ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশিদের থাইল্যান্ডে চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে ২০%: ভিসা
Published: 4th, March 2025 GMT
দেশে সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ বেড়েছে। মূলত অনলাইন ও কন্ট্যাক্টলেস পদ্ধতিতে অর্থ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ায় ডিজিটাল লেনদেনে এই ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। এর মধ্যে কন্ট্যাক্টলেস পদ্ধতিতে লেনদেন বেড়েছে দ্বিগুণ।
দেখা গেছে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ৯০ শতাংশ হয়েছে ২০টি দেশে, যার শীর্ষে আছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত এক বছরে ভারতে বাংলাদেশিদের ব্যয় ১০ শতাংশ কমলেও থাইল্যান্ডে চিকিৎসা পর্যটনের কারণে ব্যয় বেড়েছে ২০ শতাংশ। থাইল্যান্ডে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ খাতে ব্যয় যথাক্রমে ২৫ ও ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা প্রদানে বৈশ্বিকভাবে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভিসার এক বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দেখা গেছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ডিজিটাল মাধ্যমে সামগ্রিক ভোক্তা ব্যয় ১৪ শতাংশ এবং লেনদেনের পরিমাণ ১৭ শতাংশ বেড়েছে। ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের ব্যবহার, বিশেষত অনলাইন পেমেন্টের প্রসার, এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
ডিজিটাল মাধ্যমে ভোক্তা ব্যয়ে ই-কমার্স খাত শীর্ষে থাকলেও সরাসরি দোকানে কার্ড ব্যবহার ও অনলাইন লেনদেন—উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে। ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে ‘ট্যাপ টু পে’ বা কন্ট্যাক্টলেস পেমেন্টের ব্যবহার ২০২৩ সালে যেখানে ছিল মাত্র ৬ শতাংশ; ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৩ শতাংশ। মূলত ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া দেশের ডিজিটাল মাধ্যমে মোট ব্যয়ের প্রায় অর্ধেকই ডিজিটাল ওয়ালেট লোডের মাধ্যমে হয়েছে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণের হার বেড়েছে। কার্ডের মাধ্যমে ব্যয় বেড়েছে ৫০ শতাংশ। বিশেষ করে বিজনেস ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বেড়েছে ১৩৫ শতাংশ। এ ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির পরিসর বাড়ছে।
ডিজিটাল লেনদেনের বেশির ভাগই হচ্ছে ঢাকায়। ২০২৪ সালে মোট ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ এবং লেনদেনের ৮০ শতাংশ হয়েছে ঢাকায়। রাজধানীতে ২০২৪ সালে ব্যয় বেড়েছে ২০ শতাংশ। রাজধানীর ৬০ শতাংশ ভোক্তা অনলাইন পেমেন্টে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। গাজীপুর, রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহের মতো শহরেও ডিজিটাল লেনদেন বাড়ছে।
ভিসার বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের প্রধান সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশিদের মধ্যে ডিজিটাল ও কন্ট্যাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত বাড়ছে। নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করতে ভিসা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। আমাদের লক্ষ্য, বিশ্বমানের সুরক্ষা দিয়ে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা।’
খাতভিত্তিক ব্যয়ের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে ভ্রমণ, ছাড়ের দোকান, ফার্মেসি ও স্বাস্থ্যসেবায় স্থানীয় ব্যয় সর্বাধিক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড জ ট ল ল নদ ন ২০২৪ স ল ল নদ ন র ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’