নারীর সম–অধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় ১৯০৯ সাল থেকে। প্রথমে নিউজিল্যান্ড, পরে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপজুড়ে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ১৯৭৭ সালে বিশ্ব নারী দিবসের স্বীকৃতি দেয় এবং দিবসটি পালিত হতে থাকে বিশ্বজুড়ে। নারী দিবসের মূলমন্ত্রই হলো নারীর অধিকার ও সচেতনতা। কিন্তু এত বছর পরও আমরা দেখছি দেশে নারীর শরীর, স্বাস্থ্য ও প্রজননবিষয়ক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। নারীকে সন্তান ধারণ ও জন্ম দেওয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয়। মানবজাতির টিকে থাকা ও বংশবৃদ্ধিতে যা সবচেয়ে জরুরি। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় নারীর অধিকার কতটুকু?

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ

প্রজননসংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত স্বামী ও স্ত্রী মিলে একত্রে নিতে হবে। সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত, অর্থাৎ কখন নেবেন, কয়টি নেবেন, কত বিরতিতে নেবেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কী হবে—এর কোনোটাই নারীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এসব বিষয়ে নারীর সঠিক জ্ঞান, সচেতনতা ও অংশীদারত্ব দরকার। এখনো বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক মেয়ের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যায় এবং সন্তান জন্ম দেয়। এই বালিকাদের নিজের শরীর ও স্বাস্থ্য নিয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বা বয়স কোনোটাই হয়নি। তাই প্রজননস্বাস্থ্যে নারীর অধিকার পেতে চাইলে অবশ্যই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে হবে।

আরও পড়ুনমিতা তঞ্চঙ্গ্যা যেভাবে দেশের প্রথম নারী ফরেস্টার০৮ মার্চ ২০২৫গর্ভধারণ–পূর্ববর্তী পরামর্শ

সন্তান ধারণের আগে প্রি–কনসেপশনাল পরামর্শ আমাদের দেশে খুব একটা প্রচলিত নেই। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই যেকোনো সময় অপরিকল্পিতভাবে বেশির ভাগ দম্পতি সন্তান নেন। এতে যেসব জটিলতার সৃষ্টি হয়, তার মূল ভুক্তভোগী নারী। প্রি–কনসেপশন বা গর্ভধারণ–পূর্ববর্তী পরামর্শ ও রুটিন চেকআপ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা দরকার। সন্তান নেওয়ার আগে একজন নারী যথেষ্ট ফিট ও সম্পূর্ণ সুস্থ কি না, তাঁর পুষ্টিমান, জীবনযাত্রার মান কেমন, তা নির্ণয় করতে হবে।

রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি নারীর গর্ভাবস্থা ও প্রসবের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে মা–শিশু উভয়েরই জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই আগেভাগেই এসব স্ক্রিনিং করে যথাযথ পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রতিটি সন্তানকামী নারীকে অন্তত তিন মাস আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট দিতে পারলে অনাগত শিশুর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। এসব প্রোগ্রাম জাতীয় ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা উচিত।

গর্ভকালীন যত্ন ও পরিচর্যা

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর সঠিক পরিচর্যার জন্য যথাসময়ে প্রসবপূর্ব চেকআপ, টিকা, প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রসব বা ডেলিভারি যেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে হয়, তা নিশ্চিত করা এবং বাড়িতে প্রসবের হার কমানোও গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় কেবল নারীস্বাস্থ্যের জন্যই যে জরুরি, তা নয়; এসব নারীর মৌলিক অধিকার।

মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও দুঃখজনকভাবে এখনো বাংলাদেশে প্রসবকালীন জটিলতায় হাজার হাজার নারী মারা যাচ্ছেন এবং আরও অনেক নারী শিকার হচ্ছেন স্থায়ী জটিলতার। প্রসব–পরবর্তী রক্তক্ষরণ, ফিস্টুলা, প্রোল্যাপস ইত্যাদি সমস্যায় হাজারো নারীর জীবন চিরকালের জন্য অভিশপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রসবকালীন যত্ন ও পরিচর্যা নারীর অধিকার হিসেবে বিবেচ্য হতে হবে, আর এতে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার সবারই কর্তব্য এবং দায় আছে।

নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ

প্রসবের পর স্তন্যদানে সহায়তা, প্রসব–পরবর্তী চেকআপ, পরবর্তী সন্তান নেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিষয়ে নারীকে জ্ঞান দিতে হবে। সন্তান ধারণ ও জন্মদানের বিষয়ে জনকল্যাণমুখী সরকারের দায়িত্ব থাকতে হবে। একজন মা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক যত্ন পেলেই কেবল একটি সুস্থ–সবল সন্তান জন্ম দিতে পারবেন।

কর্মজীবী নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও কর্মক্ষেত্রে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র ইত্যাদি বিষয়ে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। এখানে সন্তান জন্ম দেওয়া ও তাকে বড় করার দায়িত্ব মায়ের ওপরই চাপিয়ে দেওয়া হয়। পরিবার, অফিস, সমাজ বা রাষ্ট্র কোনো সহযোগিতা করতে নারাজ। যেহেতু এখন বিপুলসংখ্যক নারী বাইরে কাজ করেন, তাই নারী ও শিশুবান্ধব কর্মক্ষেত্র এখন সময়ের দাবি।

পরিবেশদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

আমাদের দেশে ৩০ শতাংশ কৃষিখাদ্য উৎপাদন করেন নারীরা। কিন্তু তাঁদের ২০ শতাংশের বেশি উদ্যোক্তারই নিজস্ব জমি নেই। আমাদের মাঠেঘাটে খেটে খাওয়া নারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই বিধবা অথবা তাঁদের স্বামী নেই। অনেকেই গার্মেন্টস, অন্যান্য কারখানা ও বাইরে কাজ করেন। তাঁরা প্রকৃতি, জলবায়ুর পরিবর্তন ও দূষণের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকেন অথবা হারিয়ে যান। পরিবেশদূষণ, দূষিত পানি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদির সবচেয়ে বড় শিকার নারীরা। নারীর প্রজননস্বাস্থ্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এসবের মাধ্যমে। তাই এদিকে নজর দিতে হবে।

আরও পড়ুন‘আমি কমেন্ট পড়েও দেখি না’, বললেন কারিনা০৮ মার্চ ২০২৫নারীস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক কিশোরী মাসিকের সময় সঠিক যত্ন ও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের নিয়ম জানে না। অনেকের আর্থিক সচ্ছলতা নেই। স্যানিটারি ন্যাপকিন সব শ্রেণির নারীর জন্য সহজলভ্য করতে হবে। পিরিয়ড হাইজিন সম্পর্কে সবার জানা থাকা জরুরি, এ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কথা বলা যেতে পারে।

বয়ঃসন্ধিকালের মতোই মধ্যবয়সে মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি নারীদের জন্য একটি ট্রানজিশনাল পিরিয়ড। এ সময় নানা রকম শারীরিক ও মানসিক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়, যা নিয়ে কথা বলতে নারীরা সংকোচে থাকেন। সংকোচ ও দ্বিধা ভুলে নিজের শরীর, স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলার, সাহায্য চাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি।

নারী নির্যাতনের চিত্র

নিজের বাড়িতে, স্বামী, আত্মীয়স্বজন, মা-বাবার সঙ্গে থেকেও সহিংসতা, মারামরি, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া, পথেঘাটে হয়রানি ও লিঙ্গবৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। সম্প্রতি নারী হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। এসব শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে এবং নীতিনির্ধারণ ও অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নারীসমাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

চিকিৎসকের ভূমিকা

ধাত্রীবিদ্যার কিছু নৈতিক চ্যালেঞ্জ আছে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। যেমন রোগী ও তাঁর সঙ্গী বা অভিভাবকদের সহজ ভাষায় বোঝানো—রোগটা কী, কেন হলো, এর চিকিৎসা কী। ভবিষ্যৎতে কী কী হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিকল্প চিকিৎসা আছে কি না। সঠিক জ্ঞান দিয়ে চিকিৎসক, রোগীসহ সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেওয়াকে বলে ‘শেয়ারড ডিসিশন’। বর্তমানে চিকিৎসাবিদ্যায় এই শেয়ারড ডিসিশনের গুরুত্ব বেশি।

তবে অনেকে নিজের পছন্দমতো বা বিকল্প পথ বেছে নেন। তা নেওয়ার অধিকার তাঁদের অবশ্যই আছে। সে ক্ষেত্রেও চিকিৎসক তাঁদের পাশে থাকবেন এবং দরকারমতো সব ধরনের সাহায্য করবেন। তাঁদের ক্ষতি হয়, এমন কিছু করবেন না।

নীতিমালা ও কিছু সিদ্ধান্ত

অনেক সময় সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে নৈতিক দ্বিধা হয় বা উভয়সংকট দেখা দেয়। যেমন—

একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর জীবন বাঁচাতে গিয়ে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

অনেক সময় ধর্ষণ, অবাঞ্ছিত সন্তানের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সন্তানের জন্মগত মারাত্মক ত্রুটি থাকলেও অনেক সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার বিষয়টি সব দেশেই নীতিশাস্ত্র সংশ্লিষ্ট ও সামাজিক ও আইনগত সমস্যা দেখা দেয়।

এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট জাতীয় নীতিমালা নেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করে এবং দরকার হলে মানবাধিকারকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হতে পারে। কিন্তু আগে অসহায় ও বিপদগ্রস্ত নারীটির পাশে দাঁড়াতে হবে, দায়িত্ব এড়ালে চলবে না।

স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসক, নার্সসহ বেশির ভাগই নারী। অথচ এই নারীদেরই অনেক সময় কর্মক্ষেত্রে প্রজননস্বাস্থ্য রক্ষা ও চর্চার অধিকার নেই। করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে যাঁরা লড়াই করেছেন, তাঁদের সিংহভাগ ছিলেন নারী। নার্সদের ৯৪ শতাংশই নারী এবং করোনা স্বাস্থ্যকর্মীদের ৯০ শতাংশ ছিলেন নারী। যাঁরা স্বাস্থ্যসেবা দেন, তাঁদের স্বাস্থ্য রক্ষাও জরুরি।

শেষকথা

মানবাধিকার এবং সমতার বিষয়টি অনুধাবন, অনুকরণ, অনুশীলন করা কোনো স্বপ্ন নয়; এটি নিশ্চিত করা সরকার, সমাজ বা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গসমতার জন্য কাজ করা কেবল নারীর বিষয় নয়; এসব অর্জন করতে নারী, পুরুষ, সরকার, রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

শাহ্‌লা খাতুন, জাতীয় অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ

আরও পড়ুনউদ্যোক্তা থেকে যেভাবে দেশের প্রথম সফল নারী অ্যাগ্রো–ইনফ্লুয়েন্সার হলেন পপি০৮ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক ন ক সময় র জন য পর ব শ ক জ কর জন ম দ সরক র সবচ য় প রসব দরক র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে