নতুন পণ্য আনছে অ্যাপল, ম্যাকবুক বা আইপ্যাড আসবে কি
Published: 5th, March 2025 GMT
মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আইফোন ১৬ই উন্মোচনের পর এবার আরও একটি নতুন পণ্য বাজারে আনতে যাচ্ছে অ্যাপল। এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য না জানা না গেলেও অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুকের এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক ভিডিও বার্তা প্রযুক্তিপ্রেমীদের কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘এই সপ্তাহে’ ক্যাপশন দিয়ে তৈরি ভিডিওতে লেখা রয়েছে ‘দেয়ার ইস সামথিং ইন দ্য এয়ার’। ভিডিওটি প্রকাশের পর প্রযুক্তি বিশ্লেষক ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। অনেকে মনে করছেন, নতুন যন্ত্রটি হতে পারে এম৪ চিপযুক্ত নতুন ম্যাকবুক এয়ার। তবে কেউ কেউ বলছেন, এটি আইপ্যাড এয়ারের নতুন সংস্করণও হতে পারে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের বড় একটি অংশ মনে করছেন, অ্যাপল এবার এম৪ চিপযুক্ত ম্যাকবুক এয়ার উন্মোচন করতে পারে। গত বছরের ৪ মার্চ অ্যাপল ১৩ ইঞ্চি ম্যাকবুক এয়ার বাজারে এনেছিল। আর তাই এবার প্রতিষ্ঠানটি ১৩ ও ১৫ ইঞ্চি পর্দার ম্যাকবুক এয়ার বাজারে আনতে পারে। এ বিষয়ে ব্লুমবার্গের বিশ্লেষক মার্ক গারম্যান জানিয়েছেন, অ্যাপল এম৪ চিপযুক্ত নতুন ম্যাকবুক এয়ার আনতে যাচ্ছে। নতুন সংস্করণে আরও উন্নত ক্ষমতার ব্যাটারি, ন্যানো-টেক্সচার ডিসপ্লে এবং ১৬ থেকে ৩২ গিগাবাইট র্যাম থাকতে পারে। নতুন ম্যাকবুক এয়ার আরও দক্ষতার সঙ্গে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা করতে পারবে।
আরও পড়ুনআইফোনে নকল চার্জার থেকে বৈদ্যুতিক শক ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি০১ মার্চ ২০২৫অনেক প্রযুক্তি বিশ্লেষকের ধারণা, টিম কুকের পোস্ট শুধু ম্যাকবুক এয়ারের জন্য নয়, বরং আইপ্যাড এয়ারের নতুন সংস্করণেরও ইঙ্গিত হতে পারে। কুকের পোস্টের ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ‘এয়ার’ শব্দটির ওপর দিয়ে একটি সরু যন্ত্র দ্রুতগতিতে অতিক্রম করেছে। আর তাই কেউ কেউ বলছেন, এটি ম্যাকবুক এয়ার নয়, বরং নতুন আইপ্যাড এয়ার হতে পারে। সর্বশেষ আইপ্যাড এয়ার বাজারে এসেছিল ২০২৪ সালের মে মাসে। এতে ছিল এম২ চিপ এবং ১১ ও ১৩ ইঞ্চির দুটি সংস্করণ। এবার এম৩ চিপযুক্ত নতুন আইপ্যাড এয়ার আসতে পারে।
আরও পড়ুননতুন আইফোনের ঘোষণা দিল অ্যাপল, দাম কত২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরোনো মডেলের আইপ্যাড এয়ারের স্টক কমাতে শুরু করেছে অ্যাপল। যা সাধারণত নতুন সংস্করণ উন্মোচনের আগে করা হয়। ফলে এ বছরই নতুন আইপ্যাড এয়ার বাজারে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
অ্যাপল চলতি সপ্তাহে কোন যন্ত্র উন্মোচন করতে যাচ্ছে, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, নতুন ম্যাকবুক এয়ার এবং আইপ্যাড এয়ার—এই দুটি ডিভাইসই উন্মুক্ত করা হতে পারে।
সূত্র: ডেইলি মেইল
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।