আইফোনের জন্য ফটোশপ অ্যাপ আনল অ্যাডোবি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
Published: 3rd, March 2025 GMT
অ্যাডোবি আনুষ্ঠানিকভাবে আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য ফটোশপ অ্যাপ উন্মুক্ত করেছে। এত দিন শুধু ডেস্কটপ ও আইপ্যাডে ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও এবার আইফোনেও মিলবে অ্যাডোবির উন্নত মানের ডিজাইন ও সম্পাদনা সরঞ্জামের সুবিধা। নতুন অ্যাপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির বেশ কিছু সুবিধা যোগ করা হয়েছে, যা মোবাইলে ছবি সম্পাদনার অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ করবে।
ফটোশপের নতুন আইওএস সংস্করণে যুক্ত হয়েছে অ্যাডোবির নিজস্ব ফায়ারফ্লাই এআই প্রযুক্তির ‘জেনারেটিভ ফিল’ ও ‘জেনারেটিভ এক্সপ্যান্ড’ সুবিধা। এগুলোর সাহায্যে ব্যবহারকারীরা ছবির নির্দিষ্ট অংশ বদলাতে, নতুন উপাদান যোগ করতে বা ছবির সীমানা সম্প্রসারিত করতে পারবেন। টেক্সট প্রম্পটের মাধ্যমে সম্পাদনার এ সুবিধা আগে শুধু ডেস্কটপ সংস্করণে সীমিত ছিল। এ ছাড়া নতুন অ্যাপে থাকছে লেয়ার, মাস্কিংসহ উন্নত মানের বিভিন্ন সম্পাদনা টুল। ফলে ফোন অ্যাপেও ডেস্কটপ সংস্করণের অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। তবে কিছু উন্নত সুবিধা ব্যবহারের জন্য প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন নিতে হবে। আইওএস সংস্করণটির সহজ ও ব্যবহারবান্ধব ইন্টারফেসের ফলে চলার পথেও দ্রুত সম্পাদনার সুযোগ মিলবে। ডেস্কটপ সংস্করণের মতোই এতে নিখুঁতভাবে ছবির যেকোনো অংশ নির্বাচন, নির্দিষ্ট অংশ সম্পাদনা ও উন্নত রং সংশোধনের সুবিধা থাকবে।
অ্যাপটি বিনা মূল্যে ৫ গিগাবাইট ক্লাউড স্টোরেজ সুবিধা দেবে। এখানে ব্যবহারকারীরা তাঁদের সম্পাদিত ছবি সংরক্ষণ করতে পারবেন। এ ছাড়া ‘স্পট হিলিং ব্রাশ’ টুল দিয়ে ছবির অবাঞ্ছিত উপাদান মুছে ফেলা এবং ‘ট্যাপ সিলেক্ট’ টুলের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অংশ পরিবর্তন বা রং পরিবর্তন করা সম্ভব। পাশাপাশি অ্যাডোবি স্টকের বিনা মূল্যের লাইব্রেরি থেকেও বিভিন্ন উপাদান যোগ করে ছবি আরও আকর্ষণীয় করা যাবে।
নতুন ফটোশপ অ্যাপটি অ্যাডোবির অন্যান্য সফটওয়্যার, যেমন অ্যাডোবি এক্সপ্রেস, অ্যাডোবি ফ্রেসকো ও অ্যাডোবি লাইটরুমের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করা যাবে। ফলে ব্যবহারকারীরা সহজেই এক সফটওয়্যার থেকে আরেকটিতে ছবি স্থানান্তর করতে পারবেন। অ্যাডোবি জানিয়েছে, শিগগিরই ফটোশপ অ্যাপের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণও উন্মুক্ত করা হবে। তবে আইওএস ব্যবহারকারীরা এখনই অ্যাপটি বিনা মূল্যে ডাউনলোড করতে পারবেন। যদিও বেশ কিছু ফিচার ব্যবহারের জন্য অ্যাডোবি ক্রিয়েটিভ ক্লাউড সাবস্ক্রিপশন নিতে হবে।
সূত্র: নিউজ১৮
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র স স করণ প রব ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টা শুল্কের কারণে ক্রয়াদেশ কম
তৃতীয় দফা আনুষ্ঠানিক আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় আজ শুক্রবার থেকে বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। বাড়তি শুল্কহার শেষ পর্যন্ত কত শতাংশে স্থির হয় সেটি ফয়সালা না হওয়ায় মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আগামী মৌসুমে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ ২০ শতাংশ পর্যন্ত কম দিচ্ছে। আবার কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত ক্রয়াদেশ না দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
পাল্টা শুল্ক কার্যকরের সময় চলে এলেও তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা আগের মতো উদ্বিগ্ন নন। কারণ, দুই-তিন দিন ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও মার্কিন বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে যে ইঙ্গিত পাচ্ছেন তাতে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ভিয়েতনামের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। এ ছাড়া প্রতিযোগী দেশ ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, বর্তমানে বসন্ত ও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ আসার মৌসুম। তবে পাল্টা শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়বে। তাতে তৈরি পোশাকের বিক্রি কমবে। সেটি অনুমান করে মার্কিন বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিশ্রুতির চেয়ে ১০-২০ শতাংশ কম ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত ক্রয়াদেশ দিতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার কথা জানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার কাছাকাছি নামিয়ে আনা গেলে বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনা তৈরি হবে। তার কারণ চীন থেকে ব্যাপক হারে ক্রয়াদেশ সরবে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক নিয়ে আমরা খুব বেশি ভয় পাচ্ছি না এখন। তবে বাড়তি শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের চাহিদা কমবে। তাতে স্বাভাবিকভাবেই ক্রয়াদেশও কিছুটা কমতে পারে। বাড়তি শুল্ক কার্যকর ও শুল্কহার নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলে আগামী ৩-৪ মাস হয়তো ক্রয়াদেশ কম থাকতে পারে। শেষ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক ভিয়েতনামের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে পারলে ক্রয়াদেশ বাড়বে।’
যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের ৫৭টি দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। তখন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক ছিল ৩৭ শতাংশ। তিন মাসের জন্য এ সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ৮ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক হবে ৩৫ শতাংশ, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা বর্তমানে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করেন। নতুন হার কার্যকর হলে তা ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্কহার কমাতে তৃতীয় দফার আলোচনা করতে বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। এই দলটি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষ করেছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
দেশের তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ইভিন্স গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তাদের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ২৫ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
জানতে চাইলে ইভিন্স গ্রুপের পরিচালক শাহ রাঈদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ আসার গতি বর্তমানে কিছুটা ধীর। পাল্টা শুল্ক শেষ পর্যন্ত কত দাঁড়ায় তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে বাড়তি এই শুল্ক শেষ পর্যন্ত মার্কিন ক্রেতাদের দিতে হবে। ফলে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে দেশটিতে বেসিক বা নিত্য ব্যবহার্য তৈরি পোশাকের বিক্রি কমবে। আমরা এসব সস্তা পোশাকই বেশি রপ্তানি করি। ফলে আমাদের রপ্তানি কমতে পারে।’
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে রপ্তানি করে ৩০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তার একটি বড় অংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।
স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম বলেন, ‘মার্কিন বড় ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক সোর্সিং অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিশ্রুত ক্রয়াদেশ ১০-২০ শতাংশ কমিয়ে দিচ্ছে। এপ্রিলে আমরা যেসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে ৫ শতাংশের মতো মূল্যছাড় দিয়েছিলাম, সেটি বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুম পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করছে।’
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক শীর্ষ বড় বাজার। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। এ ছাড়া মাথার টুপি বা ক্যাপ, চামড়ার জুতা, হোম টেক্সটাইল, পরচুলা ইত্যাদি বেশি রপ্তানি হয়।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় বর্তমানে ক্রয়াদেশ কিছুটা কম। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশের পণ্যে শুল্ক কত দাঁড়াচ্ছে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এ ছাড়া আমাদের পাল্টা শুল্ক কমবে বলে আমরা আশাবাদী।’