ঘটনাটা গত ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে বোর্ডার–গাভাস্কার সিরিজে। ঋষভ পন্ত বাজে শট খেলে আউট হওয়ার পর চরম সমালোচনা করেছিলেন সুনীল গাভাস্কার। সেই সমালোচনায় ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসাও টের পাওয়া গিয়েছিল। পরে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম এবিসি তাঁর কাছে ক্রিকেটের প্রতি আবেগ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। গাভাস্কার বলেছিলেন, ‘সত্যি বলতে এই খেলাটা আমাকে তৈরি করেছে। ভারতীয় ক্রিকেট আমাকে তৈরি করেছে।’

আরও পড়ুনফাইনালের মঞ্চে পিসিবির কাউকে না দেখে অবাক শোয়েব, আসলে যা ঘটেছে ৩৪ মিনিট আগে

টেস্টে প্রথম ১০ হাজারি ক্লাবের দেখা পাওয়া গাভাস্কার ক্রিকেটের কত বড় কিংবদন্তি তা সবারই জানা। বর্তমান ভারতীয় দলের সবার চোখেও তিনি শ্রদ্ধার পাত্র। রোহিত–কোহলিরা কাল রাতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর এই শ্রদ্ধার পাত্রকে শিশুর মতো আনন্দ নিয়ে নাচতে দেখেছেন, ৭৫ বছর বয়সী মানুষটি ভুলে গিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটে নিজের ওজন। বরং মনটাকে শিশুর মতো হালকা করে নেচে নেন দু–কদম!
গাভাস্কারের নাচের দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। টিভি চ্যানেল স্টার স্পোর্টস তাঁর নাচের সেই ভিডিও এক্সে পোস্ট করে ক্যাপশনও দিয়েছে যথার্থ। বলিউডের ‘ইশকিয়া’ সিনেমার গানের লাইন, ‘দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি।’

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারায় ভারত। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে রোহিত–কোহলিরা যখন সাদা ব্লেজার পরে শিরোপা বুঝে নেন, গাভাস্কার তখন সেখান থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ধারাভাষ্য প্যানেলের অংশ গাভাস্কারের সঙ্গে ছিলেন মায়ান্তি ল্যাঙ্গার এবং ভারতের সাবেক ক্রিকেটার রবিন উথাপ্পা। রোহিতরা শিরোপা বুঝে নেওয়ার সময় হাত–পা ছুড়ে শিশুর মতো নাচ শুরু করেন ’৮৩ বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি।

ক্যামেরায় গাভাস্কারের নাচ ভালোভাবে ধরতে সামনে থেকে সরে দাঁড়ান মায়ান্তি। উথাপ্পা তখন হেসেই কুটিকুটি। একটি উইলোখণ্ড দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটকে যিনি এত দিয়েছেন, পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিশ্লেষণে তাঁর প্রতি সবার শ্রদ্ধা বাড়িয়েছেন, সেই মানুষটির ভেতর থেকে যখন শিশুসুলভ কোনো ভক্ত বেরিয়ে আসে, সেই দৃশ্য অবশ্যই ফ্রেমে গেঁথে রাখার মতোই।

আরও পড়ুনশামির মায়ের পা ছুঁয়ে পৃথিবীকে চ্যালেঞ্জ কোহলির২ ঘণ্টা আগে

স্টার স্পোর্টসের সঞ্চালক যতীন সাপরু তখন বলেন, ‘গাভাস্কারকে থামাবে কে?’ পাশ থেকে ভারতের সাবেক স্পিনার হরভজন সিং বলেন, ‘তাঁকে থামানো উচিত নয়। মুহূর্তটা সুন্দর। মজা লাগছে দেখে। তিনি একজন কিংবদন্তি এবং শ্রদ্ধার পাত্র। তাঁর জন্যই আমরা খেলা শুরু করেছি, সৌভাগ্যবান হিসেবে ট্রফিগুলো জিততে পেরেছি। আর আজ (কাল) তাঁর মধ্যে সেই একই অনুভূতি ফিরে এসেছে।’

গাভাস্কার পরে রোহিতের দলকে সাদা বলে এই গ্রহের সেরা দলও বলেছেন ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে, ‘যে দল তিনটি ফাইনাল খেলেছে, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে রানার্সআপ, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় ও এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়—কোনো সন্দেহ ছাড়াই সাদা বলে তাদের অবশ্যই এই গ্রহের সেরা দল বলতে হবে।’

রোহিতের নেতৃত্বে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয় ভারত। এরপর গত বছর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতল তাঁর অধিনায়কত্বেই। রোহিতের শৈশবের কোচ দিনেশ লাদ মনে করেন, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতে রোহিত তাঁকে দ্বিতীয় গুরুদক্ষিণা দিয়েছেন।

ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে দিনেশ বলেছেন, ‘কিছু বলার ভাষা নেই। সকাল থেকে বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে বলেছি, আমরা জিতব। রোহিতও যাওয়ার আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের কথা বলে গেছে। সে আমাকে দ্বিতীয় গুরুদক্ষিণা দিয়েছে।’

আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বিবেচনায় নিলে দুই বছরের মধ্যে টানা চারটি আইসিসি ইভেন্টের ফাইনাল খেলল ভারত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে দলকে আইসিসির বড় চারটি ইভেন্টের ফাইনালে তোলার কীর্তি গড়লেন রোহিত। এর মধ্যে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তাঁর শৈশবের কোচের জন্য সম্ভবত প্রথম গুরুদক্ষিণা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ শ র মত ফ ইন ল

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ