকতা করে লেখেন, ‘যদি ফেসবুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়, তবে আমরাও উনো রিভার্স কার্ড দেখাব।’ প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, মেটা যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজারে ওপেনএআইয়ের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে চায়, তবে ওপেনএআই-ও সোশ্যাল মিডিয়া খাতে প্রবেশ করে পাল্টা প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারে।

প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেটা এআইকে একটি স্বতন্ত্র অ্যাপ হিসেবে চালুর পরিকল্পনা করেছে মেটা। অ্যাপটি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের পাশাপাশি আলাদাভাবে কাজ করবে। নতুন অ্যাপটি ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে উন্মুক্ত হতে পারে। এখন পর্যন্ত মেটা এআই শুধু ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেটার নিজস্ব প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে স্বতন্ত্র অ্যাপ চালু হলে এটি আরও বেশি ব্যবহারকারীকে আকৃষ্ট করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মেটা এআই ছাড়াও মেটা নির্দিষ্ট কিছু সুবিধার জন্য আলাদা অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা করছে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি স্বতন্ত্র রিলস অ্যাপ চালুর পরিকল্পনার জন্য আলোচনায় আসে। প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনফরমেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মেটার প্রধান অ্যাডাম মোসেরি সম্প্রতি কর্মীদের জানিয়েছেন, মেটা একটি স্বতন্ত্র রিলস অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা করছে। সেটিতে টিকটকের মতোই ভিডিও স্ক্রলিংয়ের অভিজ্ঞতা মিলবে।

মেটা এআই অ্যাপ চালুর পাশাপাশি মেটা তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেবা ব্যবহারের জন্য ‘প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন’ চালুর পরিকল্পনাও করছে। সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি এবং মাইক্রোসফটের কোপাইলটের মতো মেটাও একটি সাবস্ক্রিপশন মডেল চালু করতে পারে।

সম্প্রতি এক্সে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন স্যাম অল্টম্যান। এখানে তিনি ইলন মাস্কের ওপেনএআই কেনার প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ক ওপেনএআই কিনতে ৯৭ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দেন। তবে ওপেনএআই বোর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাওয়ার আগেই অল্টম্যান এক্সে রসিকতা করে লেখেন, ‘ধন্যবাদ। তবে আপনি চাইলে আমরা ৯ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কিনতে পারি।’

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত স বতন ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

তাণ্ডব হচ্ছে ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট

তান্ডব সিনেমা কি সত্যিই তান্ডব বইছে নাকি অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছুই না? সবই মিডিয়ার হাইপ? মোটাদাগে তান্ডবের প্রধান দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়। সিনেমার গল্পে দেখা যায়, প্রতিশোধ নিতে একদল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের জিম্মি করে স্বাধীনে টিম (শাকিব)। জিম্মিদের সাথে আলোচনা হবে টিভি লাইভে, যেনো দেশবাসী সরাসরি জানতে পারে। কেনো জিম্মি করলো, শুরু হয় শাকিবের গ্রামের গল্প। প্রেম ভালোবাসা, পাওয়া না পাওয়া, আশা-নিরাশা- হতাশার গল্প পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। এর মাঝে উঠে আসে, বেকারত্ব, মামা-চাচার জোর না থাকলে চাকরি না পাওয়ার চিত্র।  এই সমস্যার মূলে রয়েছে রাজনীতিবীদ, প্রশাসন, টিভি চ্যানেল ও বড় ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধাবাদিশ্রেনি সিন্ডিকেট করে সব কিছু নিজেদের দখলে রাখে, বঞ্চিত হয় দেশের সাধারণ মানুষ। এই হল তাণ্ডবের গল্প। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়, এখান থেকে শুরু মাত্র। 

সিনেমার শেষের দিকে একবার মনে হতে পারে গল্প শেষ, কিন্তু নিশোর আগমন বাড়তি টুইস্ট যোগ করে। তান্ডবের সিক্যুয়ালে শাকিব, নিশোর লড়াই বেশ জমজমাট হবে, এমন ইংগিত দেওয়া হয়েছে এতে। গল্পে সাবিলা নূরের ট্রাজেডি খুব একটা যুক্ত সঙ্গত ছিল না। পরিণতি ভিন্ন হতে পারতো। গল্পে ইমপেক্ট পড়ে নাই সিয়ামের ক্যামিও চরিত্র। তবে সিনেমা তার  চরিত্রে সিয়াম অসাধারণ অভিনয় করেছে। অনেক তারকার ভীড়ে তান্ডবের সব আলো কেড়ে নিয়ে একাই জ্বলজ্বল করছেন শাকিব খান।  

চেনা চেনা লাগে: ক্রাইম থ্রিলার জনরার সিনেমা তাণ্ডব। গল্পে থ্রিল আছে তবে ইউনিক না। থ্রিলগুলো খানিকটা ধার করা বলা যায়। কারো কারো মনে হতে পারে,  বহু সিনেমার বহু দৃশ্যের সুষম মিশ্রণ। দৃশ্যটি দেখলে, চরিত্রের ডিটেইলটা চেনা চেনা লাগতে পারে। বিশেষ করে গল্পের শুরুতে সবাই মুখোশ পড়ে আসে। এটি বহুল প্রচারিত দৃশ্য কিন্তু ভালো লাগবে। গল্পে শাকিব খান মুখোশ পড়ে যে ভাবে হাত দিয়ে উড়ার মতো করে আসে, এই দৃশ্যও দর্শকদের আনন্দিত করেছে, সিনেমা হলে উল্লাস করেছে। তবে গল্পাংশ, চরিত্রায়ণ যেখান থেকেই মিল থাকুক না কেনো, সব মিলিয়ে সিনেমাটি দেখতে দারুণ লাগবে।

গান: তিনটি গানের মধ্যে “লিচুর বাগান” গানটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গানের বিশেষ দিক হলো, বাংলা লোকগানের আধুনিক মিউজিক আয়োজন। এটা দারুণ ব্যাপার। তবে এই ধরণের গান কোক স্টুডিও বাংলায় বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না এই গান। যদিও গানটি মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট খুব ভালো ছিল। একটি টাইটেল ট্রাক ছিল, সেই গানের শব্দগুলো বুঝতে সমস্যা হয়েছে। রোমান্টিক গানটা  শ্রুতিমধুর ছিল।

অভিনয় ও চরিত্রায়ণ: শাকিব খান দারুণ অভিনয় করেছেন। একটা গ্রামের ছেলে আরেকটা গ্যাংস্টার। দুইটা কন্ঠ দুই রকম ছিল। বডি ল্যাগুয়েজ, হাঁটা চলা, কথা বলার ধরণে ভিন্নতা ছিল। গ্যাংস্টারে খষখষে কন্ঠ হওয়াতে চরিত্রের মধ্যে ডায়মেনশন এসেছে। শাকিব দিন দিন অভিনয়ে গড হয়ে উঠছে যেনো। সাবিলা নূর এই চরিত্রের জন্য খুবই মানানসই। এক ঝাঁক তারকা অভিনয় করেছে সিনেমাটিতে। সবাই চরিত্র অনুযায়ী ভালো অভিনয় করেছেন। তবে আলাদা করে বলতে হয় জয়া আহসানের কথা। জয়া ঠিকই নিজের চরিত্রে সেরাটা দিয়েছে, এবং তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে কল্পনা করার সুযোগ ছিল না। আফজাল হোসেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, নাঈম, সালাউদ্দীন লাভলু, ফজলুর রহমান বাবু, সাইফুল জার্নাল, রোজী সিদ্দিকী নিজ নিজ চরিত্রে দারুণ। যদিও কারো কারো চরিত্র প্রস্ফুটিত হয়নি ঠিক মতো।  

সেট, লাইট, কস্টিউম: তান্ডবের সেট লাইট দারুণ। দৃশ্যে আয়োজন, আলোর ব্যবহার খুবই মানানসই। টিভি চ্যানেলের সেট বিশ্বাসযোগ্য ছিল। চরিত্রানুযায়ী পোশাক ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে শাকিব, জয়া, সাবিলার পোশাক সুন্দর লেগেছে। অন্যান্য চরিত্রের পোশাকও ছিল দারুণ।  

আবহ সঙ্গীত, সংলাপ: সংলাপ দারুণ। কিছু কিছু গালি দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। গল্পের সাথে গালিগুলো যথাযথ ভাবেই মানিয়ে গেছে, তাই অশ্লীল লাগে নাই। আবহ সঙ্গীত মনে দাগ না কাটলেও খারাপ লাগে নাই। গল্পের মুড বুঝেই আবহ সঙ্গীত এগিয়ে গেছে। সংলাপে যখন দেশের কথা বলে, তখন বুকিশ লাগে নাই, শুনতে ভালো লেগেছে।

নির্মাণ: আধুনিক নির্মাণের সকল বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। শট ডিজাইন, ট্যাকিং, ক্লোজ আপের ব্যবহারে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে পরিচালক। মুভমেন্ট শটগুলো গল্পকে গতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। জনবহুল বড় বড় দৃশ্যগুলো ঠিকঠাক তুলে আনা গেছে। 

সবশেষে: তাণ্ডব একটি গ্যাংস্টার মুভি। কতগুলো অসৎ লোকের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এই ধরণের মুভি গরম গরম দেখতে ভালো লাগে, বিনোদন পাওয়া যায়, সমাজ বাস্তবতার সাথে মিল পাওয়া যায় কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কোন ইমপেক্ট পড়ে না। শেষ কথা হলো, কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলা সিনেমা সোনালী অতীত পেরিয়ে এখন ডায়মন্ড যুগে প্রবেশ করেছে। তাণ্ডব  হলো সেই ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট।   

লেখক: লেখক ও নাট্যকার

সম্পর্কিত নিবন্ধ