ইউক্রেনে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে আগামী মঙ্গলবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আলোচনায় বসছেন কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা। বৈঠকে যুদ্ধ অবসানে শান্তি কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে বলে দুই দেশের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

এ আলোচনার লক্ষ্য প্রাথমিকভাবে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগ্‌বিতণ্ডার পর এটিই দুই দেশের মধ্যে প্রথম আলোচনা। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া আলোচনা করলেও তাতে ইউক্রেনের অংশগ্রহণ ছিল না।

এরইমধ্যে গত বুধবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যুক্তরাজ্যসহ পাঁচ দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউক্রেন সংকট নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদিতে আলোচনার ফলে যুক্তরাজ্যও খানিকটা স্বস্তিতে থাকবে। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) সামরিক বিজ্ঞানের পরিচালক ম্যাথিউ স্যাভিল মনে করেন, যুক্তরাজ্য নিজেও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে নেতৃত্বের আসনে থেকে ভূমিকা রাখতে চাইছে। সেক্ষেত্রে ইউক্রেন যাতে কোনো চাপে না পড়ে তা চায় দেশটি। 

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্‌বিতণ্ডার পর থেকে ইউরোপের নেতারা মার্কিন নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোয় জোর দেন। লন্ডনের পর ব্রাসেলসেও সম্মেলনে মিলিত হন তারা। ব্রাসেলসের প্রতিরক্ষা সম্মেলনে ইউরোপের নিজস্ব প্রতিরক্ষা জোরদারে একমত হন নেতারা। 

সৌদির বৈঠকের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। তিনি বলেন, একটি শান্তিচুক্তি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে ভূমিকা রাখবে। এজন্য এ আলোচনা। তাছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রশাসন অনেক অগ্রগতি করেছে বলে আমি বিশ্বাস করি। রাশিয়া ও ইউক্রেন একটি শান্তি চুক্তি চায়। এ চুক্তি ছাড়া কোনো বিকল্প কিছু দেখি না।’ 

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করেন, সৌদির আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। এ আলোচনার পর ইউক্রেনে হামলার আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নেবেন। তাছাড়া চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের বিরল খনিজসম্পদে প্রবেশাধিকার পাবে বলে আশা করছে ওয়াশিংটন। 

দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, আগামী বুধবার ফ্রান্সের প্যারিসে ইউক্রেন সংকট নিয়ে পাঁচ ইউরোপীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৈঠকে বসবেন। বৈঠকে ফ্রান্স ছাড়াও যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি ও পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অংশ নেবেন। বৈঠকে ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিতের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।

বিবিসি বলছে, ব্রাসেলসে প্রতিরক্ষা সম্মেলন থেকে ইউরোপীয় নেতাদের বক্তব্যকে ‘সংঘাতমূলক’ উল্লেখ করে ক্রেমলিন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানোর হুমকি দিয়েছে। পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইইউ এখন সক্রিয়ভাবে নিজেদের সামরিকীকরণের বিষয়টি চিন্তা করছে, যা রাশিয়াকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। এ সামরিকীকরণ মূলত রুশ ফেডারেশনের বিরুদ্ধে। রাশিয়াও এখন নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামরিকীকরণের পন্থা অবলম্বন করতে পারে। 

রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার পর রাশিয়া ইউক্রেনে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হামলায় রাতারাতি ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভ থেকে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর টেরনোপিল পর্যন্ত জ্বালানি ও গ্যাস অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্রাসেলসে ইইউ প্রতিরক্ষা সম্মেলনে জেলেনস্কির স্থলে নয়, আকাশ ও নৌপথে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পরই এ হামলা হলো। এ ঘটনার পর জেলেনস্কি আবারও একই পন্থায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, হামলায় রাশিয়া ৬৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ১৯৪টি ড্রোন ব্যবহার করেছে। তাদের দাবি, ৩৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ১০০টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। ইউক্রেনের জ্বালানিমন্ত্রী জার্মান গালুশেঙ্কো বলেন, রাশিয়া জ্বালানিসন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে। এ হামলায় প্রথমবারের মতো ফ্রান্সের তৈরি মিরাজ জেট ব্যবহার করা হয়েছে। হামলায় চার শিশুসহ কমপক্ষে ১৮ জন আহত ও একজন নিহত হয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র ও ইউক র ন ব র স লস মন ত র ন র পর ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

ইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ

এক পাশে বেগম খালেদা জিয়া, অন্য পাশে শেখ হাসিনা, মাঝখানে খালেদ মুহিউদ্দীন—ইউটিউবে একটি ‘টক শো’তে তিনজনকে এভাবেই দেখা যায়। যদিও বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা কখনোই সুপরিচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের টক শোতে (আলোচনা অনুষ্ঠান) যাননি; কিন্তু ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

সুপরিচিত নবীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আলোচিত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের নিয়ে এ ধরনের ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ইউটিউবে এমন ভুয়া টক শো অনেক রয়েছে।

ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

ডিসমিসল্যাব ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। তারা বলছে, অধিকাংশ ভিডিওতে মূল সাক্ষাৎকারগুলোকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যা আদতে ঘটেনি। এসব ভিডিও গড়ে ১২ হাজারবার দেখা হয়েছে।

‘ভুয়া টক শোকে উসকে দিচ্ছে ইউটিউব, যেখানে আসল কনটেন্ট জায়গা হারাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এতে বলা হয়, ভুয়া টক শোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে অর্থ আয়ের সুযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউটিউবের নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গ করে বানানো এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ইউটিউব নিজেও লাভবান হচ্ছে।

ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।

খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বানানো ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার দিকে মুখ করে দুই নেত্রী অনলাইনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘ভার্চু৵য়াল টক শো’তে অংশ নিয়েছেন। যেখানে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে; কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই দর্শক বুঝবেন, ভিডিওটি ভুয়া। খালেদা জিয়ার নড়াচড়া স্বাভাবিক না। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর তাঁর মুখভঙ্গির সঙ্গে মিলছিল না। খালেদার ভিডিও ফুটেজ বিকৃত বা টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপস্থাপকের হাতের অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ কেটে জোড়া লাগিয়ে কথোপকথন তৈরি করে এই ভুয়া টক শো বানানো হয়েছে।

এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী

ডিসমিসল্যাব জানায়, ভুয়া টক শোটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফেসবুকে দুই লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির ওপর একটি লোগো ছিল ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামে, যা একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে একই ভিডিওটি আরও ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। ওই চ্যানেলে এমন বেশ কিছু ক্লিপ ছিল, যা একইভাবে বিকৃত বা সাজানো হয়েছিল।

প্রবাসী সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউবে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে একটি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করেন। সম্প্রতি তাঁর ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিপ যুক্ত করে প্রচুর ভুয়া টক শো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। তারা ইউটিউবে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ লিখে খোঁজ করে অন্তত ৫০টি চ্যানেল চিহ্নিত করেছে। খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও এসব চ্যানেলে অন্যান্য উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চে খুঁজে পাওয়া এসব চ্যানেলের মধ্যে ২৯টি চ্যানেল অন্তত একটি বিকৃত টক শো প্রচার করেছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, চিহ্নিত ২৯টির মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। বাকি চ্যানেলগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তৈরি। পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ (নেপথ্যের দৃশ্য) বদলানো, ফুটেজ কাটাছেঁড়া বা জুম করা এবং মূল প্রসঙ্গ বিকৃত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও ইউটিউব, টেলিভিশন শো, ফেসবুক লাইভ এবং অডিও রেকর্ডিং থেকে ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে তৈরি। অনেক ক্ষেত্রে, মূল বক্তার ফুটেজে এমন ভয়েসওভার (কথা) জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে নেওয়া এবং যার সঙ্গে কথোপকথনের কোনো সম্পর্ক নেই; কিন্তু বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ড. ইউনূস চীন সফরের পরপরই পদত্যাগ করলেন’। যেখানে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জানতে পারে যে তাদের অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির আলাদা আলাদা ফুটেজ জোড়া লাগানো হয়েছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের নেতা ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফুটেজও এসব ভুয়া টক শোতে ব্যবহার করা হয়েছে।

পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

ভুয়া টক শোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, তিনি দর্শকদের তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের আধেয়র ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান।

ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভুয়া টক শোগুলোতে বক্তব্য তুলে ধরা হয় মূলত রাজনৈতিক দল ও সরকারকে নিয়ে। ভুয়া টক শোগুলোর ৪০ শতাংশেই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন পাঁচটি ভুয়া টক শো খুঁজে বের করেছে। এসব টক শোতে প্রচার করা হয়েছে অশনিবার্তা, আলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক আলোচনা নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পাঁচটি টক শো দুই থেকে ছয় লাখ বার দেখা হয়েছে।

নিজের নিয়মই মানছে না ইউটিউব

ইউটিউবের স্প্যাম ও প্রতারণামূলক আচরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না, যার সঙ্গে ভিডিওর প্রকৃত বিষয়বস্তুর মিল নেই এবং যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে। এসব ভুয়া টক শোতে এ নীতি মানা হয়নি।

ইউটিউবের ছদ্মবেশ ধারণ নিষেধাজ্ঞা নীতিমালায় বলা আছে, অন্য কারও আসল নাম, ব্যবহারকারী নাম, ছবি, ব্র্যান্ড, লোগো বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিক, টক শো উপস্থাপক ও কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় এগুলো ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালাও লঙ্ঘন করতে পারে।

ডিজিটাল মিডিয়া–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ইউটিউব এ ধরনের ভুয়া ভিডিওকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। এতে গুণগত সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়ে।

২০২২ সালে একটি খোলাচিঠিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছিল, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়ানো, মানুষকে প্রতারিত করা, এমনকি সংগঠিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত করছে।

মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট বা আধেয় বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতি মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ