ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ধনাঢ্য রাজ্যগুলো। তাদের যুক্তি, মোদি সরকারের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও জনবহুল উত্তরাঞ্চলের তুলনায় তাদের প্রতিনিধিত্ব কমে যাবে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার করতে আগামীকাল বুধবার ৪০টির বেশি দলের রাজনীতিবিদদের এক বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন।

ভারতের দক্ষিণের পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু দেশটির প্রযুক্তিকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। শিল্পের শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত তামিলনাড়ু এবং ২৮টি রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল হিসেবে পরিচিত তেলেঙ্গানা। ভারতের মোট জিডিপির ৩০ শতাংশ আসে দক্ষিণের পাঁচটি রাজ্যে থেকে।

মোদির সীমানা নির্ধারণ বা নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে স্ট্যালিন বলেছেন, ‘এই বিষয়টি আমাদের প্রতিনিধিত্ব কমাবে এবং আমাদের কণ্ঠস্বরকে চূর্ণ করার মাধ্যমে বিপদ ডেকে আনবে।’

স্ট্যালিন বলেছেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর কোনোটিই মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নিয়ন্ত্রিত নয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করে এখন শাস্তি পাচ্ছে দক্ষিণের এসব রাজ৵।

ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে তাদের একটি মিত্র দল প্রতিবেশী বিহার রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এই দুটি রাজ্য ভারতের সবচেয়ে দরিদ্রতম রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভারতের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ২৬ শতাংশের বসবাস ভারতে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ।

সংবিধান অনুসারে, প্রতিটি জাতীয় জনশুমারির পরে ভারতকে লোকসভা আসনের সীমানা নির্ধারণ করতে হয়।

কিন্তু মহামারির কারণে ভারত ২০২১ সালের জনশুমারি করতে পারেনি। বারবার দাবি সত্ত্বেও মোদি সরকার এখনো আনুমানিক ১৪০ কোটি জনসংখ্যার গণনার কাজ শুরু করেনি। ২০১১ সালের জনশুমারিতে ভারতের জনসংখ্যা ছিল ১২১ কোটি। কিন্তু লোকসভায় নির্বাচিত আসনের সংখ্যা ৫৪৩টিই রয়ে গেছে। গত বছর উদ্বোধন করা নতুন সংসদ ভবনে ৮৮৮ আসন রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।

তেলেঙ্গানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাভান্ত রেড্ডি গত মাসের শেষের দিকে বলেছিলেন, ‘কেবল জনসংখ্যার আকার সীমানা নির্ধারণের মাপকাঠি হতে পারে না।’ তিনি বলেছিলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য জনশুমারির পরে একটি নতুন অনুপাত করা উচিত।

রেড্ডি আরও বলেন, ‘জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য আমাদের (দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো) শাস্তি দেওয়া উচিত নয়। তাতে জনশুমারি বৈষম্য তৈরি করবে।’

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় তাদের প্রতিনিধিত্ব হারাবে না। মোদি সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে, সীমানা নির্ধারণের পরে আনুপাতিক হারে দক্ষিণাঞ্চলীয় কোনো রাজ্যের একটিও আসন কমানো হবে না।

তবে এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) মন্তব্য করেছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া।

স্ট্যালিনের ডাকা আগামীকাল বুধবারের সভায় দক্ষিণাঞ্চলীয় অনেক নেতা যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বিজেপি জানিয়েছে, তারা এ সভায় যোগ দেবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আসন র স ম ন জনস খ য র জনশ ম র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ