ট্রাম্প নির্বাচন করে জেলেনস্কির পতন ঘটালে ফল হবে ভয়াবহ
Published: 4th, March 2025 GMT
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেখা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে। এই সাক্ষাৎ ছিল জেলেনস্কির বহুল প্রতীক্ষিত। তিনি আশা নিয়ে এসেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অব্যাহত রাখতে ট্রাম্পকে রাজি করানো যাবে। এ বৈঠক তাঁর আশা মতো হয়নি।
ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ক্যামেরার সামনে জেলেনস্কিকে ভর্ৎসনা করেন। অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাবকে স্বাগত না জানিয়ে ‘অসম্মানজনক’ আচরণ করেছেন।
রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের আগে ইউক্রেনে জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছিল। তখন তাঁর গ্রহণযোগ্যতার হার ছিল মাত্র ২৮ শতাংশ। দলের জনপ্রিয়তা ছিল ১১ শতাংশ। কিন্তু যুদ্ধের সময় তাঁর জনপ্রিয়তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।
আরও পড়ুনট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, ইউরোপকে একলা চলতে হবে১৯ ঘণ্টা আগেতবে গত দুই বছরে জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিলে তাঁর ওপর আস্থা ছিল ৫৪ শতাংশ ইউক্রেনীয় নাগরিকের। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তা নেমে আসে ৪৯ শতাংশে। যদিও এটি ট্রাম্পের দাবি করা হার থেকে ভালো, তবে ২০২২ সালের মে মাসে তাঁর ৯০ শতাংশ জনপ্রিয়তার তুলনায় এটি অনেক কম।
জনপ্রিয়তা কমার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তার প্রশাসনের দুর্নীতির অভিযোগ এবং দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ক্লান্তি এর মধ্যে অন্যতম।
জেলেনস্কি জানেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি দুর্বল অবস্থানে আছেন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝুঁকি নিতে চান না। কারণ, পুনর্নির্বাচনে পরাজিত হলে তিনি দুর্নীতি মামলায় জড়িয়ে পড়বেন কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতিশোধের মুখে পড়তে পারেন। জরিপ বলছে, এখনই নির্বাচন হলে তিনি হেরে যাবেন।
জেলেনস্কির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছেন চার তারকা জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি। জালুঝনি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ছিলেন। জরিপ বলছে, যদি তিনি নির্বাচনে দাঁড়ান, তাহলে জেলেনস্কিকে পরাজিত করবেন। জনগণের মধ্যে তাঁর প্রতি আস্থা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ৭২ শতাংশে পৌঁছায়।
২০২৩ সালে ব্যর্থ পাল্টা আক্রমণের পর জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনিকে বরখাস্ত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। অনেকেই মনে করেন, ইউক্রেনে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তাও এর একটি কারণ হতে পারে। তাঁকে যুক্তরাজ্যে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠানো হয়। তিনি এখনো সেই দায়িত্ব পালন করছেন।
এখন পর্যন্ত জালুঝনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেননি। তবে ভবিষ্যতে তিনি সিদ্ধান্ত বদলাবেন না, এমন নিশ্চয়তা নেই। যদি তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না নামেন, তাহলে সামরিক বাহিনীর অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যেমন ইউক্রেনের গোয়েন্দাপ্রধান কিরিলো বুদানভ প্রার্থী হতে পারেন।
যুদ্ধকালীন সময়ে হঠাৎ নির্বাচন একটি দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তা বোঝার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো স্থিতিশীল দেশে পর্যন্ত নির্বাচনের ফলে সৃষ্ট বিভক্তির দিকে তাকানোেই যথেষ্ট।বুদানভের প্রতি জনগণের আস্থা ৬২ শতাংশ। তিনি এক বছর ধরে মিডিয়ায় বেশ সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎই জনসমক্ষে আসা বন্ধ করে দেন। গুঞ্জন রয়েছে, জেলেনস্কির কার্যালয় তাঁকে অপসারণের পরিকল্পনা করছিল। তাই তিনি অন্তরালে চলে যান। তবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলে তিনি আবারও প্রকাশ্যে আসতে পারেন।
এ ছাড়া আকস্মিক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন বক্সিং তারকা ওলেক্সান্দ্র উসিক। ইউক্রেনে যেখানে একজন কৌতুক অভিনেতা প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছেন, সেখানে একজন সফল ক্রীড়াবিদও অপ্রত্যাশিত প্রার্থী হতে পারেন। তিনি এখনো কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনা জাহির করেননি। তবে জনমত জরিপে তার নাম উঠে আসছে। তাঁর জনপ্রিয়তা ৬০ শতাংশ।
তবে জেলেনস্কির সবচেয়ে পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো। জনপ্রিয়তা কম হলেও তিনি এখনো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। ২০১৯ সালের পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে ১৩০টির বেশি অপরাধমূলক মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ। কারণ, তিনি রাশিয়ার দখলকৃত দনবাস অঞ্চল থেকে কয়লা আমদানির অনুমোদন দিয়েছিলেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমতি ছাড়াই গাসিক কর্মকর্তা কিবরিয়ার বিদেশ যাত্রা
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘন, তথ্য গোপন, অনুমতি ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ ও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর গত ১৫ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিক শাহেদ আলম নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গোলাম কিবরিয়া সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তথ্য গোপন করে বেসরকারি পাসপোর্ট (নং A০১২৬৬৬১২) সংগ্রহ করেছেন, যা সরকারি চাকরি বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি একাধিকবার কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
অভিযোগকারী দাবি করেন, তিনি ২০২৪ ও ২০২৫ সালের বিভিন্ন সময়ে কানাডা সফর করেছেন, যার কোনো অনুমোদন তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নেননি।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ ২০২৫ সালের ১৯ জুন কানাডা সফরের সময় তিনি প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, গোলাম কিবরিয়া নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে কানাডায় সেকেন্ড হোম এবং ব্যবসায়িক বিনিয়োগ করেছেন। তার নামে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা পাচারের দুর্নীতির মামলাও চলমান রয়েছে। এমন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি এখনো পদে বহাল থেকে প্রভাব খাটাচ্ছেন এবং যেকোনো সময় বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অভিযোগকারী বলেন, “তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নিয়মিত বিদেশে যাচ্ছেন, যা সরকারি চাকরি বিধিমালার সরাসরি লঙ্ঘন এবং গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
সূত্র জানায়, গোলাম কিবরিয়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা। তার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। তিনি দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে কানাডায় স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন। গাজীপুরবাসীর স্বার্থে এমন বেপরোয়া ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) মুহাম্মদ সোহেল হাসান বলেন, “লিখিত অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করা হয়েছে। প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন। তথ্য গোপন করে বিদেশ যাত্রা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, প্রমাণ মিললে বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হবে।”
এ বিষয়ে জানতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে শোকজ করা হয়েছিল এবং তিনি জবাবও দিয়েছেন। শোকজের প্রতিবেদনটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।”
এ বিষয়ে গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/রেজাউল/এস