দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা ব্যাহত হলেও সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি খারাপ নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাওয়ায় মানুষের আয়ে প্রভাব পড়েছে। কিন্তু অর্থনীতি ধ্বংসের পথে নেই; অন্তর্বর্তী সরকার বরং অর্থনীতি উদ্ধার করেছে।

একই সঙ্গে দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি কমে গেছে। অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প কমে যাওয়া এর কারণ; এ নিয়ে একনেক বৈঠকের আলোচনা হয়েছে। তবে সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে এসএমই খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে। তবে মানুষের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি। সে জন্য নতুন কর্মসংস্থান দরকার বলে মন্তব্য করেন।

আজ বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা ও সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কী করা হচ্ছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি সংশোধন করা হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। আরও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এই খাত সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বেক্সিমকো শিল্পগোষ্ঠীর ১৪টি কারখানা বন্ধ হেয় যাওয়ার প্রসঙ্গে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বেক্সিমকো বিষয়টি ছিল অনন্য, বরং সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিডার সঙ্গে কথা হয়েছে, এই শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের ঋণে গৃহীত প্রকল্পের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আপাতত এসব বন্ধ করার চিন্তা নেই। সব বিষয় খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এসব প্রকল্প যে সরকারই নিক না কেন, তা বিবেচ্য বিষয় নয়। একটি দেশের সঙ্গে যখন এ রকম চুক্তি হয়, তখন অর্থনীতির স্বার্থ খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। চট করে প্রকল্প বাতিল করা যায় না। এ বিষয়ে তিনি যত্নবান।

আসন্ন গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের সমস্যা হবে না বলেও মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা। বলেন, শিল্প ও মানুষের বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের সমস্যা হবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ