Samakal:
2025-08-02@00:20:39 GMT

আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও

Published: 11th, March 2025 GMT

আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, প্রতিষ্ঠানটির স্বীয় সুশাসন লইয়াই প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে, যাহা সম্পূর্ণ উচ্চশিক্ষা খাতের জন্যই উদ্বেগজনক। মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে ঋণের মহোৎসব’ শিরোনামের প্রতিবেদনে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর সূত্রে জানা যাইতেছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করিয়াই কর্মকর্তাদের নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত বিপুল অঙ্কের ঋণ প্রদান করিয়াছে ইউজিসি। অনেক কর্মকর্তাকেই নিয়ম ভঙ্গ করিয়া প্রাপ্যতার অধিক ঋণ দেওয়া হইয়াছে। অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির অনেক কর্মী দীর্ঘ দিনব্যাপী চাকুরি করিলেও বাড়ি তৈয়ারিতে ঋণ পাইতেছেন না। অথচ একই ব্যক্তি একাধিকবার ঋণ গ্রহণ করিয়াছেন। 

উচ্চশিক্ষায় উদ্ভাবন ও গবেষণায় উৎকর্ষ অর্জনের মাধ্যমে টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়িয়া তুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কী ভূমিকা রাখিতে পারে, তাহা আমরা জানি। সেই ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে সার্বিক সুবিধা ও দিকনির্দেশনা দান ইউজিসির মূল কাজ, ইহাও জানি। কিন্তু সংস্থাটি সেই সকল দায়িত্ব কতটা সুচারুরূপে সম্পন্ন করিতেছে– উহা লইয়া প্রশ্ন বহুদিন যাবৎ। বিশেষত দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রশাসনে যেই প্রকার দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা প্রায়শ সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে আমরা জানিয়া থাকি, সেইখানেই উহা স্পষ্ট। এখন যখন ইউজিসির স্বীয় প্রশাসনে সাধারণ ঋণ লইয়া অনিয়ম ঘটিয়াছে বলিয়া অভিযোগ, তখন প্রতিষ্ঠানটি অন্যদের জবাবদিহি কীরূপে নিশ্চিত করিবে– সেই সন্দেহ প্রস্তরীভূত হয়। ধারণা ছিল, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে দেশে পট পরিবর্তনের তরঙ্গ ইউজিসির তটেও আঘাত হানিবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে সেই অর্থে সংস্কারের স্পর্শ লাগে নাই বলিলেই চলে। প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ পদে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটিলেও বাস্তবে তথায় ব্যক্তিরই পরিবর্তন ঘটিয়াছে; উহার পরিচালন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রত্যাশা পূরণ হয় নাই। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউজিসিতে চেয়ারম্যানের এপিএস পদ না থাকিলেও প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সহকারী সচিব নিজেকে জনপরিসরে এই পরিচয়ে পরিচিত করিয়া থাকেন। তাঁহার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগও বিস্তর। উপরন্তু, তাঁহার নামে বিপুল অঙ্কের ঋণ থাকিবার পরও তিনি বর্তমান কমিশনের আমলে আরও চার লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করিয়াছেন। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে ইউজিসির যেই প্রকার নৈতিক মান জরুরি, উহা এহেন অভিযোগের কারণে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হইবে। ইহা স্বতঃসিদ্ধ, অন্যদের ভ্রান্তি চিহ্নিতকরণের পূর্বে নিজের পরিশুদ্ধ হওয়া জরুরি। আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও– কথাটা বাত কি বাত নহে। ইউজিসি নিজেকে সেই অবস্থানে দেখাইতে না পারিলে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ তাহাকে মান্য করিতে কিংবা তাহার নির্দেশনা পালনে গড়িমসি করিবার অবকাশ পাইবে।

আমরা জানি, দেশের উচ্চশিক্ষায় এখনও অনেক করণীয়। বিশেষ করিয়া জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর এই সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাইয়াছে। সেইখানে ইউজিসির কতটা ভূমিকা পালন করিয়াছে, উহা অনুধাবনযোগ্য। সপ্ত-মহাবিদ্যালয় সংকট ইউজিসির নিয়ন্ত্রণাধীন হইলেও এখনও উহার টেকসই সমাধান আসে নাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় এখনও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করিতে পারে নাই। এই সকল উচ্চশিক্ষাঙ্গনে অধ্যয়নের পরিবেশ নিশ্চিতে ইউজিসি কতটা উদ্যোগী–সেই প্রশ্নও কম শক্তিশালী নহে। অথচ ইউজিসি চাহিলে উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করিতে পারে। সেই ক্ষেত্রে পূর্বেই ইহার কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আনয়ন জরুরি।
আমরা প্রত্যাশা করি, ইউজিসির ঋণ লইয়া যেই সকল অনিয়মের অভিযোগ উঠিয়াছে, সেইগুলি গুরুত্ব সহকারে তদন্তপূর্বক সুরাহা করিবে। অনিয়মের সহিত সংশ্লিষ্টদিগের শাস্তির ব্যবস্থা করিয়া ইউজিসিকে এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করিতে হইবে, যাহাতে প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছ থাকিতে পারে এবং উচ্চশিক্ষায় তদারকিতে তাহার নৈতিক মান বজায় রাখিতে সক্ষম হয়। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউজ স র ন কর ত কর য় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও