সংসদীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে জন্মনিয়ন্ত্রণে সফল ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্যগুলো এখন জনসংখ্যা বাড়ানোর দিকে ঝুঁকছে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন রাজ্যের সক্ষম বিবাহিত নারীদের প্রত্যেককে ১৬টি সন্তান উৎপাদন করতে বলেছেন। তাঁর মতো সংখ্যা বেঁধে না দিলেও অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু বলেছেন, যতবার সন্তানের জন্ম হবে, ততবারই প্রসূতিদের মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর করা হবে।

চন্দ্রবাবুর দল টিডিপির সংসদ সদস্য আপ্পালা নাইডু আবার এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, প্রসূতি যদি তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেন, তাহলে তাঁদের তিনি পুরস্কার দেবেন। কন্যাসন্তানের জন্য প্রত্যেককে নগদ ৫০ হাজার টাকা, পুত্রসন্তানের জন্ম দিলে একটি করে গরু। এই টাকা তিনি নিজের বেতন থেকে ব্যয় করবেন।

আজ সোমবার শুরু হয়েছে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম দিনেই তামিলনাড়ুর সরকারি স্কুলে হিন্দি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা ও জনসংখ্যার নিরিখে সংসদের আসন নির্ধারণে দাক্ষিণাত্যের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা ঘিরে সংসদের উভয় কক্ষে তুলকালাম ঘটে যায়। রাজ্যসভায় বিরোধীরা ওয়াকআউট করেন, লোকসভার অধিবেশন কিছু সময়ের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।

এই দুই বিষয়ের পাশাপাশি বিরোধীরা প্রতিবাদ জানান সরকারের মণিপুর নীতি ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে রাজ্যে রাজ্যে ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগের বিরুদ্ধেও। এ ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। লোকসভার বিরোধী নেতা বলেন, বিষয়টি গুরুতর। পশ্চিমবঙ্গের মতো মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায়ও এ কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখা দরকার।

জোর করে হিন্দি চাপানোর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তামিলনাড়ু সরকারের রাজনৈতিক চাপান–উতোর বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের অভিযোগ, হিন্দি ভাষা শিক্ষা নিয়ে রাজ্যকে কেন্দ্র ব্ল্যাকমেল করছে। পাওনা টাকা দিচ্ছে না। এ নিয়ে আজ লোকসভায় কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে বিরোধীদের প্রবল বিরোধ বাধে। মন্ত্রী অসংসদীয় শব্দও উচ্চারণ করেন। বিরোধিতার মুখে তিনি তা প্রত্যাহারও করে নেন।

পাশাপাশি সংসদে আসন কমানো নিয়েও তামিলনাড়ু সরব। জনসংখ্যার নিরিখে সংসদের আসন বরাদ্দ হলে লোকসভায় দক্ষিণের পাঁচ রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব উত্তরের তুলনায় মারাত্মকভাবে কমে যাবে। জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি রূপায়ণে সাফল্য সত্ত্বেও এ ‘বঞ্চনা’র প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন বিভিন্ন রাজ্যকে জোটবদ্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছেন। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখেছেন। সংসদের বহর আরও ৩০ বছর অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। আজ বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই এই দুই বিষয় নিয়ে বিরোধীরা কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপে ফেলল।

স্ট্যালিনের পাশাপাশি চন্দ্রবাবুও জনসংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। কিন্তু এখনো তিনি সংসদীয় রাজনীতিতে দক্ষিণের আসন কমার শঙ্কার কথা সরাসরি প্রকাশ করেননি। স্ট্যালিনের উদ্যোগের পাশেও দাঁড়াননি। তাঁর পক্ষে তেমন করা এখনই সম্ভবপরও নয়। কারণ, তিনি কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকারের সমর্থক।

তবে চন্দ্রবাবু সন্তান বৃদ্ধির যে কথা বলেছেন, যে লক্ষ্য পূরণের কথা বলেছেন, তাতে দক্ষিণের রাজ্যগুলোর শঙ্কারই প্রতিফলন ঘটছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গত শনিবার তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দুটি সন্তানের জন্ম পর্যন্ত প্রসূতিরা মাতৃত্বকালীন ছুটি পান। এখন থেকে আর সংখ্যা গ্রাহ্য হবে না। যতবার সন্তানের জন্ম হবে, ততবারই প্রসূতি ছুটি পাবেন।

সংসদীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে দাক্ষিণাত্যের নেতৃত্ব ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন নিয়ে ফেলছেন দেখে সম্প্রতি দিল্লি সফরের সময় চন্দ্রবাবু উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। পরিসংখ্যান দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন, উত্তর প্রদেশ ও বিহারের মতো রাজ্যে জনসংখ্যার গড় বয়স দক্ষিণের রাজ্যগুলোর তুলনায় অনেক কম। এই বৈপরীত্য দূর করতে দক্ষিণের নারীদের আরও বেশি সন্তান উৎপাদন করা জরুরি। তাতে উৎসাহিত হয়ে তাঁরই দলের সংসদ সদস্যের নগদ টাকা ও গরু উপহারের ঘোষণা চমক সৃষ্টি করেছে।

বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আজ ভারতীয় রাজনীতির উত্তর-দক্ষিণ বিভাজন প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, হিন্দি আগ্রাসনের রাজনীতি তামিলনাড়ুর ক্ষেত্রে যতটা স্পর্শকাতর, অন্য রাজ্যে ততটা নয়। এ বিতর্ক মেটানো কঠিন নয়।

ওই নেতা বলেন, অতীতে অনেকবার এ বিষয় তামিলনাড়ুতে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। থেমেও গেছে। কিন্তু জনসংখ্যার নিরিখে সংসদীয় কেন্দ্রের সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও সে অনুযায়ী লোকসভার আসন বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুতর। সময়মতো এ শঙ্কা দূর করা না গেলে উত্তর-দক্ষিণের রাজনৈতিক বিভাজন দেশের ঐক্য ও সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ম খ যমন ত র জনস খ য র য় র জন ত সরক র র মন ত র বল ছ ন র আসন ল কসভ

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ